ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাস

পুরাকীর্তি ‘মঙ্গলাবাস’ যথাযথ সংস্কারের দাবি

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

পুরাকীর্তি ‘মঙ্গলাবাস’ যথাযথ সংস্কারের দাবি

জবি সংবাদদাতা ॥ পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের মোহিনী মোহন দাস লেনে নান্দনিক কারুকার্যখচিত ব্রিটিশ যুগের প্রাসাদ ‘মঙ্গলাবাস’। ভবনটি বতর্মানে কবি নজরুল সরকারী কলেজের ছাত্রাবাস (শহিদ শামসুল আলম ছাত্রাবাস) হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্প্রতি ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জমিদার যতিন্দ্র কুমার সাহার শতবর্ষী এই রাজকীয় ভবনটি যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সূত্রাপুরের ৩নং মোহিনী মোহন দাস লেনে অবস্থিত ভবনটির সামনে আরবান স্টাডি গ্রুপ এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন চলাকালে কবি নজরুল সরকারী কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী কর্মসূচি বন্ধ করার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তারা সেখান থেকে চলে যায়। শিক্ষার্থীরা বলেন, হলের অভ্যন্তরে বহিরাগতরা কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মানববন্ধন করায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আরবান স্টাডি গ্রুপের অভিযোগ, গত সপ্তাহ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবনটি সংস্কারের নামে এর পুরো সামনের অংশ জুড়ে চুন সুরকির আস্তর ফেলে দিয়ে ঢালাও ভাবে নতুন করে সিমেন্ট প্লাস্টার এর কাজ শুরু করেছে। ফলে এক দিকে যেমন চুন-সুরকির এই ভবনটির কাঠামো দুর্বল হয়ে পরবে তেমনি এর মূল অবয়বের নান্দনিক গুরুত্ব হারিয়ে যাবে। সংগঠনটি জানায়, জমিদার যতিন্দ্র কুমার সাহার শতবর্ষী রাজকীয় ভবন মঙ্গলাবাস কারুকার্য খচিত রেলিং, রঙ্গিন কাঁচের শার্শি সম্বলিত ইউরোপিয় নিও ক্লাসিক্যাল স্টাইল এ নির্মিত এই অনন্য সুন্দর স্থাপনাটির বিভিন্ন অংশে কালের আবর্তে আস্তর ক্ষয়ে যেয়ে এক অদ্ভুত নান্দিনিকতার সৃষ্টি করেছে। স্থাপতিক ও নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি শিল্প-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভাবে সমাদৃত । সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, গত বুধবার বিষয়টি জানার পরে গত বৃহস্পতিবার সংগঠননের পক্ষ থেকে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হলে এক সপ্তাহের জন্য কাজ বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে আরবান স্টাডি গ্রুপের সহযোগিতায় ভবনটির ঢালাওভাবে না করে সংস্কার এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট অংশ নির্বাচন করে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অজ্ঞাত কারনে একদিন কাজ বন্ধ থাকার পর আবার কাজ শুরু করা হয়। এরপর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এখনো পুরোদমে কাজ চলছে। এতে ঐতিহ্যবাহী ভবনটি তার নান্দনিক গুরুত্ব হারাতে বসেছে। সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিচালক শামিম আরা দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ইট সুরকির ভবনটি যদি বালু সিমেন্টের প্লাস্টার করা হয়। তবে ভবনটি আস্তে আস্তে ভিত্তিসহ অন্যান্য অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি আন্তর্জাতিক পুরাকীর্তি কোড মেনে ভবনটি সংস্কার করেন। জরাজীর্ণ ভবটিতে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাস সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ভবটির সামনের অংশে বালু-সিমেন্টের প্লাস্টার কাজ চলছে। পিছনে অংশে চারজন শ্রমিক ভবনের দেয়াল ঘেঁষে বেড়ে ওঠা একটি বঠ গাছ কাটছেন। ভবনের ডান দিকে কয়েকটি পরিবার টিন সেড অস্থায়ী ঘর করে বসবাস করছে। বামদিকে ভবনের লাগানো অন্য একটি ভবনে লিজ নিয়ে মুক্তি খেলা ঘরের কার্যালয়। ভবনটির উপর তলায় একটি পরিবার বসবাস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখা যায়। অরক্ষিত ও জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীরা বসবাস করছে। হলের আবাসিক ছাত্ররা বলেন, ভবনে ৪০ টির মতো কক্ষ আছে। তবে ১৫টির মতো কক্ষের ছাদ বেয়ে পানি ঢুকে। পানি, গ্যাস, টয়লেট সহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান একাধিকবার কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও সমাধান মেলেনি। শিক্ষার্থী টিটপ খান বলেন, বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জর্জরিত রয়েছে আমাদের হল তার মধ্যে অন্যতম হলো টয়লেট, ডাইনিং, গোসল খানা, রুমের ছাদ থেকে পানি পড়া। সটিক ভাবে সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন রকমে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলেই চলবে। কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম উল্লাহ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জনাকীর্ণ ভবনটি সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। আমরা সম্প্রতি হলের প্রধান ফটক, ভবনের সামনের অংশ ও অন্যন্য সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছি। হলে সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হল সংস্কারে আমাদের কাছে কেউ কোনো লিখিত প্রস্তাব জানাননি। মানববন্ধন করারও অনুমতি নেয়নি। এরপরও বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জেলা প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
×