ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্দর প্রকল্পের পণ্য নিয়ে মাতারবাড়িতে ভিড়ল প্রথম জাহাজ

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

বন্দর প্রকল্পের পণ্য নিয়ে মাতারবাড়িতে ভিড়ল প্রথম জাহাজ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বাস্তবায়নাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল অতিক্রম করে মঙ্গলবার ভিড়েছে প্রথম জাহাজ। ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা এমভি ভেনাস ট্রায়াম্ফ নামের এ জাহাজটি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ভেড়ানো হয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে। জাহাজটিতে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের পণ্য। গভীর সমুদ্র বন্দরের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু এখন না হলেও দিনটি মাইলফলক হয়ে থাকবে সেখানে প্রথম জাহাজ ভেড়ার কারণে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে জাহাজটিকে স্বাগত জানান। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাহাজটিতে রয়েছে ৭৩৬ মেট্রিক টন স্টিল স্ট্রাকচার, যা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সরঞ্জাম। ৩১৩ প্যাকেজে আসা এই পণ্যের মধ্যে আছে বিম, কলাম, গার্ডার, টাওয়ার ইত্যাদি। এসব সরঞ্জাম সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হবে। পণ্যগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জাপানী প্রতিষ্ঠানের হলেও তৈরি হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট এ্যানসাইন্ট স্টিমশিপ কোম্পানি লিমিটেড। আগামী ৫ জানুয়ারি আরও একটি জাহাজ আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। এরপর একে একে আসতে থাকবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর (ডিসি) ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম জানান, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এখনও নির্মিত না হলেও চ্যানেলে প্রথম জাহাজ প্রবেশের জন্য দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পাইলটরা গভীর সাগর থেকে জাহাজটিকে জেটিতে নিয়ে আসেন। ৪ দশমিক ৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। ইন্দোনেশিয়া থেকে পণ্য আনার কাজে ব্যবহৃত জাহাজটি প্রকল্পের প্রথম জাহাজ। আরও জাহাজ আসবে মাতারবাড়ি চ্যানেলে। প্রসঙ্গত, দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ার কারণে আমদানি-রফতানি যে গতিতে বাড়ছে তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের একার পক্ষে চাপ সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বর্তমানে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২ ভাগ সম্পাদিত হয়ে থাকে এই বন্দর দিয়ে। দেশে গড়ে উঠছে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার মধ্যে চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর হবে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম। এই শিল্প নগরে গড়ে উঠতে শুরু করেছে দেশী-বিদেশী অনেক শিল্প কারখানা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর কাছাকাছি পর্যায়ে। অনেক সুদূরপ্রসারী চিন্তায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, যা এখন আর স্বপ্ন নয় বরং দৃশ্যমান হতে চলেছে। গভীর সমুদ্র বন্দর, অতীতে যা ছিল কথার কথা তা এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য শুরুতে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জেটি ও চ্যানেল নির্মাণের কাজ শুরু হতেই দেখা দেয় এক অপার সম্ভাবনা। অর্থাৎ সোনাদিয়া নয়, এই মাতারবাড়িতেই হবে গভীর সমুদ্র বন্দর। এতে ব্যয় সাশ্রয়, সহজ কানেক্টিভিটি, পরিবেশ রক্ষা, অধিক গভীরতা সবই পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সার্বিক চিন্তায় সরকার সোনাদিয়া থেকে সরে এসে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জাফর আলম জানিয়েছেন, এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা, যার বেশিরভাগই দেবে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। বাকি অর্থের জোগান দেবে সরকার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এই মাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেলে ডিজাইন ঠিক হওয়ার পর কালক্ষেপণ না করেই ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আমরা ভূমি পেয়ে যাব। সেখানে বেশির ভাগ ভূমিই খাস, তবে কিছু ব্যক্তি মালিকানার জমিও রয়েছে, যা অধিগ্রহণ করতে হবে। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়ার পথে আর কোন বাধা নেই বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অন্যতম শীর্ষ এই কর্মকর্তা। গভীর সমুদ্র বন্দর প্রয়োজন যে কারণে ॥ বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে বেশি বড় না হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে ক্ষুদ্র নয়। এ দেশের পাশেই রয়েছে বিশাল একটি ভূমিবদ্ধ অঞ্চল, যার সমুদ্র বন্দর সুবিধা নেই। দেশে শিল্পায়ন এবং আমদানি-রফতানি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোও বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণে আগ্রহী। দেশে তিনটি সমুদ্র বন্দর থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের ওপরই মূল চাপ। কারণ ৯২ ভাগ পণ্য এই বন্দর দিয়েই আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। কর্ণফুলী চ্যানেলে অবস্থিত এ বন্দর সমুদ্র থেকে বেশ উজানে। জেটি পর্যন্ত পৌঁছাতে একটি জাহাজকে দুটি বিপজ্জনক বাঁক অতিক্রম করতে হয়। ঝুঁকির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারে না। তাছাড়া যে ড্রাফটের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে তাতে সর্বোচ্চ ২২ শ’ থেকে ২৩ শ’ কন্টেনার বহন করা যায়। গভীর সমুদ্র বন্দরে আসতে পারে একসঙ্গে ১২-১৩ হাজার টিইইউএস কন্টেনার ধারণ করা জাহাজ। এই বন্দরে চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে সরাসরি বড় জাহাজ আসতে পারবে।
×