ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থায়নের নতুন উৎস ॥ ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’ বিক্রি শুরু কাল থেকে

প্রকাশিত: ২২:৫২, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

অর্থায়নের নতুন উৎস ॥ ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’ বিক্রি শুরু কাল থেকে

রহিম শেখ ॥ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ‘বন্ড’ বিক্রি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের জন্য তিন ধরনের বন্ড। বিশ্বব্যাপী করোনা সঙ্কটের মধ্যেও বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা বন্ডে ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বন্ডের পাশাপাশি স্থানীয়দের মতো প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যও ব্যাংকগুলোতে মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তিতে সঞ্চয় স্কিম চালু করা হয়েছে। প্রবাসীদের এমন বিনিয়োগে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো ইসলামী বন্ড ‘সুকুকে’র নিলাম করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বন্ড বিক্রি করে সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য দুই দফায় ৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে সরকার। যে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আগামীকাল সোমবার থেকে এই বন্ড কেনা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন থেকে সুকুক হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস। এই বন্ড বিক্রির অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পাঁচ ধরনের ট্রেজারি বন্ড ও দুই ধরনের কর্পোরেট বন্ড রয়েছে। এগুলোর মেয়াদ ২ থেকে ২০ বছর। এর আগে ১৯৮৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাত্র তিনটি কর্পোরেট বন্ড ও ১৪ ডিবেঞ্চার ইস্যু করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় বন্ডটি ইস্যু করা হয়েছিল ২০০৭ সালে। এটির নাম ছিল, ‘আইবিবিএল মুদারাবা পারপিচুয়াল বন্ড’; যার পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি টাকা (প্রায় ৪ কোটি ডলার)। এটি ছিল একটি ইসলামিক বন্ড। এই বন্ডে শুধু মুনাফা দেয়া হতো এবং নীতি অনুযায়ী কোন ধরনের সুদের হার ছিল না। বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২২১টি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত থাকলেও সেগুলোর লেনদেন হয় না। তালিকাভুক্ত বন্ডগুলোর লেনদেনে কার্যকর কোন ব্যবস্থাও এখন পর্যন্ত বিএসইসির কোন কমিশন নেয়নি। ফলে বন্ড বাজারটি শুধু রয়ে গেছে নীতি নির্ধারকদের প্রতিশ্রুতি আর মুখের বুলিতে। বর্তমানে বাজারে ইসলামী ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকার একটি পারপিচুয়াল বন্ড রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি দ্য সিটি, যমুনা, ওয়ান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট এ চার ব্যাংকের ৪০০ কোটি করে মোট ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পারপিচুয়াল বন্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু গত অর্থবছর শেষে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকার। যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ। এটি গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতে সরকারের ঋণ কিছুটা বেড়েছে। এজন্য ব্যাংক নির্ভরতা কমাতে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রির ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। যাতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সহজে গবর্নমেন্ট সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে করে ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের ঋণের চাপ কমবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)’র এক গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে বড় অংকের অর্থ আসে বন্ড থেকে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড। অর্থনীতির বিপর্যয় ঠেকাতে করোনা মহামারীতেও বন্ড বিক্রি কার্যক্রম বাড়িয়েছে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। অর্থনীতিতে বন্ড বিক্রির পরিমাণ এখন ৬০ হাজার কোটি ইউরোর পরিবর্তে ১ দশমিক তিন পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় ইসিবি। সংস্থাটি জানিয়েছে, বন্ড বিক্রি কার্যক্রম চলবে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। অথচ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। মূলত নীতিমালার অভাবে দেশে এখনও বন্ড মার্কেট তেমন সচল হয়নি, সীমিত আকারে বাজারে চালু রয়েছে। এগুলো লেনদেন হয় প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে। সাধারণের হাতে বন্ড আসার সুযোগ নেই। ইস্যুকৃত অধিকাংশ বন্ড ব্যাংক কর্তৃক ক্রয় ও ধারণ করা হয়। কিছুসংখ্যক ব্যক্তি এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতেও কিছু বন্ড রয়েছে। ফলে এরাই বাংলাদেশের বন্ড বাজারের প্রধান ক্রেতা। জানতে চাইলে বিআইবিএম’র অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘সরকারের তাগিদ অবকাঠামো খাতে প্রচুর বিনিয়োগের। