ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় জাহাজে পৌঁছেছে ৪২৭ পরিবার

ভাসানচরকেই বেছে নিল আরও ১৮০৪ রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

ভাসানচরকেই বেছে নিল আরও ১৮০৪ রোহিঙ্গা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক আশ্রয়স্থল হিসেবে ভাসানচরকে বেছে নিল আরও ১৮০৪ রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার সকালে নৌবাহিনীর ছয়টি জাহাজযোগে ভাসানচরে পৌঁছায় রোহিঙ্গাদের ৪২৭টি পরিবার। ইতোপূর্বে যারা সেই দ্বীপটিতে স্থানান্তরিত হয়েছে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে স্বইচ্ছায় তারা ভাসানচরে স্থানান্তরিত হয়। এদিন বিকেলের মধ্যেই তারা আশ্রয় নিয়েছে সেখানে গড়ে তোলা ঘরে। টেকনাফের কুতুপালংয়ের ঘিঞ্জি পরিবেশ ছেড়ে ভাসানচরে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আরও রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক হলেও বঙ্গোপসাগরের হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর ক্রমেই রোহিঙ্গাদের পছন্দের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর সেখানে পৌঁছায় ১৬৪২ রোহিঙ্গা। আগে থেকেই ছিল ৩০৬ জন, যারা সাগরপথে অন্য দেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টাকালে ধরা পড়েছিল। দ্বীপটিতে এখন মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৫২ জনে। শুরুতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও যারা সেখানে যাচ্ছে তারাই স্বজনদের জানিয়ে দিচ্ছে খোলামেলা পরিবেশ ও নানান সুযোগ-সুবিধার কথা। ফলে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে ভাসানচরে পৌঁছায় রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো। এর পর প্রথমে তাদের নেয়া হয় অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখান থেকে গণনা কাজ শেষ করে নিয়ে যাওয়া হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পতেঙ্গা বোটক্লাব থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ছয়টি জাহাজ। ছিল নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব এবং নৌ পুলিশের স্পীড বোটের কড়া নজরদারি, টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর আগে গত সোমবার রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলকে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ৩০টি বাসযোগে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। তাদের রাত যাপনের ব্যবস্থা করা হয় পতেঙ্গায় বিএফ শাহীন কলেজের মাঠে। মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বাসে করে বোটক্লাবে আনার কাজ শুরু হয়। জাহাজে তোলার পর তাদের পরিবেশন করা হয় খাবারের প্যাকেট। ভাসানচরে কয়েকদিন রোহিঙ্গাদের পরিবেশন করা হবে রান্না করা খাবার। চুলা, হাঁড়ি, পাতিলসহ রান্নার সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেয়ার পর তারা নিজেরাই রান্না করে খাবে। খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে খেলাধুলায় মেতে ওঠে রোহিঙ্গা শিশুরা। এতদিন যারা ছিল নানা সংশয়ের মধ্যে তারাও সন্তোষ প্রকাশ করে ভাসানচরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়। ভাসান চরে যা গড়ে উঠেছে ॥ ভাসানচর দ্বীপটি এমন সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ হয়েছে, যা শত বছরের দ্বীপগুলোতেও নেই। দ্বীপের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে সুউচ্চ একটি লাইট হাউস, যার মাধ্যমে ওই চ্যানেলে চলাচলকারী জাহাজগুলো পথের দিশা পায়। একলাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ণের জন্য তৈরি হয়েছে ১২০টি ক্লাস্টার। প্রতিটি ক্লাস্টারে ১২টি হাউস, একটি সাইক্লোন শেল্টার, একটি পুকুর ও খেলার মাঠ নিয়ে একটি গুচ্ছগ্রাম। এভাবে ১২০টি গুচ্ছগ্রামে নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি আবাসন ঘর। লাল রঙের ছাউনিতে এ ঘরগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন, যা অনেকদূর থেকে দৃশ্যমান হয়। প্রতিটি অলিগলি ইট ও কংক্রিটের সমন্বয়ে পাকা করা। কোন ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হলে বসবাসকারীরা দ্রুতই আশ্রয় নিতে পারবে শেল্টারে। রয়েছে দুটি ২০ শয্যার হাসপাতাল, ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী। বসবাসকারীদের জন্য আছে রান্নাঘর, শৌচাগার ও পানীয় জলের সুবিধা। অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে দুটি ফায়ার জিপসহ একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ব্যারাক হাউজসমূহে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। প্রতি ক্লাস্টারে নির্মিত পুকুরের পানিও অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহার করা যাবে। প্রতিটি শেডেই রয়েছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা। এছাড়া নৌবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতি থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সৃদৃঢ়। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা এলে যাতে থাকতে পারেন সে জন্য নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভবন।
×