ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গবেষণা প্রতিবেদন

আত্মহত্যার ঝোঁক বেশি অমনোযোগীদের

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

আত্মহত্যার ঝোঁক বেশি অমনোযোগীদের

কোন কাজ ও বিষয়ের প্রতি অমনোযোগী বয়স্ক ব্যক্তিরা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে, নারীদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকির প্রবণতা অনেক বেশি। নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। অন্তত ২২ হাজার কানাডিয়ান বয়স্ক ব্যক্তিদের পরীক্ষার আওতায় এনে দেখা গেছে, তাদের প্রায় ১৪ শতাংশই আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে ওই সব ব্যক্তির প্রায় সবাই মনোযোগহীনতা হাইপার এক্টিভিটি ব্যাধিতে (এডিএইচডি) ভুগছিলেন। পাঁচ দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা সর্বশেষ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এডিএইচডি এক ধরনের মস্তিষ্কজনিত সমস্যা, যেটি মনোযোগে বাধা সৃষ্টি করা ছাড়াও আচরণ নিয়ন্ত্রণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এটি মূলত শিশু ও কৈশোর বয়সে দেখা দেয়। ধীরে ধীরে এটি বাড়তে থাকে এবং শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে। তবে যত্নশীল হলে বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করালে শিশুকালেই এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়া ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই রোগটিকে বেশি লালন করেন বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গবেষকরা জানান, এডিএইচডি নিয়ে করা নতুন এই গবেষণাটির ফল উদ্বেগজনক। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এই গবেষণাকর্মের প্রধান গবেষক ইসমি ফুলার থমসন বলেন, ‘গবেষণার ফল পুরোপুরি ধ্বংসাত্মক। সংখ্যাটি এত বড় হবে আগে ভাবতে পারিনি।’ ইসমি ফুলার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এডিএইচডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের তুলনায় পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে রাগ- ক্ষোভ ও হতাশায় ডুবে থাকেন। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের তুলনায় এডিএইচডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক বেশি আত্মহত্যা প্রবণ হন। এছাড়া পারিবারিক নির্যাতনে বেড়ে ওঠা শিশুদেরও আত্মহত্যার প্রতি ঝোঁক থাকে। প্রধান গবেষক জানান, এডিএইচডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন পর্যায়ে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, সে বিষয় এখনও অস্পষ্ট। তবে নারীরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এ বিষয়ে ক্যালির্ফোনিয়া বিশ্ববিদালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন হিনশো জানান, গবেষণার এই ফল আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত হলেও অবিশ্বাস্য নয়। এডিএইচডি আক্রান্ত ও শিশুকালে শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমন বয়স্কদের ক্ষেত্রেও আত্মহত্যার সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। হিনশো জানান, আত্মহত্যার ঝুঁকি না থাকলেও অনেক সময় এসব মানুষ শৈশবে বা কৈশোরে নিজের হাত ও গলা কাটার মতো অঘটন ঘটিয়ে থাকেন। নতুন এই গবেষণাকর্মটি চলতি মাসে আর্কাইভস অব সুইসাইড রিসার্চে প্রকাশ করা হয়েছে। ইসমি ফুলার বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার এই গবেষণাকর্মের ফল দ্বারা এডিএইচডি আক্রান্ত মানুষ বুঝতে পারবেন, তারা কতটা সম্ভাবনাময়। এরপর তারা নিশ্চয় ভুল পথে পা বাড়াবেন না। সায়েন্স ডেইলি অবলম্বনে।
×