ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পছন্দের নেতাকে ক্ষমতায় বসাতে চায় উভয় দেশ

নেপালে রাজনৈতিক সঙ্কট ॥ প্রভাব বিস্তারে মরিয়া ভারত-চীন

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

নেপালে রাজনৈতিক সঙ্কট ॥ প্রভাব বিস্তারে মরিয়া ভারত-চীন

হিমালয় কন্যা নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশটিতে প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত ও চীন। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন ঠেকাতেও তৎপর বেজিং। নেপালের অনেক রাজনীতিবিদের সঙ্গে বেজিংয়ের সখ্যতার বিষয়টি সবার জানা। দীর্ঘদিন ধরেই চীন প্রশাসন নেপালকে কাছে ঘনিষ্ঠবন্ধুর মর্যাদা দিয়ে আসছে। সম্প্রতি কাঠমাণ্ডু-বেজিং প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়েছে। পাশাপাশি ভারতও বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপালকে নিজেদের কব্জায় রাখার চেষ্টা করছে। খবর দ্য ফার্স্টপোস্ট অনলাইনের। সম্প্রতি নেপাল ভারতবিরোধী একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তোলপাড় তোলে। ভারতের দাবিকৃত কিছু জায়গা নিজেদের দাবি করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে কাঠমাণ্ডু। কিন্তু ভারত বরাবর নেপালকে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করছে। কারণ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি নেপালে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হলে নেপালে নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য কাজ করছে উভয় দেশ। চীন নিজেদের পছন্দের নেতাকে নেপালের রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চাইছে। আবার ভারতও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। পরমাণু সমৃদ্ধ দুই বৃহৎ দেশ নেপালকে আশ্বস্ত করছে, তারা কেউই নেপালের শত্রু নয়। চীন ইতোমধ্যে কাঠমাণ্ডুতে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূত ইয়ো-ইয়ানকিকে দিয়ে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে কাজে লাগিয়েছে। চীনের এ ঝানু কূটনীতিক ইতোমধ্যে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারি ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সঙ্গে বৈঠক করেন। অপরদিকে ভারতও নেপালের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। চীনের এই ঝানু কূটনীতিক একই সঙ্গে নেপালের কারিশম্যাটিক বাম নেতা পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ডর সঙ্গেও বৈঠক করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অলির সঙ্গে তার মতপার্থক্য ঘোচাতে পদক্ষেপ নিয়েছেন। পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ড বর্তমানে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি এনসিপির (মাওবাদী) সিনিয়র নেতা এবং নেপালের রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ২০০৮-০৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। নেপালে আসন্ন নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাক্স ও লেনিনবাদী) ও প্রচণ্ডর নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি এনসিপির (মাওবাদী) যৌথভাবে অংশ নেয়ার অহ্বান জানান। সম্প্রতি পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন কেপি শর্মা অলি। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা পুষ্পকমল দাহাল ও মাধবকুমার নেপাল এই পদক্ষেপকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেয়ায় বিষয়টি সুপ্রীমকোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে যায়। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির উভয় গোষ্ঠীই এখন দলের কর্তৃত্ব দাবি করছে। অলির জায়গায় প্রচণ্ডকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করা হয়। প্রচণ্ড সমর্থকরা অলিকে দলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে মাধবকুমার নেপালকে পদে বসায়। পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার জন্য অলির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির প্রচণ্ড সমর্থকরা। প্রচণ্ড বলেন, নতুন সরকার গড়াই আমার প্রথম লক্ষ্য। এ নিয়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান। প্রচণ্ড সমর্থকরা দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৪৬ সদস্যের মধ্যে ৩১৩ জনই তাদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, গত একই দিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকেন অলি। মূলত ইয়ানকির সফল কূটনীতির কারণে উভয় দেশ সম্প্রতি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়ে ফেং গত মাসে নেপাল সফরের সময় এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পার্লামেন্ট ভেঙ্গে ভোটের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টে ১২টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রধান বিচারপতি চোলেন্দ্র এসজেবি রানা মামলাগুলোকে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। মামলাগুলোর শুনানি শুরু হয়েছে।
×