ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর হস্তে দমন করা হবে

কিশোর গ্যাংয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করছে পুলিশ

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

কিশোর গ্যাংয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করছে পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশের কিশোর গ্যাংয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করছে পুলিশ। দেশজুড়ে বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, উপদ্রব, অত্যাচার, নির্যাতন ক্রমবর্ধমান হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা উদ্বেগজনক। খুন থেকে ধর্ষণ কোন কিছুই অপরাধের তালিকা থেকে বাদ নেই। মাদকাসক্তি হচ্ছে সাধারণ অপরাধ। কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়, শহরে-বন্দরে, মাঠে-ঘাটে সর্বত্র। সারাদেশের কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা তৈরি করে চলমান অভিযানকে বিশেষ অভিযানে পরিণত করে কঠোরহস্তে দমন করবে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, ৩ বছরে সারাদেশের ৬৪ জেলা, থানা, বিভাগ ও মেট্রোপলিটন এলাকায় ১০ হাজারের বেশি কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকাতেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা সহস্রাধিক। এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে ১২ দফা সুপারিশ করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তিন বছরে সারাদেশে ৪০টির অধিক গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করেছে এই গ্যাং। খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে অন্তত ৩০টি। তিন বছরে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেড় শতাধিক সদস্যকে সাজা দিয়েছে। সাজাপ্রাপ্তের অধিকাংশই গাজীপুর ও টঙ্গীর কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গ্যাং সদস্যদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে- এক সময় পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার ও নাইন এমএম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্যাক রোজ, রনো, কেনাইন, ফিফটিন গ্যাং, পোঁটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গার্ল গ্যাং, লাগবি নাকি, মাঈনুদ্দিন গ্রুপ, বিহারী রাসেল গ্যাং, বিচ্চু বাহিনী, পিচ্চি বাবু, সাইফুলের গ্যাং, সাব্বির গ্যাং, বাবু রাজন গ্যাং, রিপন গ্যাং, মোবারক গ্যাং, নয়ন গ্যাং, তালাচাবি গ্যাং, নাইন এম এম, একে ৪৭ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ, স্টার বন্ড গ্রুপ, মোল্লা রাব্বির গ্রুপ, গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপায়ইয়া দে, শাহীন-রিপন গ্যাং, নাজিম উদ্দিন গ্যাং, শান্ত গ্যাং, মেহেদী গ্যাং, সোলেমান গ্যাং, রাসেল ও উজ্জ্বল গ্যাং, বাংলা ও লাভলেট গ্যাং, জুম্মন গ্যাং, চান-জাদু, ডেভিল কিং ফুল পার্টি, ভলিয়ম টু, ভাণ্ডারি গ্যাং, টিকটক গ্যাং, পোঁটলা সিফাত গ্যাং যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। রাজধানীতেই ৪০টির বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। প্রতিটি গ্যাংয়ে ১৫ থেকে ২০ জন করে সদস্য রয়েছে। গ্যাংগুলো উত্তরা, তুরাগ, খিলগাঁও, দক্ষিণ খান, টঙ্গী, সূত্রাপুর, ডেমরা, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, কোতোয়ালি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, আগারগাঁও ও হাতিরঝিলে সক্রিয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিশোর বিরোধী অভিযানে রাজধানীর কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোর অস্তিত্ব আগের মতো দেখা যায় না বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে ২০১৭ সালে রাজধানীর উত্তরায় ১৪ বছর বয়সী স্কুলছাত্র আদনান কবিরকে তার সমবয়সী কিশোররা পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসে। এরপর রাজধানী ঢাকাতে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে তদন্ত ও অনুসন্ধান শুরু করার পর কেবলমাত্র উত্তরাতেই এক ডজনের বেশি গ্যাংয়ের সন্ধান পায় পুলিশ। গত সেপ্টেম্বরে সাভারে স্থানীয় গ্যাং সদস্যদের হাতে নিহত হয় স্কুলছাত্রী নীলা রায়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে দুই কিশোর-তরুণের হাত থাকার অভিযোগ উঠে। এরপর গত ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুই গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নাঈম নামের এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। গ্যাং কর্মকাণেডর বিরোধিতা করায় গত ১ এপ্রিল একই এলাকায় ৩০ বছর বয়সী শরিফ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানায় শীতলক্ষ্যায় ডুবে মারা যায় দুই কিশোর। ধারণা করা হচ্ছে, অন্য কিশোরদের ধাওয়া থেকে বাঁচতে তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় কলেজছাত্র মোঃ সোহাগ নিহত হন। জানা গেছে, এক রিক্সাচালককে হেনস্থা করার প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যা করা হয়। বরগুনার কুখ্যাত নয়ন বন্ড ০০৭ গ্রুপ গত বছর দিনেরবেলায় রাস্তায় জনসম্মুখে রিফাত শরিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। এটি তরুণ গ্যাং সংস্কৃতির একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। এ হত্যার জন্যে ১১ কিশোরকে কারাদণ্ড দিয়ে বরগুনার আদালত পর্যালোচনায় জানায়, সারাদেশে কিশোর অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। গডফাদাররা এই তরুণ-কিশোরদের ব্যবহার করছেন। আদালতের ভাষ্য মতে, এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়া হলে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে দেলোয়ার বাহিনী নামে তরুণ গ্যাংয়ের হাতে একজন গণধর্ষণের শিকারের সংবাদটি সারাদেশে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। শুধু বেগমগঞ্জেই অন্তত দুই ডজন গ্যাং রয়েছে বলে পুলিশের তথ্যে উল্লেখ আছে। কয়েক মাস আগে, টিকটক ও লাইকি তারকা ইয়াসিন আরাফাত ওরফে অপু ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উত্তরায় তার অনুসারীরা তিন স্থানীয় তরুণকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই গ্রুপটিকেও সেই দুই ভাই পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা ও মাদক রাখার অভিযোগে পূর্ব উত্তরা ও দক্ষিণখান থানায় অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে। পুলিশের কিশোর গ্যংয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নিজেরাই নানা কারণে কিশোর গ্যাং গড়ে তুলছে। যার মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক এবং শিক্ষাগত কারণ অন্যতম। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নিম্ন আয়ের পরিবারের কিশোররা নানা কারণে শিক্ষা থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হয়। আবার স্কুল থেকেই ঝরে পড়ে। অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে এসব কিশোরের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়। প্রথম প্রথম এসব কিশোর হতাশা ভুলে থাকতে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মাদক সেবনের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রায়ই গালমন্দ করেন। একদিকে লেখাপড়া বা স্কুলে যাওয়ার কোন তাড়া থাকে না। তারপর পরিবারের সদস্যদের কাছে গালমন্দ খেতে খেতে তাদের মধ্যে হতাশা পুরোপুরি ভর করে। তারা মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে সবকিছু ভুলে থাকার চেষ্টা করতে থাকে। পরিবারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আস্তে আস্তে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর মাদক সেবনকালে স্বাভাবিক কারণেই সমবয়সী কিশোরদের সঙ্গে এদের সম্পর্ক হয়। এরপর তারা নিজেরাই সংঘবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলছে গ্যাং। এরা মাদকের টাকা যোগাড় করতে ছিনতাই, মাদক বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে এক ধরনের হিরোইজম কাজ করে। তারা পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন জায়গায় বসে ইভটিজিং করে। পাড়া-মহল্লায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে একসঙ্গে অনেক কিশোর বিকট শব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারই তাদের আশপাশে থাকা বা উচ্চবিত্ত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে চায়। এসব পরিবার তাদের সন্তানদের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের মতো নামী-দামী স্কুলে পড়াতে চায়। গাড়ি হাঁকিয়ে স্কুলে পাঠাতে চায়। কিছুদিন সেই ধারা ধরে রাখতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তারা টিকতে পারে না। এ সময় তারা ছিটকে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সন্তানদের লেখাপড়াও অধিকাংশ সময় থমকে যায়। পড়াশোনায় ছন্দপতন ঘটায় ওই সব কিশোরও আস্তে আস্তে পাড়ার বখাটে কিশোরের সঙ্গে মিশতে থাকে। মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পরবর্তী সময়ে জড়িয়ে পড়ে কিশোর গ্যাংয়ে। আর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। পরিবারের অঢেল টাকা থাকায় এবং বড় ব্যবসা-বাণিজ্য থাকায় আগাগোড়াই তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ কম থাকে। ব্যতিক্রমও আছে। এসব পরিবারের কিশোর সাধারণত ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করে। ইংরেজী মাধ্যমে নিয়মিত ক্লাস করার রীতি না থাকায় তারা বাড়তি সময় পায়। সেই সময় তারা বন্ধু বা বান্ধবী বা সমবয়সীদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। তারা পার্টি করে বেড়ায়। পার্টির আড়ালে চলে মাদকের আসর। এক সময় তারা মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এসব পরিবারের সন্তানদের মধ্যে ব্যবসা করতে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে এক ধরনের ধারণা কাজ করে। এই ধারণাই তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় রাজনৈতিক দলের ও দলের কোন কোন নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়েও কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার তথ্য মিলেছে পুলিশ প্রতিবেদনে। অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ বলেন, কিশোর গ্যাং পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য রীতিমতো হুমকিসরূপ। কারণ এক সময় কোন কিশোর অপরাধীই বড় ধরনের অপরাধী হয়ে গড়ে উঠতে পারে। কোন কোন কিশোরের দুর্র্ধর্ষ জঙ্গী হয়ে ওঠাও বিচিত্র নয়। যাদের পক্ষে বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো কোন ব্যাপার নাও হতে পারে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ কিশোর গ্যাংয়ের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হন। একজন সাধারণ মানুষও অনেক সময় তাদের হাত থেকে রেহাই পান না। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর পরই সারাদেশে পুলিশের সব ইউনিটকে কিশোর গ্যাং সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশেষ ফাইল তৈরির করার নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক সারাদেশে কিশোর গ্যাং শনাক্তকরণ এবং গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার করতে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে। রাজশাহীতে ‘কিশোর গ্যাং ডিজিটাল ডাটাবেজ’ তৈরি করা হয়েছে। ডাটাবেজে প্রায় ৪০০ কিশোরের বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর রাজশাহী নগর পুলিশের ‘অপারেশন কন্ট্রোল এ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার, কিশোর গ্যাং ডাটাবেজ এবং হ্যালো আরএমপি এ্যাপ’ উদ্বোধন করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। পুলিশের আইজিকে কিশোর গ্যাং ডাটাবেজ তৈরি করার বিষয়ে অবহিত করেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম অপরাধ পরিস্থিতি সম্পর্কিত মাসিক পর্যালোচনা বৈঠকে রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। ডিএমপির অপরাধ বিভাগকে সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি দেখতে বলেছেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি পুলিশ সদস্যদের বলেছেন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত ও নজরদারিতে রাখতে। ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গ্যাং কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় নগরীর বিভিন্ন সড়কে অস্থায়ী চেকপয়েন্ট বসানোর ওপরও তাগিদ দিয়েছেন।
×