ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আজ দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি

গণতন্ত্রের নবতর অভিযাত্রা

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

গণতন্ত্রের নবতর অভিযাত্রা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আজ দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি দিবস। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকল ষড়যন্ত্র-প্রতিকূলতা ভেদ করে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অতীতের তুলনায় রেকর্ড সংখ্যক অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত প্রায় সকল দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ওই নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়। তিন শ’ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসনে বিজয়ী হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশের বড় দুটি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্বে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোটসহ নিবন্ধিত সর্বমোট ৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। ১ হাজার ৮৪৮ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যার মধ্যে ১২৮ জন ছিলেন স্বতন্ত্র। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট ২৮১টি আসনে বিজয়ী হয়। জনগণ কর্তৃক নির্বাচনে ফের প্রত্যাখ্যাত হয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির ৫ জনসহ ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৮টি আসনে বিজয়ী হয়। স্বতন্ত্রসহ অন্যরা মোট ১১টি আসনে বিজয়ী হয়। দশম জাতীয় সংসদের মতো একাদশ জাতীয় সংসদেও বিরোধী দলের মর্যাদা হারায় বিএনপি। ফের বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। দিবসটি উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পক্ষে ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে নৌকা প্রতীকে গণরায় দিয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, ১৫ আগস্ট, জেলহত্যা ও ২১ আগস্টের খুনী এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দেশের জনগণ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপি তাদের চিরাচরিত ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে এবং জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক প্রচার ও নির্বাচন কেন্দ্রিক উৎসব-আমেজে স্থবিরতা সৃষ্টি করতে অপতৎরপতা চালায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পরে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বিনষ্টে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট আগুনসন্ত্রাস চালায় ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বিএনপি-জামায়াতের আগুনসন্ত্রাসে শ’ শ’ সাধারণ মানুষ নিহত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন ধারাবাহিক অগ্রগতির মধ্য দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে তখনই একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ব্যাহত করার নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ইতিহাসে একটি বিজয়ের মাইলফলক। গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করবে আওয়ামী লীগ ॥ একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে আজ ঢাকাসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশ, আনন্দ র‌্যালি, বিজয় মিছিলসহ নানা কর্মসূচী মাধ্যমে পালন করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মূল দলের পাশাপাশি তাদের সহযোগী সংগঠনও নানা কর্মসূচী নিয়ে সতর্ক অবস্থায় আজ মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর কথা চিন্তা করে বড় ধরনের রাজনৈতিক শোডাউন কিংবা বড় জমায়েত বা মহাসমাবেশ কর্মসূচী থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ। তবে আজ রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা-উপজেলা এমনকি ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়সহ পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে রাজপথ দখলে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। তৃণমূলে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে সহিংস রাজনীতির অন্ধকার ছায়া কাটিয়ে গণতন্ত্রের নবতর অভিযাত্রায় অগ্রসর হয়। এই কারণে ৩০ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করবে তাঁরা। দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর পাশাপাশি সারাদেশেই গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করা হবে। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচী পালন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। বিকেল ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। দুটো কর্মসূচীতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস পালন করার লক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লার নেতাকর্মীর প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ওসব কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য, অর্জন ও উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তৃণমূলে বিশেষ দিক-নির্দেশনামূলক বার্তা দেয়া হচ্ছে। মহানগর নেতারা জানান, ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতাকর্মীকে পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মহানগর ঘোষিত কর্মসূচী সফলের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এদিকে দিনটি উপলক্ষে আজ রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আনন্দ র‌্যালি করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আজকের কর্মসূচী নিয়ে ইতোমধ্যে বর্ধিত সভা করেছে সংগঠনটি। এছাড়া ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে’ শোভাযাত্রা করবে বাংলাদেশ কৃষকলীগ। কৃষক লীগের র‌্যালিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে হাইকোর্ট ও জাতীয় প্রেসক্লাব ঘুরে পল্টন হয়ে আবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে। এসময় সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে জাতীয় পতাকা থাকবে। গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১১ টায় আওয়ামী যুবলীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী এবং সমমনা সংগঠন নানা কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ঘোষিত কর্মসূচী স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথভাবে পালনের জন্য দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে গণতন্ত্রের বিজয়ের এ ঐতিহাসিক দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
×