ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায়ী বছরে যাদের হারিয়েছি

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

বিদায়ী বছরে যাদের হারিয়েছি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ জাতিকে সঠিক পথ দেখানোর কথা বলেন যারা, রংতুলিতে যারা তুলে ধরেন জীবনের কাব্য, স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার বাণী যাদের চিরন্তন, রাজনীতি, চিকিৎসা, বিচারকার্য, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াঙ্গন, সাহিত্য, সঙ্গীত, অভিনয় কিংবা সৃজনীতে যারা দেশের কাণ্ডারির ভূমিকায় তাদের অনেকেরই প্রাণ কেড়ে নিল নিষ্ঠুর করোনাভাইরাস নামক দানব। বিদায়ী বছরটা তাই সারা পৃথিবীর মতো আমাদের দেশেও খুবই বেদনার। জাতির এ শূন্যতা পূরণ হবার নয়। করোনা ছাড়াও নানা কঠিন রোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণে আমরা হারিয়েছি কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে। ড. আনিসুজ্জামান ॥ শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ছিলেন জাতির বাতিঘর। ২০২০ সালের ১৪ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক এবং ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মান অর্জন করেছেন। এই বুদ্ধিজীবীকে হারানো বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় বড় ধরনের শূন্যতা। মোহাম্মদ নাসিম ॥ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সফল স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি পহেলা জুন রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। কিছুদিন চিকিৎসায় তার করোনা নেগেটিভ হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকলেও হঠাৎ করেই স্ট্রোক করেন। এর পর ডাক্তারদের অনেক প্রচেষ্টাও তিনি আর ফিরে আসেননি। ১৩ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাজপথের সংগ্রামী এই নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটায় সর্বনাশা করোনা। সাহারা খাতুন ॥ দলের প্রতি বিশ্বস্ততার উদাহরণ তৈরি করে দেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেয়া সাহারা খাতুনও চলে গেলেন। থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জুলাই মৃত্যু হয় তার। তৃণমূল থেকে লড়াই করে রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসা চিরকুমারী সাহারা খাতুনের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য ঢাকা-১৮ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারে তিন বছরের বেশি সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জামিলুর রেজা চৌধুরী ॥ দেশের অগ্রগণ্য প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ২৮ এপ্রিল চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী মৃত্যু পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। একুশে পদক পাওয়া এই শিক্ষককে সরকার ২০১৮ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে যেসব বড় বড় ভৌত অবকাঠামো হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই কোন না কোনভাবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করা জামিলুর রেজা চৌধুরী। ১৯৯৩ সালে যাদের হাত দিয়ে বাংলাদেশের ইমারত বিধি তৈরি হয়েছিল, এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তাদের একজন। দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ৫ সদস্যের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ ॥ বিদায়ী বছরের ১৩ জুন রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে তিনি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছিলেন। প্র্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের আগে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ॥ সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফও চলে গেলেন। গত নয় ডিসেম্বর রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সাবেক এই মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়ে দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে এবং ১৯৮১ সালে বিচারপতি আবদুস সাত্তার, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কামাল লোহানী ॥ ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিদায়ী বছরের ২০ জুন। কামাল লোহানী এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে এক গুরুত্বপূূর্ণ নাম। তিনি ছিলেন সাংবাদিকতায় কিংবদন্তি। কামাল লোহানী ২০১৫ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন। শওকত আলী ॥ শরীয়তপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক ডেপুটি স্পীকার ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শওকত আলী মারা গেছেন ১৬ নবেম্বর। ১৯৬৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কারাগারে ২৬ নম্বর আসামি ছিলেন তিনি। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শওকত আলী মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। মকবুল হোসেন ॥ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাজি মকবুল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪ মে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। রহমত আলী ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট রহমত আলী মারা গেছেন ১৬ ফেব্রুয়ারি। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা ১৯৯১ সাল থেকে দশম সংসদ পর্যন্ত পাঁচবার গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-ভাওয়ালগড়-পিরুজালী-মির্জাপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। ইসরাফিল আলম ॥ গত ২৭ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। রাজনৈতিক জীবনে ইসরাফিল আলম নওগাঁ-৬ আসন থেকে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি ॥ সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি মারা গেছেন দুই জানুয়ারি। তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৯ বছর। এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম ॥ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২৭ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, সংবিধানের এয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনীসহ ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি করেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ॥ বাংলাদেশের সিনিয়র আইনজীবী রফিক-উল হক ২৪ অক্টোবর ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। সিনিয়র এই আইনজীবী পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ২০০৭ সালে, ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কারাবন্দী আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেছিলেন তিনি, যে কারণে আদ-দ্বীন হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সা’দত হুসাইন ॥ গত ২২ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে গেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। সা’দত হুসাইন ২০০২-০৫ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সা’দত হুসাইন ১৯৪৬ সালের ২৪ নবেম্বর নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী নেন। এমাজউদ্দীন আহমদ ॥ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, লেখক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ গত ১৭ জুলাই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মালদা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১ নবেম্বর ১৯৯২ থেকে ৩১ আগস্ট ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গবেষণা ও সৃজনশীল লেখার জন্যে তিনি দেশ ও বিদেশে সম্মানিত হয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান। বিএনপিপন্থী ‘শত নাগরিক’ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন এমাজউদ্দীন আহমদ। আলী যাকের ॥ বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের গত ২৭ নবেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মঞ্চ, ছোট পর্দা কিংবা বড় পর্দা সব জায়গায় বরেণ্য শিল্পী আলী যাকের আলো ছড়িয়েছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে তিনি জাগরণের কথা বলেছেন। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য আলী যাকের একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। মুর্তজা বশীর ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর মারা গেছেন এ বছরের ১৪ আগস্ট। বহু ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে মুর্তজা বশীর ছিলেন একধারে চিত্রশিল্পী, লেখক, গবেষক। বাংলাদেশে বিমূর্ত বাস্তবতার চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মুর্তজা বশীরের দেয়াল, শহীদ শিরোনাম, পাখা ছাড়াও বেশকিছু উল্লেখযোগ্য চিত্রমালা রয়েছে। চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান মুর্তজা বশীর; স্বাধীনতা পুরস্কার পান ২০১৯ সালে। বদরুউদ্দিন আহমদ কামরান ॥ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদরুউদ্দিন আহমদ কামরান মারা যান ১৫ জুন। এম এ হাসেম ॥ বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩ ডিসেম্বর মারা গেছেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাসেম। ১১ ডিসেম্বর করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর থেকেই তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। ২৩ ডিসেম্বর ডাক্তারা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নুরুল ইসলাম বাবুল ॥ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও যমুনা গ্রুপ, যমুনা টেলিভিশন এবং দৈনিক যুগান্তরের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩ জুলাই। এর আগে ১৪ জুন তার করোনা শনাক্ত হয় এবং ঐ দিনই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারদের অনেক প্রচেষ্ট ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি চলে যান না ফিরার দেশে। লতিফুর রহমান ॥ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানেরও মৃত্যু হয়েছে ২০২০ সালে। ১ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে নাকি করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। লতিফুর রহমান প্রথম আলোর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এম আব্দুল মোনেম ॥ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মোনেম ডিস্ট্রিক্ট লিমিটেডের কর্নধার এম আব্দুল মোনেম মারা গেছেন ৩১ মে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে রাজধানীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) মারা যান। আব্দুল মোনেম ডিস্ট্রিক্ট লিমিটেড দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়কসহ দেশের কয়েকটি মহাসড়ক তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএমএলের তৈরি। ইগলু, কোক-পেপসি, ইগলু চিনি আব্দুল মোনেম ডিস্ট্রিক্ট লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠান। আবদুল মোনেমের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। জিয়াউদ্দিন তারিক আলী ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী মারা যান ৭ সেপ্টেম্বর। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে উঠেছে তাদের একজন তারিক আলী। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলাই ছিল তার সারাজীবনের লড়াই। মনজুরে মওলা ॥ খ্যাতিমান কবি, রবীন্দ্র-গবেষক, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও ফেলো মনজুরে মওলা মৃত্যুবরণ করেন ২০ ডিসেম্বর। মনজুরে মওলা বাংলাদেশের সাহিত্য-জগতে এক অনন্য নাম। নিজস্বতা-চিহ্নিত কবিতা এবং শিল্প সুষমাময় গদ্য রচনা করে তিনি তার স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। আনোয়ারুল কবির তালুকদার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ মে মারা গেছেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আনোয়ারুল কবির তালুকদার। এন্ড্রু কিশোর ॥ দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে ৬ জুলাই মারা যান দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। স্ত্রী লিপিকা সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, এখন কিশোর কোন কথা বলে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আমি বলি কী ভাব, বলে কিছু না, পুরনো কথা মনে পড়ে আর ঈশ্বরকে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিও না। চিত্ত রঞ্জন দত্ত ॥ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্ত রঞ্জন দত্ত মারা গেছেন ২৫ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বয়েন্টনবিচ বেথেসডা সাউথ হাসপাতালের হসপিস কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সি আর দত্ত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বীর উত্তম খেতাবধারী এই মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। আবু ওসমান চৌধুরী ॥ মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩১ আগস্ট। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন। সেখানে পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আবু ওসমান চৌধুরী বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবু ওসমান চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর পদে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। খন্দকার মুনীরুজ্জামান ॥ করোনা আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান মারা যান ৩ নবেম্বর। হুমায়ুন কবীর খোকন ॥ দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খোকন গত ২৮ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হুমায়ুন কবীর জুয়েল ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ মে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ক্রীড়াঙ্গনের মেধাবী মুখ এশিয়ান কারাতে ফেডারেশনের রেফারি ও বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সদস্য হুমায়ুন কবীর জুয়েল। মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ ॥ বাংলাদেশ টেলিভিশনের অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকের নির্মাতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ আগস্ট রাজধানীর গ্রীনলাইফ হাসপাতালে মারা যান। ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদায়ী বছরে মারা গেছেন প্রখ্যাত সরোদ বাদক ওস্তাদ শাহাদত হোসেন খান। ২৮ নবেম্বর রাত ৮টায় রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান। দেবাশীষ চক্রবর্তী ॥ বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী করোনায় মারা গেছেন ১৭ নবেম্বর। জামাল এম এ নাসের ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল এম এ নাসের মারা গেছেন ২১ জুন। মোরশেদ আলম ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদ আলম মারা গেছেন ২২ মে। ডাঃ মির্জা নাজিম উদ্দিন ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ জুন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিক্যাল সার্ভিস) ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট মির্জা নাজিম উদ্দিন মারা যান। শেখ ফরিদ উদ্দিন সোয়াদ ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২২ জুন মারা যান বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম-পরিচালক (জেডি) শেখ ফরিদ উদ্দিন সোয়াদ মারা গেছেন। আফতাব উদ্দীন আহমদ ॥ ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচীর (এসডিপি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আফতাব উদ্দীন আহমদ ১৪ মে করোনায় মৃত্যুবরণ করেন। মোস্তফা কামাল সৈয়দ ॥ বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক, বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান), এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ ১ জুন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে করোনার আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আল্লাহ মালিক কাজেমী ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী মারা গেছেন ২৬ জুন। আজমত মঈন ॥ দেশের চা-শিল্পের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী বিশিষ্ট শিল্পপতি আজমত মঈন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জুন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এম বজলুল করিম চৌধুরী ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাবেক সচিব এম বজলুল করিম চৌধুরী ৩১ মে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন। শেখ মমিন উদ্দিন ॥ আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শেখ আকিজ উদ্দিনের মেজ ছেলে চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান এসএএফ লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মমিন উদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন গত ১২ আগস্ট। কেএস ফিরোজ ॥ করেনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন অভিনেতা কে এস ফিরোজ। সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের নাট্যরূপে কামাল উদ্দিন নীলুর নির্দেশনায় ‘কিং লিয়ার’ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন। সাদেক বাচ্চু ॥ ঢাকার চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় মুখ সাদেক বাচ্চুও রেহাই পেল না করোনার ছোবল থেকে। ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এ অভিনেতা। আবদুল কাদের ॥ মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলেন আরেক গুণী অভিনয়শিল্পী আবদুল কাদের। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তার। ‘ইত্যাদি’তেও নিয়মিত মুখ তিনি। ২০০৪ সালে আবদুল কাদের অভিনয় করেন ‘রং নাম্বার’ চলচ্চিত্রে।
×