ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার মধ্যেও রূপসা রেল সেতুর কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২ জানুয়ারি ২০২১

করোনার মধ্যেও রূপসা রেল সেতুর কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর গত মার্চ মাস থেকে সারাদেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলোর কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণের কাজও স্থবির হয়ে পড়ে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে আবার গতি ফিরে আসে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ চলেছে। একই সঙ্গে রূপসা নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণেও চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের রেল সেতুর কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর মূল প্রকল্পের কাজ ৭৬ শতাংশ হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। মংলা বন্দরে আরও গতি সঞ্চার হবে। মংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনাসহ সমগ্র বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ সুগম হবে। কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন সহজ হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও সহজে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন। জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নবেম্বর মাসে প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেল সেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর ওপর রেল সেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। রূপসা নদীর উপরে যুক্ত হচ্ছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেল সেতু। এছাড়া ২১টি ছোটখাটো ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং খুলনার ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন নির্মাণের কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন এ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেল সেতুর নির্মাণ কাজ করছে। বাকি কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এদিকে নির্মাণাধীন রেল সেতুর পশ্চিম পাড় (খুলনা সাইড) বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্ব পাড় খারাবাদ (মংলা সাইড) এলাকায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে রেল সেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইলের মধ্যে সব কয়টি, পাইল বেস-গ্রাউটিং ৮৫৬টির সব কয়টি, পাইল ক্যাপ ১৩৬টির মধ্যে ১৩৫টি, পিয়ার ১৩৬টির মধ্যে ১৩৫টি, স্প্যান ইর‌্যাকশান ১৩৬টির মধ্যে ১৩২টি এবং ব্যাক স্লাব ১৩৬টির মধ্যে ৯১টি সম্পন্ন হয়েছে। এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মূল সেতুর পাইল ৭২টির মধ্যে ৪৬টি, এমবি পাইল-বেস গ্রাউটিং ৪৯টির মধ্যে ৩১টি, পাইল ক্যাপ ৮টির মধ্যে ৫টি, পিয়ার ৮টির মধ্যে ৪টি, পিয়ার-ক্যাপ ৮টির মধ্যে ৩টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফিন্ডার পাইল ক্যাপ ৮টি এবং এমবি স্প্যান ইর‌্যাকশান ৭টির কাজ চলমান রয়েছে। খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শুরুতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে প্রকল্পের কাজে কিছু বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গত মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ফের প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এখন প্রকল্পের কাজে গতি ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে সামগ্রিক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ শতাংশ। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকালে করোনা দুর্যোগসহ অন্যান্য প্রতিকূলতার কারণে নির্ধারিত মেয়াদে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে সমগ্র প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজন্য সময় বাড়াতে হচ্ছে। ব্যয়ও সামান্য কিছু বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। খুলনা-মংলা রেলপথের সেতু প্রকল্পের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর রূপসা রেল সেতুর কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। করোনাকালীন লকডাউন উঠে যাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পুনরায় নির্মাণ কাজে গতি ফিরেছে। বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। আর কোন প্রতিবন্ধকতা দেখা না দিলে ২০২১ সালের মে অথবা জুন মাসের মধ্যে খুলনা-মংলা রেলপথের সেতু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×