ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনইসিতে ৬৫ লাখ কোটি টাকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন

কর্মসংস্থানে আরও অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

কর্মসংস্থানে আরও অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরুণরা চাকরি পেয়ে যাতে দেশে থাকতে পারেন সে পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। তরুণদের কর্মসংস্থানে আরও ইকোনমিক জোন করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ইউনিয়নভিত্তিক ভূমি ব্যবহার মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন) চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এনইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন এনইসির চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ ও সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অন্যান্য সদস্য যুক্ত হন। এনইসি সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম। আর উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য জ্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম, আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নতুন ইকোনমিক জোন করার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে এক শ’টি ইকোনমিক জোন হচ্ছে। এর বাইরে আরও ইকোনমিক জোন করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সবাই বিদেশে চলে যায়, দেশে থাকার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে সেই কথা বলেছেন। যাতে তরুণরা চাকরি পেয়ে দেশের ভেতরেই থাকতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আর ফসলি জমি যাতে নষ্ট না হয় (ধান, পাট, গমের জমি), এজন্য ইউনিয়নভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান করা হবে। ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান বা ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। অন্যান্য দেশে এ পরিকল্পনা আছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ভূমিভিত্তিক পরিকল্পনা করা হোক সব ইউনিয়নের জন্য। যাতে এখানে-ওখানে ঘরবাড়ি না ওঠায়। এটা প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ নির্দেশনা। এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এর আগে অনুষ্ঠিত সভায় এনইসি সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে বলেই দেশ উন্নয়নের ধারায় ফিরতে পেরেছে এবং জনগণ এর সুফল পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনতার ক্ষমতা জনতার হাতে আমরা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার তাদের হাতেই আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি, যার ফলে আমাদের উন্নয়নের গতিধারা যথেষ্ট সচল হয়েছে। সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ছিল না, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। একের পর এক সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতাটা ঐ ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই বন্দী ছিল। যে কারণে উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত থাকেনি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার, সে লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশে^র দরবারে আজ বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে অথচ এক সময় বাংলাদেশ বললে লোকজন এমন একটা ভাব দেখাত যে, এই বাংলাদেশ যেন সবার কাছে হাত পেতেই চলে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, যদিও তখন আমি বিরোধী দলে ছিলাম তবুও সেটা আমার আত্মসম্মানে বাঁধত, কষ্ট লাগত। কেননা, সারাটা জীবন জাতির পিতা সংগ্রাম করেছেন, কষ্ট করেছেন। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন, সেই স্বাধীন দেশকে কেউ এ রকম অবহেলার চোখে দেখলে সেটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি এ সময় আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ প্রদানের দেশের জনগণের প্রতি পুনরায় কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, কেননা, তারা আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ^াস রেখেছে। তারা পরপর তিনবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমরা যেমন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়েছি তেমনি ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরবর্তীতে তাঁর সরকার ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত পৃথক প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ২০২১ থেকে ’৪১ এই সময়ের মধ্যে দেশকে কিভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাব সেজন্য আরও কয়েকটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আমাদের করতে হবে। যার মধ্যে আজ ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা সরকারে থাকি বা যারাই থাকুক তারা যদি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন, তাহলে, বাংলাদেশকে আমরা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। ‘জাতির পিতার হাত ধরেই এদেশে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের গোড়াপত্তন’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এদেশে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই যেমন দেশের সংবিধান দিয়ে যান তেমনি আইন-কানুন যথাযথভাবে তৈরি করে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। সে সময়ই তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন (১৯৭৩-’৭৮) এবং জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনও গঠন করেন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য, জাতির পিতা সেই পরিকল্পনা পুরো করে যেতে পারেননি, উপরন্তু তাঁকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। কার্যত পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোর আর যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ’৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তারা সেভাবে আর কোন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা না নিয়ে বরং অ্যাডহক ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশ চালায় এবং ’৯৬ সালে একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ আবার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়, বলেন তিনি। সে সময় পরিকল্পনা প্রণয়নের সহায়তাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছাড়া একটা দেশ উন্নত হতে পারে না। তাই, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আমরা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন (’৯৭-২০০২) করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। সরকারপ্রধান বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাতিল করে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে শুরু করে। যার ফলে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়সহ মাঝে অনেক বছর চলে গেলেও আর আর কোন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি। এরপর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সফলভাবে এমডিজি বাস্তবায়নের পর তাঁর সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত ‘এসডিজি-২০৩০’ বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি এবং এসডিজি উভয় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময়ই তাঁর সেখানে (জাতিসংঘে) থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস একটা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সেটা শুধু আমাদের নয়, বিশ^ব্যাপী। জাতির পিতা যে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে যান সেখান থেকে তাঁর সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ^ যেখানে একেবারেই থমকে গেছে সেখানে বাংলাদেশ তাঁর অর্থনীতির গতিধারা সীমিত আকারে হলেও চলমান রাখতে পেরেছে। যদিও কাক্সিক্ষত ৮ দশমিক ২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি, তথাপি সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অর্থনীতির চাকাটা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। এজন্য তিনি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। করোনা মহামারীর মধ্যেও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন শেষ করতে পারায় সংশ্লিষ্টদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। এদিকে, অনুমোদন পাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে পরিকল্পনা কশিমনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে মোট ৬৪ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকা। যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিদেশী উৎস থেকে আসবে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট বিনিয়োগের মধ্যে সরকারী খাত থেকে আসবে ১২ হাজার ৩০১ দশমিক ২ বিলিয়ন টাকা, যার আকার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। আর বেসরকারী খাত থেকে আসবে ৫২ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকা, যার আকার ৮১ দশমিক ১ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ২১ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২৩ অর্থবছরে ৮ শতাংশ, ২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং ২৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অষ্টম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ লাখ ৫ হাজারের কর্মসংস্থান হবে বিদেশে। এই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ০১ মিলিয়ন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ দশমিক ২৬ মিলিয়ন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে সরকার। বিবিএসের রিপোর্ট তুলে ধরে জানানো হয়, এ সময় ১৮ থেকে ১৯ লাখ লোক বছরে শ্রম বাজারে যুক্ত হবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাদের সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২৫ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে নিয়ে আসা হবে। আর ২৫ অর্থবছরে চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ড. শামসুল আলম জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে বার্ষিক গড় জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জন হবে ৮ শতাংশ হারে। এবং পরিকল্পনার শেষ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। এতে দেশের মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে। পরিকল্পনায় বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক চার শতাংশ। অর্থবছরভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ বিনিয়োগ। ড. আলম আরও জানান, ২০২৫ সাল নাগাদ কর জিডিপির অনুপাত বর্তমানের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ করা হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য শুল্কের ওপর নির্ভরতা কমাতে এই দুই লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজস্ব আইন অধিকতর সংস্কার এবং কর প্রশাসনে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
×