ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশীয় সংস্কৃতিচর্চা শাহীন চৌধুরী ডলি

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বদলে যাওয়া বিনোদন

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বদলে যাওয়া বিনোদন

প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট ২৬ বছরে গোটা পৃথিবীকে আমূল বদলে দিয়েছে। সময়ের বিবর্তনে মানুষের রুচি,আমোদ- প্রমোদে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আধুনিককালে মানুষের চাহিদার সাথে খাপ খাওয়াতে দ্রুতই বদলে যাচ্ছে বিনোদন মাধ্যমগুলো। একটা সময় ছিল, যখন পুরো একটা গ্রামে একটিমাত্র বাড়িতে বসে সদলবলে মানুষ টেলিভিশন দেখত। সেইসব স্মৃতি এখন রূপকথার মতো শোনায়। গ্রামেও পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন। এগুলোর উপর নির্ভর করে বদলে গেছে বিনোদন মাধ্যম। রেডিও, টু-ইন-ওয়ান, টেলিভিশনের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হয়েছে গুগল, ইউটিউব, টুইটার, লাইকি, টিকটকসহ আরও বেশকিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মানুষ এখন হাতের মুঠোতে থাকা ডিভাইসে নিজ চাহিদা অনুযায়ী যেকোন কিছু দেখতে পছন্দ করে। নির্দিষ্ট সীমারেখা টপকে মানুষের দৃষ্টি এখন দ্বিগি¦দিক। পঞ্চম প্রজন্মের যোগাযোগ ব্যবস্থা ফাইভ-জি আসলে বিনোদন মাধ্যমগুলোকে প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যক্তি তথ্য, মতামত, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি আদান-প্রদান করতে পারছে মানুষ। ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিশু-কিশোর, গৃহিণী, পেশাজীবী কে নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে? মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী জীবনে সারাবিশ্বেই যোগাযোগের নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং। ফেসবুক জাদুতে দূর হয়েছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। গণমাধ্যমে তথ্যের বিপণনের সাবেকি প্রথা এখন আর নেই। চারপাশে, দেশে-বিদেশে কী ঘটছে, সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো মানবীয় যোগাযোগের সর্বাধুনিক মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ মানবীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক দূরত্বকে পুরোপুরি দূর করে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। প্রযুক্তির পালাবদলে পরিবর্তন এসেছে মিডিয়া জগতে। সুস্থ বিনোদনের স্থলে দিন দিন বাড়ছে নেতিবাচক উপসর্গ। ইউটিউবে বেড়েই চলেছে মানহীন ও অশ্লীল ভিডিও। ইউটিউবে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে প্রচুর মানহীন ও অশ্লীল নাটক, মিউজিক ভিডিও কিংবা শর্টফিল্ম। নির্মাণের সংখ্যার পাশাপাশি ভিউয়ের দিকেও এগিয়ে আছে এগুলো। একটি কনটেন্ট প্রকাশের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এগুলোতে দেখা যায় ২০ থেকে ৩০ লাখ ভিউ। শর্টফিল্মের নামে বিভিন্ন অশ্লীল সিরিজ ইউটিউবে দেখা যায়। ভাল গল্পের বিপরীতে প্রাধান্য থাকে যৌনতা ও অশ্লীলতার উস্কানি। রুচিবান দর্শক বিনোদন পাওয়ার বিপরীতে বিরক্ত হচ্ছে। কিশোর-তরুণরা এগুলোতে আকৃষ্ট হওয়ার ফলে সামাজিকভাবে নতুন প্রজন্মের অবক্ষয় ভাবিয়ে তুলছে। যেভাবে এগুলো বেড়ে চলেছে এটি আমাদের সংস্কৃতির জন্য হুমকি। টেলিভিশনে একটা নাটক প্রচার করতে হলে অনেক নিয়মনীতি মেনে নির্মাণ করতে হয়। ইউটিউবে নিয়মের এই বাধ্যবাধকতা নেই বলে নিজেদের স্বার্থে সুযোগের অপব্যবহার করে একশ্রেণীর খারাপ মানুষ। দর্শক রুচিশীল কনটেন্ট দেখতে আগ্রহী। যে সকল ইউটিউব চ্যানেল থেকে অশ্লীল কনটেন্ট প্রকাশ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশীয় সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে দেওয়া চলবে না। নতুন প্রজন্মের মধ্যে সঠিক সংস্কৃতির চর্চা বাঁচিয়ে রাখতে রাষ্ট্রীয়ভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
×