ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাসান শাহ্রিয়ার সাজ্জাদ

আকাশে মেঘ জমেছে

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২ জানুয়ারি ২০২১

আকাশে মেঘ জমেছে

সন্ধ্যা নামার আগেই আজ চারদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে। আকাশের বুকে কালো মেঘের আড্ডা জমেছে। দেখে মনে হচ্ছে সূর্য বুঝি আজ আগেই ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। বলতে না বলতেই মুষুল ধারে শুরু হলো বৃষ্টি। যে যার মোত দৌড়ে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে নিজেদের রক্ষা করছে। কেউবা আবার টং দোকানে বসে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। বৃষ্টির শব্দ কানে পৌঁছাতেই তার মন অস্থির হয়ে ওঠে। ঘরের মাঝে কিছুতেই সে থাকতে পারে না। বাড়ি থেকে কড়া করে বলা আছে বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না। কিন্তু প্রতিবারই কোননা কোন বাহানায় সে ছাদে ছুটে যায়, বৃষ্টিতে ভিজবে বলে। প্রথমে ছাদের মাঝে দাঁড়িয়ে দু’হাত দু’পাশে দিয়ে মুখ উপড়ে তুলে চোখেমুখে বৃষ্টির পরশ নিয়ে নেয়। তারপর রেলিংয়ের ধারে গিয়ে দাঁড়ায়। রাস্তার দিকে তাকিয়ে সবার কাণ্ড কারখানা দেখে। আনমনে কারও সঙ্গে কথা বলে। বাবা-মার বড়ই আদরের মেয়ে সে। জন্মের পর তাকে ফুলের মতো নিষ্পাপ দেখতে ছিল। তাই তো বাবা অনেক আদর করে তার নাম রাখে পুষ্প। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা সব আরও সুন্দর এবং মিষ্টি হয়ে যায়। তাই অনেকে আদর করে তাকে পুষ্প রানী বলেও ডাকে। তবে এই পুষ্প রানী মাঝে মাঝে কাটা রানী হয়ে ওঠে। মাথায় যখন দুষ্টুমি বুদ্ধি কিলবিল করে তখন। বড় ভাইকে জালানো, বান্ধবীদের সঙ্গে হাসি, ঠাট্টা, মজা-আনন্দ সবই চলে তার। পুষ্পর বেস্ট ফ্রেন্ড তার বাবা। তিনি একজন আর্মি অফিসার। বাবার জীবন জুড়ে যেমন মেয়ে ঠিক মেয়ের পুরো জীবন জুড়ে বাবা। দেশের শান্তি বজায় রাখার জন্য বাবা সব সময় তার পাশে থাকতে পারে না। তবে মেয়ের প্রতি জন্মদিনেই বাবা যেখানে থাকুক মেয়ের কাছে ছুটে আসে। তার মনে আছে শেষবার তার জন্মদিনে আজকের মতোই বৃষ্টি পড়ছিল। পুষ্প ছাদে দাঁড়িয়ে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সে দিনও তিনি এসেছিলেন। তবে যেই হৃদয় মেয়ে থাকে সেই হৃদয়ে কিছু জঙ্গীর করা গুলির ক্ষত নিয়ে তিনি আসেন। সেই দিন বাবা তার আদরের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শুভ জন্মদিন বলতে পারেনি। শুধু মেয়ের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছিল বাবার জাতীয় পতাকায় ঢাকা কফিনের ওপর। এক সময় বৃষ্টির পানি তার চোখের পানিকে মুছে দেয় হৃদয়জুড়ে তৈরি করে মন কালো মেঘ। আজও পুষ্পর জন্মদিন। আচ্ছা আজও কি বাবা আসবে? তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে বলবে- বৃষ্টিতে ভিজে তোকে পুরো চন্দ্র প্রভা ফুলের মতো লাগছে। বাবা কি তাকে জড়িয়ে ধরে বলবে -শুভ জন্মদিন মামণি। বাবা হয়ত আর আসবে না। আকাশে মেঘ জমবে। বৃষ্টি হবে। সেই বৃষ্টিতে বাবার ঘ্রাণ পাওয়া যায়। বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লে মনে হয় বাবা বুঝি তাকে জড়িয়ে ধরেছে।
×