ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাজ জটের প্রভাব পণ্য মুল্যে

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১১ জানুয়ারি ২০২১

জাহাজ জটের প্রভাব পণ্য মুল্যে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাহাজ জটের প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানিকৃত পণ্য মুল্যে। বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ জট এবং খালি কন্টেইনারের ঘাটতির কারণে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ভাড়া (ফ্রেইট চার্জ) বাড়িয়েছে শিপিং লাইনগুলো। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শ্রীলংকার কলম্বোসহ কয়েকটি বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনারের তীব্র জট তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী আমদানি-রপ্তানির কন্টেইনার সংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে ফ্রেইট চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে শিপিং লাইনগুলো। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কনটেইনার শিপিং লাইন সিএমএ-সিজিএম গত ১৪ ডিসেম্বর ঘোষণা দেয়, তারা উত্তর ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন বন্দরগুলোর জন্য নতুন ফ্রেইট চার্জ বাস্তবায়ন করবে। পহেলা জানুয়ারি থেকে সেই চার্জ বাস্তবায়ন করেছে সংস্থাটি। ব্যবসায়ীরা জানান, ফিডার জাহাজ অপারেটররা চট্টগ্রাম থেকে কলম্বো, সিঙ্গাপুরসহ আশপাশের বন্দরে পণ্য বোঝাই প্রতিটি কন্টেইনার পরিবহনে ফ্রেইট চার্জ ৭০ ডলার পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি খালি কন্টেইনার পরিবহনে চার্জ বাড়ানো হয়েছে ৪০ ডলার পর্যন্ত। চট্টগ্রামভিত্তিক ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ জানুয়ারির শুরুতে চীন থেকে ১২ কন্টেইনার আপেল আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ওমর ফারুক সিদ্দিকী বলেন, ‘নভেম্বর মাসে আমি চীন থেকে আপেল আমদানি করেছিলাম। তখন আমাকে প্রতি ৪০ ফুটের একটি কন্টেইনারে ফ্রেইট চার্জ দিতে হয়েছে দুই হাজার ২০০ ডলার। কিন্তু জানুয়ারিতে আমদানি করা প্রতি কন্টেইনারে ফ্রেইট চার্জ দিতে হয়েছে চার হাজার ৫০০ ডলার। এজন্য আমাকে বাজারে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে।’ চট্টগ্রামের ফলমণ্ডির পাইকারি ব্যবসায়ী এনএস ফুডসের মালিক আলী হোসেন আরিফ বলেন, নভেম্বরে মাঝারি মানের ১৮ কেজি ওজনের এক কার্টুন আপেল বিক্রি হতো এক হাজার ৮০০ টাকায়। এখন দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকায়। একইভাবে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। ফ্রেইট চার্জ বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের পোশাক খাত। এই খাতের সিংহভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বিজিএমইএর বন্দর ও জাহাজীকরণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রেইট চার্জ বাড়ায় পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে যেমন প্রভাব পড়বে, ঠিক তেমনি পণ্য রপ্তানিতেও পড়বে। চার্জ বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পোশাক খাত।’ তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের প্রতিটি সেক্টর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই শুধু জাহাজ জট ও কন্টেইনার সংকট দেখিয়ে শিপিং লাইনগুলোর ফ্রেইট চার্জ বাড়ানো উচিত হয়নি। জাহাজ জটের কারণ দেখিয়ে এরইমধ্যে কলম্বো থেকে ইউরোপ রুটে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে চীনের সাংহাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা কসকো শিপিং লাইনস। ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কলম্বো বন্দরে জটের কারণে কন্টেইনারবাহী জাহাজ জেটিতে দেরিতে ভিড়ছে অথবা কলম্বো বন্দরকে এড়িয়ে যেতে হচ্ছে। এজন্য এই রুটে সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনার জট তৈরি হয়েছে। দিনের পর দিন বন্দরে জাহাজ নোঙর করে রাখতে হচ্ছে। খালি কন্টেইনারগুলো পড়ে থাকছে। এজন্য শিপিং লাইনগুলো ফ্রেইট চার্জ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
×