ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিজয়ী বরিস

প্রকাশিত: ২০:০৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

বিজয়ী বরিস

বরিস জনসন, যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অবশেষে বিজয়ী হলেন। বছরব্যাপী বহু দেন-দরবার, আলাপ-আলোচনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেন উভয়পক্ষের সম্মতিতে। গর্বভরে বরিস জনসন তার দেশবাসীকে বলতেই পারেন যে, এটি দেশের জন্য তার পক্ষ থেকে শুভ বড়দিন ও খ্রিস্ট নববর্ষের সেরা উপহার। এই চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে একটি সার্বভৌম দেশে পরিণত হলো। অপরদিকে পেল ইউরোপের একক বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের কারণে ৬৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য সুবিধা। তবে এর বিনিময়ে ইইউর কিছু শর্তও মানতে হবে যুক্তরাজ্যকে। যেমন- শ্রমিকের অধিকার, অভিবাসন, পরিবেশগত মান বজায় রাখা ইত্যাদি। প্রায় আড়াই হাজার পৃষ্ঠার এই বাণিজ্য চুক্তি ইউরোপের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নিশ্চয়তা দিয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য এখন থেকে বিশ্বের যে কোন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে। মূলত এর সাফল্যের ওপরই নির্ভর করছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি তথা বাণিজ্যের ভবিষ্যত। এর ফলে শুধু ব্রিটেন নয়, একই সঙ্গে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বরিস জনসন। প্রাণপণ চেষ্টা করেও জেমস ক্যামেরন, টেরেসা মে যা পারেননি তা গত জুলাইয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করে এখন সম্পাদন করলেন শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ইইউর সঙ্গে। আপাতদৃষ্টিতে উড়নচণ্ডি স্বভাবসহ একাধিক নারীর সঙ্গে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হলেও ব্রিটেনের বর্তমান করোনায় বিপর্যস্ত প্রতিকূল অবস্থা এবং অর্থনীতির দুঃসময়ে বরিসের এই বিজয় নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। লৌহমানবী হিসেবে খ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের পর গত তিন দশকে কনজারভেটিভ পার্টির এত বড় বিজয় প্রত্যক্ষ করা যায়নি। তবে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য ও সেবাখাত, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তার মতো বিষয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে আরও সময় লাগতে পারে, যা স্বাভাবিক ও সঙ্গত। একই সঙ্গে গত নির্বাচনের ফল সৃষ্টি করেছে ব্র্রিটেনের অখণ্ডতা সুরক্ষার হুমকি হিসেবে। কেননা, ইতোমধ্যেই স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে অস্থিরতা এবং উত্তেজনা প্রকট হয়ে উঠেছে ব্রেক্সিট ইস্যুতে। এখন দেখার অপেক্ষা ব্রেক্সিটকে ঘিরে দেশটিতে এই যে বিভক্তি ও বিভাজন তা কিভাবে মোকাবেলা করেন বরিস জনসন। এর জন্য তাকে ঘরে ও বাইরে প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে। ব্রেক্সিট চুক্তিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে ইইউভুক্ত দেশে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের কী হবে? অনুরূপ ব্রিটেনে বসবাসকারী ইউরোপীয়দেরও। সেসব দেশে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলো কি ধরনের সুবিধা পাবে, সেটিও একটি বিষয়। এর পাশাপাশি বের হয়ে যাওয়ার জন্য কত অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে খোয়াতে হবে দেশটিকে? সেই পরিমাণ অর্থ ব্রিটেনের দেয়ার সামর্থ্য আছে কিনা, উপেক্ষণীয় নয় সেটিও। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসে ঐতিহাসিক একটি গণভোটে সে সামান্য ব্যবধানে দেশের মানুষ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই চুক্তির প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলাদেশের ওপর তেমন পড়বে না। ইইউর বাজারে বাংলাদেশের পোশাকসহ বিবিধ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। যুক্তরাজ্যও সেই সুবিধা বহাল রাখার আশ্বাস দিয়েছে। তবে একে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে রূপ দেয়ার অবকাশ রয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উষ্ণ ও নিবিড় বিধায় যত দ্রুত এটি করা যায় ততই মঙ্গল।
×