ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা আইন ২০২০ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘মহাসড়ক আইন, ২০২০’র খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভা মোংলা বন্দরের স্থাপনা ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়ার বিধান রেখে ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০’র খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনের জন্য টাঙ্গাইলে কাটা পড়বে সংরক্ষিত বনের ১১ হাজার ২৪৬টি গাছ। এই গাছ কাটার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। এদিকে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভ করা যুক্তরাজ্য থেকে কেউ দেশে ফিরলেই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বলে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সোমবার অনুষ্ঠিত এই ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী মহাসড়কের পাশে অবকাঠামো নির্মাণ করলে, ফসল, খড় বা পণ্য শুকাতে দিলে, ক্রসিং এরিয়া বাদে অন্য জায়গা দিয়ে হাঁটলে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, অধিদফতরের বিনা অনুমতিতে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, তোরণ বা এ ধরনের কিছু মহাসড়কে টাঙ্গালে এবং ধীরগতির যানবাহনগুলো নির্ধারিত লেন ছাড়া মহাসড়কে উঠলে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। এছাড়া যদি কেউ মহাসড়কের সংরক্ষণ রেখার মধ্যে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা স্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা আর অস্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে অনধিক ৫০ হাজার টাকা দণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তিনি বলেন, ১৯২৫ সালের হাইওয়ে এ্যাক্ট রহিত করে মহাসড়ক, নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবাধ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ যান চলাচলের জন্য নতুন আইন করা হচ্ছে। মহাসড়কের ক্ষতি কমিয়ে সড়কে স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং যানবাহন চলাচলে গতিশীলতা নিশ্চিত করতে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মহাসড়কের একটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে কত গতিতে গাড়ি চলতে পারবে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি নিয়ন্ত্রণ না করি এবং মানুষকে সুযোগ-সুবিধা না দেই তাহলে এই মহাসড়ক ব্যবস্থা ঠিকভাবে চালানো সম্ভব হবে না। মহাসড়কের মাঝে মাঝে আন্ডারপাস করা হবে, সেখান দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সিএনজি, রিকশা চলাচল করতে পারবে। সব জায়গায় আন্ডারপাসের ব্যবস্থা থাকবে না, সেক্ষেত্রে ওভারপাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মহাসড়কের দুইপাশে সড়ক থাকবে। তাই বৃষ্টির পানি বা যে কোন পানি যেন পরিষ্কার হয়ে যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রোডের পাশে যেসব গাছ লাগানো উচিত সেসব গাছ লাগাতে হবে। কড়ই গাছ রাস্তার পাশে লাগালে ডালপালা সড়কে চলে আসে। সড়কে ডালপালা না আসে সে ধরনের গাছ লাগাতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক মহাসড়কে নির্ধারিত দূরত্বে তেলের পাম্প ও মানুষের বিনোদনমূলক বিশেষ করে দূরপাল্লায় যাওয়া ট্রাকচালকদের জন্য বিশ্রামের কক্ষ রাখতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এসব স্থাপনা করতে জায়গা নির্ধারণ করেছে। হাইওয়ে করলে ৮৫ কিলোমিটার গতি নিশ্চিত করতে হবে। এটা আইনে বলা নেই, এটা নির্ভর করবে সড়কটি কোন এলাকায় হচ্ছে তার ওপর। ‘মহাসড়কগুলোর মাঝখানে ডিভাইডার থাকবে। আস্তে আস্তে সব হাইওয়ে চারলেন করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে হলে টোল দিতে হবে। হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন ॥ সুষ্ঠুভাবে হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনায় নতুন এই আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এ আইন পাশ হলে কোন হজ ও ওমরা এজেন্সি সৌদি আরব নিয়ে অপরাধ করলেও বাংলাদেশে সেই অপরাধের বিচার করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এত দিন হজ ব্যবস্থাপনা চলত একটা নীতিমালার মাধ্যমে। নীতিমালার মাধ্যমে চলার কারণে অনেক সময় ব্যবস্থা নিলে সংশ্লিষ্টরা আবার হাইকোর্টে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসত। ২০১১ সাল থেকে সৌদি আরব হজ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে ফেলেছে। পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া আইন করে ফেলেছে। হজ ব্যবস্থাপনার সাথে আমাদের সঙ্গতি রাখতে গেলে একটা আইনী কাঠামো প্রয়োজন। ২০১২ সালে মন্ত্রিসভার নির্দেশনা ছিল নীতিমালার পরিবর্তে আইন করার। ১১ হাজার ২৪৬টি গাছ কাটার অনুমোদন ॥ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনের জন্য টাঙ্গাইলে কাটা পড়বে সংরক্ষিত বনের ১১ হাজার ২৪৬টি গাছ। এই গাছ কাটার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ধনুয়া-এলেঙ্গা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়-নলকা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য টাঙ্গাইল জেলার ৫৩ দশমিক ১৫ একর বনভূমিতে বিদ্যমান গাছপালা কর্তন এবং অপসারণের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড-জিটিসিএল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য শফিপুর বনের ভেতর ও বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপারে ১১ হাজার ২৪৬টি গাছ কাটতে পারবে। সংরক্ষিত বনের মধ্যে গাছ কাটা নিষেধ করা ছিল ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গ্যাস নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ২০ ইঞ্চি ব্যসার্ধের গ্যাসলাইনে কাজ হচ্ছে না। আমাদের ৩০ ইঞ্চি লাগবে। এ জন্য নতুন লাইন করা হচ্ছে। এই গ্যাসলাইন যাবে নতুন যে রেল ব্রিজ হচ্ছে সেটার ওপর দিয়ে। এরপর স্টেশন থেকে বিতরণ করা হবে। মোংলা বন্দর পরিচালনা-ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া যাবে ॥ মোংলা বন্দরের স্থাপনা ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়ার বিধান রেখে ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৮ সালের পার্লামেন্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত যে আইনগুলো ছিল সেগুলো বাতিল করার একটা সিদ্ধান্ত ছিল হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে। এ জন্য ‘মোংলা পোর্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬’-এর পরিবর্তে এই নতুন আইন নিয়ে আসা হয়েছে। এটা অনেকটা পায়রা বন্দর আইনের মতো। এখানে কতগুলো জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেটা হলো- প্রয়োজনে দেশের যে কোন স্থানে কর্তৃপক্ষের কার্যালয় স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে আইনে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বন্দরের বিভিন্ন এলাকা ও স্থানকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বন্দরে পণ্যবোঝাই সংরক্ষণ, খালাস ও সরবরাহের জন্য প্রয়োজনে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে অপারেটর নিয়োগের বিধান সংযোজন করা হয়েছে। বন্দরের কোন স্থাপনা ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিধি দিয়ে নির্ধারিত মেয়াদ, শর্ত ও পদ্ধতিতে অনুমতি দেয়ার বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। আগের আইনে এটা ছিল না। খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, টোল, রেট ইত্যাদি ফাঁকির জন্য দণ্ড, কোম্পানির অপরাধ সংগঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ- এগুলো রাখা হয়েছে। এখানে যে অপরাধ হবে সেগুলো ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচার হবে। মোবাইল কোর্টেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। আগের আইনে কিছু কিছু ধারা ছিল সেগুলো এখন আর প্রযোজ্য নেই, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যুক্তরাজ্য থেকে আসলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক ॥ নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভ করা যুক্তরাজ্য থেকে কেউ দেশে ফিরলেই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ করে লন্ডন থেকে যারা আসবেন তাদের কঠোরভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। দুটি অপশন ছিল । লন্ডন থেকে আসা যাত্রীদের প্রবেশ বন্ধ করা হবে নাকি কঠোরভাবে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে কঠোরভাবে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, রাতে আমরা একটা মিটিং দিয়েছি, সেই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে কবে থেকে জানানো হবে। মিটিংয়ে টেকনিক্যাল লোকজন থাকবে। লন্ডন ফ্লাইটে যেই আসুক তার যদি গতকালকেরও নেগেটিভ রিপোর্ট থাকে তারপরও তাকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, দিয়াবাড়ি ও হজক্যাম্পে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন আছে, সেখানে থাকবে ১৪ দিন। কিছু হোটেলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মিটিংয়ের পর সিদ্ধান্ত দেয়া হবে যে অত তারিখের পর যারা লন্ডন থেকে আসবে তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আজ থেকেই তো করা যাবে না, এতে অনেকে বিপদে পড়ে যাবে। একটা যৌক্তিক সময় দিয়ে নোটিফিকেশন করে দেবে, ওইদিন থেকে যারা আসবে তারা রেস্ট্রিকশনে থাকবে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে হোটেলে যেভাবে থাকে সেভাবেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেউ (লন্ডন থেকে) সিলেটে এলে তাকে সিলেটে, কেউ চট্টগ্রামে এলে চট্টগ্রামে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকার খরচ ওই ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে।
×