ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছর ৫০ সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে ॥ আরএসএফ

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

এ বছর ৫০ সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে ॥ আরএসএফ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ এ বছর ৫০ সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। যেসব দেশে এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার বেশির ভাগ দেশেই যুদ্ধ চলছিল না। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এএফপির খবরে জানা যায়, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বলছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিক, দুর্নীতি ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করা সাংবাদিকরাই বেশি হত্যার শিকার হয়েছেন। আরএসএফ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, এ বছর ৮৪ শতাংশ সাংবাদিককে সরাসরি তাদের কাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে। আর ২০১৯ সালে ৬৩ শতাংশকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। মেক্সিকোতে আটজন, ভারতে চারজন, ফিলিপিন্সে তিনজন ও হন্ডুরাসে তিন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। মেক্সিকোর পূর্বাঞ্চলের এলাকা ভেরাক্রুজে ‘এল মান্ডো’ পত্রিকার প্রতিবেদক জুলিও ভালদিভিয় রদ্রিগুয়েজের মস্তকবিহীন লাশ পাওয়া গেছে। পশ্চিমের এলাকা আকাপুলকোতে স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইটের সম্পাদক পুনতো এক্স পুনতো নোতিসিয়াসের মরদেহের টুকরা টুকরা অংশ পাওয়া গেছে। দেশটিতে মাদক পাচারকারী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যোগসূত্র রয়ে গেছে। যেসব সংবাদকর্মী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বর্বর হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মেক্সিকোতে সাংবাদিক হত্যায় জড়িত কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে আরএসএফ। আরএসএফ আরও বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে পাঁচ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানের সরকার ও তালেবান জঙ্গীদের মধ্যে আলোচনা চললেও গত কয়েক মাসে গণমাধ্যমকর্মীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ভারতে ‘রাষ্ট্রীয় স্বরূপ’ পত্রিকার প্রতিবেদক রাকেশ নির্ভীক সিংকে ডিসেম্বর মাসে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে তাকে হত্যা করা হয়। দক্ষিণ-পূর্বের তামিলনাড়ু রাজ্যে টিভি সাংবাদিক ইসরাভেল মোজেসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক রুহুল্লাহ জামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে আরএসএফের প্রতিবেদনে। তিনি আমাদনিউজ ওয়েবসাইট ও টেলিগ্রাম নিউজ চ্যানেলের সম্পাদক। তাদের সঙ্গে বিরোধীদের কর্মকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। গত ডিসেম্বর মাসে রুহুল্লাহ জামেকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সহিংসতার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে আরএসএফ। আরএসএফের এডিটর ইন চীফ এ্যাডেস মেভেল বলেন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঘটনা কাভার করেন এমন গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সহিংসতা বেশি ঘটেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ও ফ্রান্সে বিতর্কিত নতুন নিরাপত্তা আইনের কথা উল্লেখ করেছেন। আরএসএফ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, এ বছর ৮৪ শতাংশ সাংবাদিককে সরাসরি তাদের কাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে ও হত্যা করা হয়েছে। আর ২০১৯ সালে ৬৩ শতাংশকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। আরএসএফ বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর কিছু কম সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছর কমসংখ্যক সাংবাদিক মাঠে কাজ করেছেন। এ মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশে আরএসএফ বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারী বিধিনিষেধের কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয়েছে। এ বছর ৩৮৭ জন সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই হার অনেক বেশি। করোনাভাইরাসের সঙ্কটময় পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করায় তাদের মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনের কথা উল্লেখ করেছে আরএসএফ। চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানকে (৩৭) সোমবার চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে গত মে মাসে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তখন থেকে কারাগারে আছেন তিনি। ঝ্যাং গত ফেব্রুয়ারিতে উহানে যান। সেখান থেকে করোনার সংক্রমণ নিয়ে বেশ কতগুলো প্রতিবেদন করেন। এসব প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এরপরই সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকারের সমালোচনা করে তথ্য প্রকাশ করায় সেখানে আটজনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
×