ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট ॥ ভয় কেটেছে ইভিএমে

পৌর নির্বাচনে আস্থা ফিরছে ভোটারদের ॥ স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

পৌর নির্বাচনে আস্থা ফিরছে ভোটারদের ॥ স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি

শাহীন রহমান ॥ ভোটারদের আস্থা ফিরছে পৌরসভা নির্বাচনে। সোমবারের প্রথম দফা পৌরসভা নির্বাচনে দেখা গেছে প্রায় সব পৌরসভায় ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন কোন ধরনের ভয়ভীতি ছাড়াই। সম্প্রতি নির্বাচনগুলোতে এ ধরনের ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ভোটের ফল বিশ্লেষণেও দেখা গেছে অধিকাংশ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করলেও বিএনপির প্রার্থীরা তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পেরেছেন। এছাড়া বিএনপির অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোটও ছিল উল্লেখ করার মতো। ইসির হিসাবে দেখা গেছে পৌরসভায় ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ০৬ শতাংশ হারে। এছাড়াও ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ভীতি ছিল। কিন্তু পৌরনির্বাচনে ইভিএম ভীতি কেটেছে অনেকটাই। এবারই প্রথম দেশের তৃণমূলে ভোটাররা ইভিএমে ভোট প্রদান করেন। কিছু কারিগরি ত্রুটি ছাড়া এই মেশিনে ভোট দিতে তেমন জটিলতা অনুভব করেননি। বরং তারা ভোট দিয়ে সহজে কোন ভয়ভীতি ছাড়াই ইভিএমে ভোট দেয়ার অনুভূতি প্রকাশ করেন। বলেন মেশিনে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে কোন জটিলতা নেই। সোমবার প্রথম দফায় দেশের ২৪ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে প্রায় প্রতিটি পৌরসভায় সব ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। ভোট নিয়ে ছিল না কোন ধরনের অভিযোগ। নির্বাচনে ঢালাওভাবে অভিযোগ আসেনি বিএনপির প্রার্থীদের কাছ থেকে। তবে তিন থেকে চারটি পৌরসভায় বিএনপিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বাকি সব পৌরসভায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলে। তবে কোন কোন কেন্দ্রে অতীতের মতো ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণের মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি দেশে সব নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে পৌরসভায় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদেরও ভোট পাওয়া হার বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। যা সম্প্রতি অনুািষ্ঠত নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা দুই সিটি নির্বাচন। সিটি নির্বাচনেও ইভিএম মেশিন ব্যবহার করে ভোট নেয়া হয়। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর অবদি কোন কেন্দ্রে আশানুরূপ কোন ভোটার পাওয়া যায়নি। আবার প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থীরা সকাল থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়ারও অভিযোগ করেন। ইভিএমে ভোট পড়ার হার ছিল একেবারে নগন্য। সিটি নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতির কারণ হিসেবে ইভিএম মেশিন ব্যবহারকে কোন কোন মহল থেকে দোষারোপ করা হয়। এর বিপরীতে পৌর নির্বাচনে তৃণমূলে ভোটার সহজেই ভোট দিতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও সম্প্রতি জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলোতে ভোট পড়ার হার ছিল একেবারে হতাশাজনক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত দেশের বিভিন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা বহন করে। মনগড়া অভিযোগ না করে মাঝপথে ভোট প্রত্যাখ্যানের নেতিবাচক রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার জন্য বিএনপিকেও ধন্যবাদ জানান। তবে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকলেও নির্বাচনে পরাজয়ে ইভিএমের কারসাজিকে দুষছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ইভিএম সফটও্যার এমনভাবে সেট করা হয়েছে যেখানে ১০টি ভোট দিলে তার ৮টি চলে যাচ্ছে নৌকা প্রতীকে। বাকি ২টি যাচ্ছে ধানের শীষ প্রতীকে। নির্বাচনের ফলে দেখা গেছে, গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আর কোন নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করতে পারেনি। কিন্তু পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট পেয়েছেন। ২৪ পৌরসভায় সোমবার ভোট নেয়া হলে খুলনার চালনায় বিএনপির মেয়র পদের প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ২৩টির ফল ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ ১৮টি পৌরসভায় জিতলেও বিএনপি ২টি পৌরসভায় জয়লাভ করেছে। এছাড়া তিনটি স্বতন্ত্র জয়ী প্রার্থীর মধ্যে একটিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন। যা নির্বাচনে প্রকিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার স্পষ্ট বার্তা দেয়। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে যেখানে ২১ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন সেখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৭ হাজারের ওপরে। এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী একরামুল হক জয় পেলেও তার নিকটতম ছিলেন বিএনপি প্রার্থী রেজাউল করিম রাজা। এছাড়াও পঞ্চগড় পৌরসভা নির্বাচনে যেখানে ১২ হাজার ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকিয়া খাতুন জয় পেয়েছেন সেখানে বিএনপির প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। এদিকে ইসির দেয়া তথ্য মতে এবারের পৌর নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেশের যেসব পৌরসভায় সোমবার ভোট হয়েছে, তাতে মেয়র পদে ৬৫.০৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, সোমবার ভোট হওয়া ২৪ পৌরসভার মধ্যে একটিতে মেয়র পদের ফলাফল প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ২৩ পৌরসভায় গড়ে ৬৫.০৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট শেষ হওয়ার আগেই খুলনার চালনা পৌর মেয়র পদের একজন প্রার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ওই পৌরসভায় মেয়র পদের ফল স্থগিত করে ইসি। ইসির জনসংযোগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালীর কুয়াটাকায় সর্বোচ্চ ৮৫.৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে এ নির্বাচনে। আর সবচেয়ে কম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৪০.৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা সারা দেশে সবচেয়ে কম। ২৩ পৌরসভায় ৬ লাখ ১২ হাজার ৫৭০ জন ভোটার ছিলেন এবার। এর মধ্যে মেয়র পদে বৈধ ভোট পড়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৯টি। সোমবার ভোট শেষে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ইসি সচিব মোঃ আলমগীর বলেছিলেন, নির্বাচন সার্বিকভাবে খুব ভাল হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল ভাল। সফল নির্বাচন হয়েছে। ইসির তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় ৬২ পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে জানুয়ারির ১৬ তারিখে। এরপর ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় আরও ৬৪ পৌরসভায় ভোট হবে। সব নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ফলে আশা করা হচ্ছে সামনের নির্বাচনেও ভোটারদের উপস্থিতি হবে ব্যাপক। নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক।
×