ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাম্বার ওয়ান কেন উইলিয়ামসন

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২১

নাম্বার ওয়ান কেন উইলিয়ামসন

উড়ছেন কেন উইলিয়ামসন, উড়ছে তার দল নিউজিল্যান্ড। কিউই অধিনায়ক কতটা ফর্মে আছেন, পরিসংখ্যানেই সেটি পরিষ্কার। সদ্যবিদায়ী ২০২০ সালে ৫ টেস্টের মাত্র ৭ ইনিংসে করেছেন সর্বোচ্চ ৭৩৭ রান। গড় ১০৫.১৪। সেঞ্চুরি তিন ও হাফ সেঞ্চুরি একটি। যেখানে ৬৪১ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেন স্টোকস ৭ টেস্টে খেলেছেন ১২ ইনিংস। ৯ টেস্টের ১৪ ইনিংসে ৬১৫ রান করে তার পেছনে ডম সিবলি। উইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরির পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে গত বছরকে বিদায় জানানো উইলিয়ামসন ২০২১ সালকে স্বাগত জানিয়েছেন সেঞ্চুরি দিয়ে। শেষ চার ইনিংসে তার স্কোরগুলোÑ ২৫১, ১২৯, ২১ ও ২৩৮! ফল পাঁচ বছর ধরে চলা দুই সুপারস্টার বিরাট কোহলি ও স্টিভেন স্মিথের রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে টেস্টে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উইলিয়ামসন। এখানেই শেষ নয়। উইলিয়ামসন-দ্যুতিতে উজ্জ্বল নিউজিল্যান্ডও নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে শীর্ষে। পরাশক্তিদের পেছনে ফেলে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আরও কাছে ব্ল্যাক ক্যাপস শিবির। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের অসাধারণ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শীর্ষে ফেরেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের রোমাঞ্চকর জয়ে ১২৯ ও ২১ রানের ইনিংস খেলে পান ১৩ রেটিং পয়েন্ট। তাতেই পেছনে পড়ে যান কোহলি ও স্মিথ। ভারতের বিপক্ষে ‘বক্সিং ডে টেস্টে’ দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ রান করে স্মিথ শীর্ষ থেকে নেমে গেছেন দুই ধাপ। কোহলি রয়ে গেছেন দুই নম্বরেই। উইলিয়ামসনের রেটিং পয়েন্ট ৮৯০, কোহলির ৮৭৯, স্মিথের ৮৭৭। ২০১৫ সালের নবেম্বরে প্রথমবার শীর্ষে ওঠার স্বাদ পেয়েছিলেন উইলিয়ামসন। তবে কিছুদিন পরই হারান জায়গা। এরপর থেকে তা কেবল হাতবদল হয়েছে স্মিথ ও কোহলির মধ্যে। এই বছরও ৩১৩ দিন শীর্ষে ছিলেন স্মিথ, ৫১ দিন কোহলি। অবশেষে ফের সেরার হাসি উইলিয়ামসনের মুখে। তবে অহঙ্কার নেই এতটুকু, ‘ওরা দুজন (কোহলি-স্মিথ) বিশ্বের সেরা দুই ক্রিকেটার। ওদেরকে কোনভাবে টপকে যেতে পারা আমার জন্য খুবই বিস্ময়কর ও সম্মানজনক। পাশাপাশি এই র‌্যাঙ্কিং ওদের দুজনের সাফল্যও তুলে ধরছে। বছরের পর বছর সব সংস্করণে এই দুজন ভাল করছে, ক্রিকেট খেলাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই সৌভাগ্যবান তাদের বিপক্ষে খেলতে পেরে।’ নিজের এই অর্জনকে উইলিয়ামসন ব্যক্তিগত প্রাপ্তির মোড়কে রাখেননি।, ‘আমার জন্য ব্যাপারটি হলো দলের জন্য যত বেশি সম্ভব করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ব্যাটিং হোক বা বোলিং, ব্যক্তিগত র‌্যাঙ্কিংগুলোকে আমি এভাবেই দেখি যে, অন্য অনেক ক্রিকেটার যে লক্ষ্যে ধাবিত হতে চেষ্টা করে, সেই পথে এগিয়ে থাকা। দলের জন্য সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টার পর যদি সেটির প্রতিফলন র‌্যাঙ্কিংয়ে পড়ে, তাহলে তা দারুণ। তবে যেটা বললাম, মূল মনোযোগ অবশ্যই দলে যতটা সম্ভব অবদান রাখা।’ ক্যারিয়ারের ২৪তম সেঞ্চুরির পথে তিন ম্যাচে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি আসে উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে। ২৩৮ রানের ইনিংসটির পথে তার নাম লেখান কয়েকটি রেকর্ডে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি এটি তার। