ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোয়ার্টার ফাইনালে ঢাকা আবাহনী

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

কোয়ার্টার ফাইনালে ঢাকা আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই দলের মধ্যে একটা মিল আছে। তারা নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে যত শিরোপা জিতেছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ট্রফি এসেছে ফেডারেশন কাপ টুর্নামেন্ট থেকে। বলা হচ্ছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের কথা। ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনী এ পর্যন্ত যে ৩৬টি শিরোপা জিতেছে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১টি শিরোপা এসেছে ফেডারেশন কাপ থেকে (অবশ্য ঢাকা লীগেও ১১ বারের চ্যাম্পিয়ন তারা)। পক্ষান্তরে ‘দ্য রেডস্’ খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা এ পর্যন্ত যে ৬টি শিরোপা জিতেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩টি শিরোপাই জিতেছে এই মৌসুমসূচক ফুটবল টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ থেকে। বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল ডি-গ্রুপের খেলায়। তাতে মুক্তিযোদ্ধাকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হবার পাশাপাশি কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে যায় ধানমণ্ডির ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী। ২ খেলার প্রতিটিতেই জিতে ৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে তারা। পক্ষান্তরে সমান খেলায় প্রতিটিতেই হেরে শূন্য পয়েন্ট নব্বই দশকের ‘ড্রিম টিম’ খ্যাত মুক্তিযোদ্ধার। সঙ্গত কারণেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ভয়াবহ আর্থিক সমস্যায় ভোগা ও আসরে অংশ নেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগা মুক্তিযোদ্ধাকে। মুক্তির হারে লাভ হয়েছে একইগ্রুপে থাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। ২ খেলায় ৩ পয়েন্ট আবাহনীর এক সময়কার প্রবল প্রতিপক্ষদের। ফলে গ্রুপ রানার্সআপ হওয়ার সুবাদে তারাও নাম লেখালো শেষ আটে। দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে তারা আগামী ২ জানুয়ারি মোকাবেলা করবে বি-গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের। আর ৪ জানুয়ারি চতুর্থ কোয়ার্টারে আবাহনী মুখোমুখি হবে বি-গ্রুপের রানার্সআপ উত্তর বারিধারা ক্লাবের। ফেডারেশন কাপের অন্যতম সফল তিন দল আবাহনী-মোহামেডান-মুক্তিযোদ্ধা। কাকতালীয়ভাবে এবার এই তিন দলই পড়েছে একই গ্রুপে। শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনালে আবাহনী-মোহামেডান যেতে পারলেও যেতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা। প্রথম ম্যাচে মোহামেডানের কাছে ৪-১ গোলে হেরে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল মুক্তিযোদ্ধা। তবে এক ম্যাচ হাতে থাকায় কাগজে-কলমে মুক্তিযোদ্ধারও কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার একটা সুযোগ ছিল। বুধবার তারা যদি আবাহনীর বিরুদ্ধে চার গোলের ব্যবধানে জিততে পারত তাহলে তারাও শেষ আটে নাম লেখাতে পারত। সেক্ষেত্রে তিন দলেরই পয়েন্ট সমান (৩) হয়ে যেত এবং কপাল পুড়তো মোহামেডানের। কেননা গোলগড়ে পিছিয়ে থেকে বাদ পড়তো সাদা-কালোরা। কিন্তু আবাহনীর মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে চার গোলের ব্যবধানে জেতাটা প্রায় অসম্ভবই ছিল মাঝারিমানের মুক্তিযোদ্ধার জন্য। ম্যাচ শুরুর মাত্র ৩ মিনিটের মাথাতেই বাঁ হাতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন মুক্তির গোলরক্ষক মাকসুদুর রহমান। ৯ মিনিটে গোলের দারুণ একটি সুযোগও এসেছিল তাদের। ব্যকামেঙ্গার শট লাফিয়ে উঠে বারের কাছ থেকে হাত দিয়ে ফিরিয়ে দেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। ১৩ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে মিডফিল্ডার জুয়েল রানার শট ফিরিয়ে দিয়ে দলকে নিশ্চিত গোল হজমের হাত থেকে বাঁচান মুক্তির বদলি গোলরক্ষক নূরুল করিম। ২৯ মিনিটে আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বল নিয়ে মুক্তির বক্সে ঢুকে যাওয়ার মুহূর্তে তাকে ফাউল করেন মুক্তির গিনির ডিফেন্ডার কামারা। বক্সের কাছে ফ্রি কিক পায় আবাহনী। আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইঘানির কোনাকুনি শট চলে যায় মুক্তির জালে (১-০)। ৬৪ মিনিটে ডানপ্রান্তে কর্নার পায় আবাহনী। অধিনায়ক ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবনের কর্নারে হেড করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড কারভেন্স ফিলস ব্যালফোর্ট (২-০)। ৭৬ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণে যায় এবং গোল করার দারুণ সুযোগ নষ্ট করে। ডানপ্রান্ত দিয়ে রাইট উইঙ্গার হুসেইন আহমেদ আফজাল বল নিয়ে ঢুকে উড়ন্ত ক্রস দেন। আবাহনীর ডি-বক্সের ভেতরে চমৎকার ও অরক্ষিত পজিশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন উজবেক ফরোয়ার্ড আকবারআলি খোলদারোভ। আয়েশ করে লাফিয়ে উঠে তিনি বলে হেড করেন ঠিকই। কিন্তু বিস্ময়করভাবে সেটা ছিল অত্যন্ত দুর্বল হেড। যা ধরতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি আবাহনী গোলরক্ষক সোহেলের। ৮৪ মিনিটে কর্নার পায় মুক্তিযোদ্ধা। বদলি মিডফিল্ডার রোহিত সরকারের উড়ন্ত কর্নার লাফিয়ে হেড করেন বক্সের ভেতরে থাকা মুক্তির জাপানী অধিনায়ক-মিডফিল্ডার ইউসুকে কাতো। তার হেডটি আবাহনী গোলরক্ষক সোহেল কোনমতে পাঞ্চ করে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৮৭ মিনিটে ব্যবধান কমায় মুক্তিযোদ্ধা। রোহিত সরকার বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে বাঁ পায়ের দারুণ গতিময় শটে বল জালে জড়ান। গোলরক্ষক সোহেল ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ঠেকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি (১-২)। সমতায় ফিরতে মরিয়া মুক্তিযোদ্ধা শেষদিকে আরও কিছু আক্রমণ শানায়। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা বারবার নসাৎ হয়। শেষ পর্যন্ত রেফারি জালালউদ্দিন খেলা শেষের বাঁশি বাজালে গ্রুপসেরা হয়ে ও কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার চিত্তসুখ নিয়ে মারিও লেমোসের শিষ্যরা এবং শূন্য হাতে বিদায় নেয়ার বেদনা নিয়ে রাজা ইসার শিষ্যরা মাঠ ছাড়ে।
×