ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আসিফ হাসান রাজু

বিজয়ের ৪৯ বছর তারুণ্যের ভাবনা

প্রকাশিত: ০০:২৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

বিজয়ের ৪৯ বছর তারুণ্যের ভাবনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার রয়েছে সুদীর্ঘ রক্তঝরা ইতিহাস। এ স্বাধীনতা কুড়িয়ে পাওয়া একমুঠো মুক্তো বা বদান্যতার উপহার নয়। এক সাগর রক্ত ও লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা। ঐক্যবদ্ধ জীবন প্রচেষ্টা, মিলন-বিরহ, আশা-নিরাশার বাস্তব অনুভূতি সংবলিত এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী অপরাজেয় এ চেতনার সঙ্গে প্রতিনিয়ত নতুন করে পরিচিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয়া এই বাংলাদেশ ২০২০ সালের মহান স্বাধীনতা দিবসে পা রাখবে ৫০ বছরে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যোজাত জাতির ৫০ বছরে অর্জন করেছে অনেক কিছুই। বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে উৎক্ষেপণ করে দেখিয়েছে দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। উত্তরণ ঘটেছে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে।সর্বশেষ জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার পৌঁছানোর সফলতাও দেখিয়েছে এই দেশ। তবে এত কিছুর পরও মুদ্রার অপর পিঠে রয়েছে অনেক না পাওয়ার গল্প। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের ৫০ বছর পর জাতি প্রকৃত অর্থে কতটুকু বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পেরেছে, সে প্রশ্নটি সঙ্গত কারণে সামনে চলে আসে। কত অমুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারী ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকে। আবার অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা আজ পর্যন্ত সুযোগ-সুবিধা দূরে থাক নিজের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিটুকুও আদায় করতে পারেননি। শুধুমাত্র ভিন্নমত পোষণের কারণে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার হিসাবটি কখন, কীভাবে জানা যাবে- সে কথাটি কেউ বলে দিতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের এতগুলো বছর ও মুক্তিযুদ্ধের নানা ইস্যুতে আমরা এখনও দ্বিধা-বিভক্ত। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আজও বিতর্কে জড়িয়ে আছি। মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতার মহান ঘোষক কে- সে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এমন কি আমাদের জাতির জনক প্রশ্নে আজও বিভক্তি ও বিতর্ক রয়ে গেছে। দুনিয়ার কোথাও তা নেই, আমাদের প্রতিবেশী ভারত কিংবা পাকিস্তানেও জাতির পিতা নিয়ে কোন বিতর্ক কোনদিন শুনিনি। কামরুল হাসান অভি সমাজকর্ম বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার হলেও এখনও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি বাক স্বাধীনতা, সেই ভোটাধিকার, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, জননিরাপত্তা আজও সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। প্রতিষ্ঠিত হয়নি মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের শাসকরা এখনও পর্যন্ত জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি। ব্যক্তি স্বার্থ ও দলীয় মতের উর্ধে উঠে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করা নেতার শাসন এখনও অধরাই রয়ে গেল। ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর দৌরাত্ম্য ও প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষা খাতে কাক্সিক্ষত অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে। দেশজুড়ে মাদকের ছড়াছড়ি তরুণ সমাজকে অন্ধাকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে। সর্বোপরি আমরা তরুণ প্রজন্ম মনে করি এবং বিশ্বাস করি স্বাধীনতার সম্পূর্ণ সুফল পেতে আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হতে হবে। ুমেহেদী হাসান শাওন নৃবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিজয়ের ৪৯তম বর্ষ উদযাপন করতে চলেছি আমরা। যে বিজয়োল্লাস প্রতি বছর এই নির্দিষ্ট সময় আমরা করি তা অর্জিত হয়েছিল ৪৯ বছর আগে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর। এই বিজয়টা সেই স্বাধীনতার, সেই মুক্তির উল্লাস। আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল সকল প্রকার অধীনতা থেকে মুক্তি। পরাধীনতার সকল শৃঙ্খল ভেঙে যে স্বাধীনতার বিজয়োল্লাস আমরা করছি সেই স্বাধীন নামক দেশে আমরা আসলে কতটা স্বাধীন, কতটা অধীনতা মুক্ত? আমরা আজ বাকস্বাধীনতায় কতটা স্বাধীন, সাম্প্রদায়িকতা থেকে কতটা মুক্ত, সামাজিক বৈষম্য থেকে কতটা মুক্ত, ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে কতটা স্বাধীন, অন্যায়-উৎপীড়ন থেকে কতটা মুক্ত? তররুণ মনে যখন এই