ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নেয়া হচ্ছে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

ভাসানচরে এসে খুশি দ্বিতীয় ধাপে আসা রোহিঙ্গারাও

প্রকাশিত: ২১:২৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

ভাসানচরে এসে খুশি দ্বিতীয় ধাপে আসা রোহিঙ্গারাও

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী/ হাতিয়া, ৩০ ডিসেম্বর ॥ সবার মুখে উজ্জ্বল হাসি, কেউ ব্যস্ত ঘর গোছানো নিয়ে, কেউ বা দড়ি টানিয়ে নিচ্ছে কাপড় শুকানোর জন্য, শিশুরা ছোটাছুটি করছে দিগি¦দিক। ভবিষ্যতে কি হবে তা জানা নেই কারো। তবুও পাহাড়ের গিজ গিজ আবাসস্থল থেকে অনেকগুণ ভাল পরিবেশ পেয়ে মহাখুশি সবাই। গত মঙ্গলবার ভাসানচরে দ্বিতীয় দাপে আগত রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দিন বুধবার কাটল এভাবে। দ্বিতীয় দাপে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে একজন রহিমা (৩৪)। স্বামী ও চার সন্তান নিয়ে তিনি বরাদ্দ পেয়েছে ভাসানচরে ৫নং ক্লাস্টারের ৭ নম্বর বাসা। আলাপকালে রহিমা জানান, প্রথম দাপে আসা রোহিঙ্গা স্বজনরা মোবাইলে ভাসানচর সম্পর্কে অনেক ভাল বলেছে। অনেকে ভিডিও কল দিয়ে ভাসানচরের বিভিন্ন দৃশ্য দেখিয়েছে। বাস্তবে এসে তাই দেখল রহিমা। তার মতে এখানে সবার খুবই ভাল লাগবে। হাসপাতালসহ আধুনিক অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে এখানে। বিশেষ করে বাচ্চারা অনেক খুশি। তারা খেলাধুলার জন্য পেয়েছে মাঠ ও রয়েছে সুপ্রশস্ত রাস্তা। রহিমা আরো জানান, প্রথম দিন তাদের নৌ-বাহিনীর সদস্যরা রান্না করা খিচুড়ি খেতে দিয়েছে। দ্বিতীয় দিন বুধবার সকালে দেয়া হয়েছে ভাত, ডাল ও ডিম। আরো কয়েক দিন তাদের রান্না করা খাওয়ার সরবরাহ করা হবে বলে তিনি শুনেছেন বলে জানান। এদিকে দ্বিতীয় দাপে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর ৫টি জাহাজে এসেছে ৪শ’ ২৮টি পরিবারের ১৮শ’ ৪ জন রোহিঙ্গা সদস্য। তাদের বসবাসের জন্য দেয়া হয়েছে ৫, ৬, ১১ ও১২ নং ক্লাস্টারের বাসাগুলো। ৪শ’ ৩০টি বাসা তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সব বাসা একই মানের হওয়ায় বিভাজন নিয়ে ছিলনা কোন মতবিরোধ। দ্বিতীয় দাপে আসা রোহিঙ্গা সদস্যের মধ্যে রয়েছে পুরুষ ৪শ’ ৩৩, মহিলা ৫শ’ ২৩ ও শিশু ৮শ’ ৪৮ জনসহ মোট ১ হাজার ৮শ’ ৪ জন। এছাড়া ও গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দাপে এসেছে ৮১০ জন শিশু, ৩৬৮ জন পুরুষ ও ৪৬৪ জন নারী সহ ১৬শ’ ৪২ জন রোহিঙ্গা সদস্য। এর আগে পালিয়ে বিদেশ যাওয়ার সময় নৌ-বাহিনীর সদস্যরা আটক করে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নিয়ে আসে। এনিয়ে মোট ৩ হাজার ৭শ’ ৬২ রোহিঙ্গা ভাসানচর অবস্থান করছে। এদিকে ভাসানচরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের বেকারত্ব দূর করা লক্ষ্যে চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন করেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একটি টিম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) ড. মোঃ ওমর ফারুকের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট এই টিম ভাসানচর ঘুরে এসে একটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা। যাতে রোহিঙ্গাদের তাদের মতো করে কিছু কারিগরি শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। সরকারী তথ্যানুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
×