ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশে শুদ্ধি অভিযান

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

পুলিশে শুদ্ধি অভিযান

বাংলাদেশ পুলিশে আবারও শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। এর জন্য একেবারে উচ্চপর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে নিয়মিত নজরদারি ও কঠোর মনিটরিং। অবশ্য পুলিশে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা ছিল বরাবরই। মাঝেমধ্যে তাতে শৈথিল্য দেখা গেলে পুলিশের মধ্যেও ঘুষ-দুর্নীতি-আর্থিক অনিয়ম, লেনদেন মাদক-নারী কেলেঙ্কারি এমনকি হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধানত গণমাধ্যমের কল্যাণে বিভাগীয় মামলাসহ তদন্ত, সাময়িক বরখাস্ত, বদলি এমনকি চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটেছে। সাম্প্রতিককালে কক্সবাজারে সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী মেজর (অব) সিনহা হত্যা মামলার চার্জশীটও দেয়া হয়েছে, যেখানে আসামি করা হয়েছে ওসি প্রদীপসহ পুলিশের কয়েকজনকে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেরিয়ে এসেছে টেকনাফ-কক্সবাজার পুলিশের ইয়াবাসহ মাদক বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির খবরাখবর। একে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও শুরু হয়েছে ডোপ টেস্ট। মাদক সম্পৃক্ততায় সম্প্রতি তালিকাভুক্ত ৫৮ পুলিশের মধ্যে ইতোমধ্যে চাকরি গেছে কয়েকজনের। বাকিদেরও যাওয়ার পথে। এখন প্রস্তুতি চলছে অফিসারদের ডোপ টেস্টের। বর্তমান পুলিশ প্রধানের ভাষ্য, পুলিশে অপরাধ-দুর্নীতি করে পার পাবে না কেউ। পুলিশকে হতে হবে জনবান্ধব, জনগণের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে হবে ‘চেঞ্জ মেকার’ হিসেবে। পাশাপাশি সার্বিক কল্যাণ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। নিকট অতীতে ঘুষ-দুর্নীতি-অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডিআইজি মিজান, ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকসহ অনেকেরই দিন কাটছে কারান্তরালে। পুলিশের এই শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই ঢাকার কোতোয়ালি থানার ওসিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কিছুদিন আগেও এমনটি ভাবাও যেত না। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে স্বচ্ছতা, নীতি নৈতিকতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় এসবই ইতিবাচক অগ্রগতি। কিছুদিন আগে এক আদেশেই কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক হাজার ৭৫ জন কনস্টেবলকে বদলির ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে অস্বাভাবিক মনে হলেও প্রত্যাশিত ছিল। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর এসপিসহ সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। কিছুদিন পরই বদলি করা হয় ৩৪ ইন্সপেক্টর এবং এসআই ও এএসআইসহ ২৬৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের নবনিযুক্ত ডিআইজি বলেছেন, আরও বদলির সম্ভাবনা রয়েছে। কক্সবাজার পুলিশকে ঢেলে সাজানো হবে। উল্লেখ্য, টেকনাফ-কক্সবাজার হলো দেশে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন মাদক বিশেষ করে ইয়াবা পাচারের প্রায় অবাধ প্রবেশ পথ। সরকার সব রকম মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও পুলিশের দুর্নীতি-অনিয়ম-অসাধুতার কারণে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কিছুতেই। কাজেই ব্যাপক স্তরে পুলিশের এই রদবদল প্রত্যাশিত ছিল। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যের অপরাধ, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগে কারও বিচারও সাজা হয় না- এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। সম্প্রতি তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৩ সালে পাসকৃত নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে দায়েরকৃত একটি মামলার রায়ে পল্লবী থানার সঙ্গে তৎকালে সংযুক্ত ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজন পুলিশকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে পুলিশের দুই সোর্সকে দেয়া হয় অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের কারাদণ্ড। অবশ্য দণ্ডিত আসামিদের দুজন এখনও পলাতক। আইনের চোখে সবাই যে সমান- এই রায়ের মধ্য দিয়ে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সর্বোপরি এতে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই পুলিশ বাহিনী। সেই প্রেক্ষাপটে দেশের পুলিশ বাহিনীকে সর্বদাই আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব হিসেবে অবতীর্ণ হতে হবে। জনসাধারণের সমস্যাকে দেখতে হবে আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়ে পুলিশকে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বাধিক।
×