প্রশ্নগুলো জাগে তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমার বিজয়োল্লাসের সার্থকতা! বিজয় অর্জনের ৪৯তম বছরে আমরা হয়ত অনেক খাতেই উন্নয়ন করতে পেরেছি কিন্তু সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা কতটা সফল হতে পেরেছি? প্রশ্ন রয়ে যায় তনুমনে। সেই অমিয় বাণীটি ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন’ আজও আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষিতে মিলে যায়। একটি স্বাধীন দেশে হবে গণতন্ত্রের চর্চা, থাকবে সুবিচারের নিশ্চয়তা, রবে নাগরিক অধিকারের পূর্ণতা, দেশের স্বার্থে বলবত থাকবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তবেই অর্জিত হবে স্বাধীনতা, বিজয়ের সার্থকতা। আর এই সার্থকতা অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে দেশের শাসকগোষ্ঠী এবং এই শাসকগোষ্ঠীই পারে সুশাসনের মাধ্যমে দেশের মূল কাণ্ডারী তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে। আমাদের তরুণদেরও উচিত বিজয়ের মাসে শপথ নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কাজ করা। হোসনে সাদিয়া নিতু মনোবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, ডিসেম্বর শব্দটির সঙ্গে জরিয়ে আছে আমাদের গর্ব, অহঙ্কার আর গৌরব। বিজয় শব্দটা শুনলেই আনন্দে বুক ভরে ওঠে। তবে আমাদের বিজয়ের পেছনে লুকিয়ে আছে অসংখ্য তারুণ্যের আত্মত্যাগ, যারা পাকিস্তানের অন্যায়, অত্যাচার, দুঃশাসন থেকে জাতির মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। প্রতিটি বিজয়ের পেছনে থাকে বৃহৎ সংগ্রামের ইতিহাস। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাভূত হয় পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী। যার ফলে আমরা পেয়েছি এই লাল সবুজের পতাকা। বিশ্বের বুকে আবির্ভূত হয় একটি নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল দেশের তরুণ সমাজ। মুক্তিযুদ্বের মূলনীতি ছিল সাম্য, সকলের অধিকার রক্ষা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। এই দেশের আছে নানা অর্জন, সফলতা। তবুও যেন কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা কি পেরেছি ৩০ লাখ শহীদের সম্মান রক্ষা করতে? পেরেছি কী সাধারণ মানুষে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোকে পূরণ করতে? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও আমরা আজও পারিনি পাল্টাপাল্টি রেষারেষি পরিত্যাগ করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা রক্ষার্থে কাজ করতে। রাজনৈতিক রোষানলে প্রাণ হারিয়েছে হাজারও সাধারণ জনতা। দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পূরণের ক্রান্তিলগ্নে এসেও দেশকে সাক্ষী হতে হচ্ছে হত্যা, ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার। নিরাপত্তাহীনতায় আজও ভুগছে দেশের সব স্তরের মানুষ। প্রতিষ্ঠিত হয়নি মানুষের অধিকার। তবুও বিজয়ের আনন্দ আর স্বাধীনতাকামী আত্মত্যাগী শহীদদের লক্ষ অর্জনে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার আশা ও প্রচেষ্টা থাকবে তারুণ্যের অন্তরে সর্বক্ষণিক। গভীর শ্রদ্ধা জানায় সেই সব বীরের প্রতি। আমরা সেই বীরদের আত্মত্যাগের কথা কোনদিন ভুলব না। আসিফ হাসান রাজু নৃবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমরা যারা নতুন প্রজন্ম তারা স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। জন্মের পরই পেয়েছি এক স্বাধীন মাতৃভূমি। সেই স্বাধীন দেশ হিসেবে এবার আমরা বিজয়ের ৫০তম বর্ষ উৎযাপন করব। তবে এই স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। এর পেছনে রয়েছে এক সংগ্রামী আত্মত্যাগ। যার সূচনা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয় আর পূর্ণতা পায় মহান স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে। রাতের অন্ধকারে পাক বাহিনীদের নিরীহ মানুষের ওপর চালানো নির্যাতন, চারপাশে ভয় আর আর্তনাদ, নিরীহ শিশু আর মা-বোনের ওপর অত্যাচার। সেই অত্যাচার থেকে সবাইকে মুক্তি দিতেই দেশের আপামর জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধ করতে, তাদের সঙ্গে যোগ দেন নির্যাতিত নারীরাও, তাদের ত্যাগের বিনিময় এ আমরা পেলাম স্বাধীন এ বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে ইতিহাস চাপা পড়ছে নতুন প্রজন্ম এর অনেকেই আমাদের ইতিহাস ভাল করে জানেন না। তাদের সবার জানা উচিত, উচিত দেশকে ভালবাসা। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও এখনও দেশ থেকে দুর্নীতি, অন্যায়, ঘুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণসহ নানা অনিয়মসহ প্রতিষ্ঠিত হয়নি গণমানুষের অধিকার। প্রত্যাশা করি আজকের তারুণ্য পারে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে এসবের হাত থেকে রক্ষা করে দেশের প্রকৃত স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে।
×