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি দ্বিশতকের রেকর্ডে স্পর্শ করেছেন ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের রেকর্ড। ‘অধিনায়ক’ হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি ৩টি। এই রেকর্ডে তিনি নিজেকে তুলে নিয়েছেন ম্যাককুলাম ও স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের পাশে। পাশাপাশি ৭ হাজার টেস্ট রান স্পর্শ করেন উইলিয়ামসন। ১৪৪ ইনিংসে মাইলফলকে পা রেখে তিনিই নিউজিল্যান্ডের দ্রুততম। এমনকি ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং, এ্যালিস্টার কুক, জ্যাক ক্যালিসের মতো কিংবদন্তিদের চেয়ে কম ইনিংসে তিনি পৌঁছে গেছেন ৭ হাজারে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসে নিউজিল্যান্ড। টানা তিন সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে কিউইরা। আগের দুই সিরিজে তারা পর্যদুস্ত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতকে। দেশের মাটিতে সব মিলিয়ে ১৭ টেস্ট ধরে অপরাজিত তারা। সবশেষ হারটি ছিল ২০১৭ সালের মার্চে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পাকিস্তান সিরিজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পরই অস্ট্রেলিয়ার সমান ১১৬ রেটিং পয়েন্ট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের। তবে তখনও অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ছিল ভগ্নাংশের ব্যবধানে। এরপর পাকিস্তানকে প্রথম টেস্টে হারানোর পর কিউইদের রেটিং পয়েন্ট উঠে যায় অস্ট্রেলিয়ার ওপরে। তবে দলীয় র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে আইসিসি হালনাগাদ করে থাকে একবারে সিরিজ শেষেই। আনুষ্ঠানিকভাবে এক নম্বর হতে তাই কিউইদের প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়। দ্বিতীয় টেস্টে বড় জয় দিয়েই সেটি নিশ্চিত করে তারা। তাদের রেটিং পয়েন্ট এখন ১১৮। ২০১৭ সালের মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ হারার পর থেকে এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড দুটি সিরিজ জিতেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশকে, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে দেশের মাটিতে, সিরিজ ড্র করেছে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে, পাকিস্তানকে এবার হোয়াইটওয়াশ করার আগে হারিয়ে এসেছে আরব আমিরাতে, দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করেছে ভারতকে ও দুইবার হোয়াইটওয়াশ করেছে ক্যারিবীয়দের। এই সময়টায় তাদের একমাত্র ব্যর্থতা ছিল ২০১৯-২০ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তিন টেস্টের সবকটিতে হার। সব মিলিয়ে দারুণ ধারাবাহিক সাফল্যেই শীর্ষে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। এই সাফল্যে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন কেন উইলিয়ামসন। দলের মতো তিনি নিজেও দারুণ ধারাবাহিকতায় নিজেকে তুলে নিয়েছেন টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। চূড়া স্পর্শ করলেও কিউইদের উদ্যাপন ও উইলিয়ামসনের প্রতিক্রিয়া যথারীতি ছিল পরিমিত। ‘আমাদের টেস্ট গ্রীষ্ম দারুণভাবে শেষ করতে পারাটা গৌরবের এবং আমরা জানি যে স্পেশাল কিছু অর্জন করেছি আমরা।’ র‌্যাঙ্কিং শীর্ষে নিউজিল্যান্ডের এই অবস্থান অবশ্য হতে পারে স্বল্পস্থায়ী। কারণ ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজ জিতলে আবার শীর্ষে উঠে যাবে অস্ট্রেলিয়া।
×