ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচন

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচন

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সৌন্দর্য ও শক্তি সর্বজনবিদিত। স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরেই দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন করতে আইনের সংশোধন অনুমোদন লাভ করে চলতি বছর। সংশোধনী অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদ পূরণের পর কোন কারণে নির্বাচন না হলে প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। নির্বাচনে মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে। স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ রাখা হলেও তাদের জন্য বিধি ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। ২৭ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন দিয়েই শুরু হয়েছে দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রথম স্থানীয় নির্বাচন। বছর শেষে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব। সোমবার নির্বাচন শেষে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে রিপোর্ট পেয়েছি তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন সাকসেসফুল হয়েছে। এদিন প্রথম ধাপে দেশের ২৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কত শতাংশ ভোট পড়েছে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, কোথাও ৬০ শতাংশের কম ভোট পড়েনি। কোথাও ৬০, কোথাও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। প্রথম দফায় পৌরসভা নির্বাচনে ২৪ পৌরসভায় মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সুসম্পন্ন হয়েছে। প্রথম দফায় সব পৌরসভায় ভোট হয়েছে ইভিএমে। এটি এক ধরনের অর্জন নিশ্চয়ই। সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ভোট কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য। তবে লক্ষণীয় হলো পৌরসভা নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হলেও এবারের নির্বাচনে খুব কমসংখ্যক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪০’র বেশি হলেও পৌরসভায় মাত্র ৫টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তবে অবধারিতভাবে এর মধ্যে প্রায় সব পৌরসভায় দুটি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী রয়েছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে পৌরসভায় ২০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মনে রাখতে হবে, করোনা পরিস্থিতির ভেতর স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে চিরাচরিত উৎসবের পরিবেশ ও বিপুল মানুষের উপস্থিতি সঙ্গত কারণেই সীমিত থাকার কথা। তারপরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি প্রমাণ করে দেশের তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচনের প্রতি এলাকার সাধারণ মানুষের আগ্রহ কি বিপুল। আমাদের দেশে যে কোন নির্বাচনই হোক না কেন একদল সবসময়েই সমালোচনামুখর থাকে। তারা ছিদ্রান্বেষণকারী। কিন্তু নির্বাচনপ্রিয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে সব সময়েই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে। এবারের প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রবল প্রতিপক্ষ দুটি দলের প্রার্থীরা ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরও জয় হয়েছে। এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা, পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলো আরও অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হবে। যারা বিজয়ী হবেন তাদের আগাম অভিনন্দন।
×