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চাইলে ব্যাংকের যে ডিপোজিট আছে, তার মেয়াদ স্বল্পকালীন। সেই অর্থ দিয়ে আমরা কখনই এসব ক্ষেত্রে বেশি করে বিনিয়োগ করতে পারব না। এক্ষেত্রে আমরা যদি বন্ড ইস্যু করে দীর্ঘকালীন ফান্ড গ্রহণ করি, সেটা আমরা চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারব।’ প্রথম ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’-এর নিলাম আগামীকাল ॥ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ‘সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’-এর সম্পদের বিপরীতে ছাড়া হচ্ছে সুকুক বন্ড। শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী বন্ড সাধারণত ‘সুকুক’ নামে পরিচিত। সুকুক একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেয়ার আইনী দলিল। বাংলাদেশ ব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা করে দুই দফায় বিনিয়োগকারীদের কাছে সুকুকের সার্টিফিকেট বিক্রি করবে। সুকুক ইসলামী বন্ড কীভাবে চলবে, এ নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীদের টাকায় গড়ে উঠবে এই প্রকল্প। সরকার এই প্রকল্প ভাড়া নেবে। এই ভাড়ার টাকায় মুনাফা হিসেবে পাবেন বিনিয়োগকারীরা। আর মেয়াদ শেষে পুরো প্রকল্প কিনে বিনিয়োগকারীদের মূল টাকা ফেরত দেবে সরকার। এভাবে প্রথম এই বন্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিভিন্ন দেশেও এই পদ্ধতিতে ইসলামী বন্ড ছাড়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন থেকে সুকুক হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস, যে অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক (ইজারা সুকুক) ইস্যুর নিলাম ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এ নিলামের মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদী চার হাজার কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের সুকুক ইস্যু করা হবে। নিলামে দেশী-বিদেশী যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অবস্থিত যে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিড দাখিল করতে পারবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজের জন্য বা যে কোন গ্রাহক ১০ হাজার টাকার গুণিতক পরিমাণে সুকুকের আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে বিড দাখিল করতে পারবে। বিডে কৃতকার্য বিডারদের তাদের আবেদনের বিপরীতে বরাদ্দকৃত সুকুকের পরিমাণ একই দিনে ই-মেলের মাধ্যমে জানানো হবে। বন্ডের বিপরীতে বছরে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ হারে মুনাফা দেবে সরকার। তবে মুনাফা বিতরণ হবে প্রতি ছয় মাস অন্তর। ইসলামী এ বন্ডের হার নির্দিষ্ট, কারণ এটি ইজারা (ভাড়া) সুকুক। শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী বন্ড সাধারণত ‘সুকুক’ নামে পরিচিত। সুকুক একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেয়ার আইনী দলিল। এখন থেকে সুকুক হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস, যে অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। প্রচলিত বন্ড ও সুকুক বন্ডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিই হচ্ছে বন্ড। এতে ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময় ও সুদের হার উল্লেখ থাকে। আর সুকুক হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সনদ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান। সুকুক ছাড়ার দিক থেকে বর্তমানে মালয়েশিয়া বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সুকুক প্রচলিত। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে বন্ড মার্কেট বড় হচ্ছে না ॥ বন্ড মার্কেট নিয়ে দেশে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। আর এ কারণে বন্ড মার্কেট বড় হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোম্পানিগুলো মূলধন সংগ্রহে ব্যাংক ঋণের ওপর অতি বেশি নির্ভরতার কারণে এই বাজার বড় হয়নি। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নে বন্ড মার্কেটের বিকল্প আর কিছুই নেই। টাকার অঙ্কে বন্ডের ইউনিট ছোট ও পুঁজিবাজারে লেনদেনযোগ্য হলে বিপুল অর্থের বিনিয়োগ আসবে বন্ড মার্কেটে। কারণ বন্ড হচ্ছে এক ধরনের ঋণচুক্তিপত্র। যার মাধ্যমে কোন কোম্পানি মূলধন ঘাটতি পূরণে অন্যপক্ষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বে পুঁজিবাজারের পাশাপাশি রয়েছে বন্ড মার্কেটের শক্ত অবস্থান। বড় প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সরকারও বন্ড ছাড়ে। আর বন্ডে নির্ধারিত হারে সুদ পাওয়া যায় বলে সাধারণ শেয়ারের তুলনায় এতে বিনিয়োগ ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই কোন বন্ড মার্কেট সেভাবে গড়ে ওঠেনি। যেসব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার বিক্রির অনুমতি দিচ্ছি তারা কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। তবে এই ঋণের প্রয়োজন হতো না, যদি একই সঙ্গে বন্ড ইস্যু করার কথা বলা হতো।’ বন্ড বিনিয়োগে ব্যাংকে আলাদা বুথ স্থাপনের নির্দেশ ॥ ট্রেজারি বিল ও বন্ড সহজে বিনিয়োগ ও দ্রুত সেবা প্রদানের সুবিধার্থে প্রত্যেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘গবর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ বিনিয়োগ উইন্ডো’ নামের আলাদা বুথ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে এ নির্দেশনা দিল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ ডেস্ক স্থাপন করতে বলা হয়েছে। চলতি বছরের ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান (যেমনÑ বীমা কোম্পানি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদিসহ) অনিবাসী ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগণ সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে পারে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। তাছাড়া, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তথ্য গ্রহণপূর্বক বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সরকারী সিকিউরিটিজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্ল্যাটফর্মে লেনদেন শুরু হলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। প্রবাসীদের বন্ডে বিনিয়োগ বাড়ছে ॥ প্রবাসীদের তিন বন্ডে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এতে বড় হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। একজন প্রবাসী কী পরিমাণ বন্ড কিনতে পারবেন, এ নিয়ে কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে প্রবাসী বন্ডে বেশির ভাগ বিনিয়োগই হাতে গোনা কয়েকজনের। এসব বন্ড পাওয়া যায় বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউস, দেশী ব্যাংকের বিদেশী কোন শাখা ও বাংলাদেশের ব্যাংক শাখায়। আবার এসব বন্ডে বিপরীতে দেশী ব্যাংক থেকে ঋণও পাওয়া যায়। বিনিয়োগকৃত অর্থ চাইলে আবার বিদেশেও ফেরত নেয়া যায়। এসব বন্ডের বিনিয়োগ করে সিআইপি সুবিধা পাওয়া যায়। আবার এই আয়ে আবার সম্পূূর্ণ করমুক্ত সুবিধাও মেলে। সঞ্চয়পত্র অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড পাঁচ বছর মেয়াদী। এ বন্ডে ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা তোলার সুযোগ রয়েছে। প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াতে সিআইপি মর্যাদা দেয়া হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এক্ষেত্রে ৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেই এই সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া এই আয়ের পুরোটাই করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে প্রবাসীরা বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াবেন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রবাসী ছাড়াও এই বন্ড কিনতে পারেন বিদেশে লিয়েনে কর্মরত বাংলাদেশী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসে কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা বৈদেশিক মুদ্রায় বেতন-ভাতা পান। মুনাফার হার বেশি হওয়ায় প্রবাসে অবস্থান করা বেশির ভাগই এ বন্ড ক্রয় করছেন। ব্যাংক থেকেও এনআরবি বন্ড কিনতে পারছেন গ্রাহকরা ॥ এতদিন ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা এনআরবি বন্ডের মুনাফা উত্তোলন ও নগদায়নের সুযোগ পেলেও নতুন করে কেনার পথ বন্ধ ছিল। তবে এখন থেকে গ্রাহকরা ব্যাংকের শাখা থেকে কিনতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য চালু করা সব ধরনের এনআরবি বন্ড। এনআরবি বন্ড সম্পর্কিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিটেন্সের বিপরীতে প্রবাসীদের বিনিয়োগ এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে এনআরবি বন্ডসমূহের যাবতীয় লেনদেন কার্যক্রম (বিক্রয়/পুনঃবিনিয়োগ, নগদায়ন, কুপন প্রদান) চালু থাকবে। রেমিটেন্স বিনিয়োগে আনতে সঞ্চয় স্কিম চালু ॥ প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থের একটি অংশ দেশের উৎপাদনশীল খাতে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ‘সঞ্চয় স্কিম’ চালুর সুযোগ করে দিয়ে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেয়া হল। এখন থেকে ব্যাংকগুলোতে মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিক কিস্তিভিত্তিক এই সঞ্চয় স্কিম খুলতে পারবেন প্রবাসীরা। সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ এক বছর বা তার বেশি হতে পারবে। এই সঞ্চয় স্কিমের স্থিতি জামানত রেখে ঋণ নেয়ারও সুযোগ পাবেন প্রবাসীরা। বিশেষ প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে জমানো টাকা বিদেশেও নেয়া যাবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে জানানো হয়েছে, দেশে বসবাসকারী স্থায়ী বাসিন্দাদের মতো প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যও ব্যাংকগুলোতে মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তিভিত্তিক সঞ্চয় স্কিম চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে। বৈধ চ্যানেলে পাঠানো অর্থের বিপরীতে এ ধরনের হিসাব খোলা যাবে।
×