ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতির মুখে ব্রিটিশ জেলেরা

প্রকাশিত: ২০:১৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

ক্ষতির মুখে ব্রিটিশ জেলেরা

ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে ব্রিটেন ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর ব্রিটিশ জেলেদের মাথায় হাত পড়েছে। কারণ ৩১ ডিসেম্বর ব্রিটেন পুরোপুরি ইইউ থেকে বের হয়ে গেলেও ইউরোপের অন্য দেশের জেলেরা ব্রিটিশ জলসীমায় আরও কয়েক বছর মাছ শিকার করতে পারবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের মৎস্য শিল্প ধ্বংস করতে পারে বলে দেশটির জেলে এ্যাসোশিয়েশনগুলো মনে করছে। জেলেদের পাশাপাশি ব্রিটেনের প্রথমসারির অনেক রাজনৈতিক নেতাও বরিস জনসনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না। খবর দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের। ব্রিটেনের জাতীয় জেলে সমিতি শনিবার জনসনের এ সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী আমাদের মৎস্য শিল্পকে ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারা বলেছেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইউরোপের জেলেদের বড় বড় ট্রলারগুলো আরও অন্তত পাঁচ বছর ব্রিটিশ জলসীমায় অবাধে চলাচল করবে। এতে মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস হবে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজনও বরিস জনসনের এ সিদ্ধান্তর কঠোর সমালোচনা করেছেন। শনিবার তিনি বলেন, ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকরের জন্য বরিস জনসন আমাদের মৎস্য শিল্পকে ইউরোপের হাতে তুলে দিয়েছেন। ব্রিটেনের এসএনপি পার্টির নেতা ইয়ান ব্লাকফোর্ড বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বরিস জনসন সরকার যে চুক্তি করেছে তাতে আমাদের জলসীমা ইউরোপের অন্য দেশ অবাধে ব্যবহার করতে পারবে। সিদ্ধান্তটি দেশের জন্য ভাল হয়নি। অবশ্য ব্রিটিশ সরকার ইউরোপের সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্য চুক্তির সমঝোতার প্রশংসা করছে। জনসন সরকার দাবি করছে, এতে ব্রিটেনের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে। কারণ মাছ শিকারের জন্য আগামী পাঁচ বছর ইউরোপের অন্য দেশ ব্রিটেনকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য সরকার ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর অবশেষে সমাধানে পৌঁছাল দুই পক্ষ। গত কয়েক মাসের দুই পক্ষের আলোচনায় বারবার মতবিরোধের বিষয়টি উঠে আসছিল। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ইইউ-এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে কোনভাবেই দুই পক্ষ একমত হতে পারছিল না। অবশেষে এ বিষয়ে দুই পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য, ২৪ ডিসেম্বর ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায় ব্রিটেন ও ইইউ। এরপর ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তাদের একটি ‘ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ’ চুক্তি হয়েছে। ব্রাসেলসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটি ছিল একটি দীর্ঘ ও ঝড়-ঝঞ্ঝাপূর্ণ পথ। কিন্তু আমরা একটি ভাল চুক্তিই পেয়েছি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যায় যুক্তরাজ্য। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির ভবিষ্যত বাণিজ্য সম্পর্ক কেমন হবে, তার রূপরেখা নির্ধারিত ছিল না। অবশেষে প্রায় ১ বছর পর এ ক্ষেত্রে সমাধান মিলল। একই দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় এই চুক্তির বিষয়ে মতৈক্যের কথা জানান। সঙ্গে নিজের হাস্যোজ্জ্বল একটি শেয়ার করেন। চুক্তির প্রশংসায় জনসন বলেন, এর আওতায় বিভিন্ন কোম্পানি এবং রফতানিকারকরা ইউরোপীয় বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আরও ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। বাণিজ্য আলোচক দলের রাতভর আলোচনার পর চুক্তির বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়। চুক্তির বিস্তারিত বিবরণে পুরো অংশ এখনও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। লন্ডন এবং ব্রাসেলসে চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য দু’পক্ষের হাতে ১ সপ্তাহ সময় আছে।
×