স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পল্লীতে এক প্রবাসী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার সকালে ধর্ষণের শিকার ওই নারী বীরগঞ্জ থানায় ধর্ষণের মামলাটি দায়ের করেন। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সরকার বীরগঞ্জ উপজেলার ৬ নং নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলার সৈয়দপুর (কল্যাণী) এলাকার মৃত তছলিম উদ্দীনের ছেলে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়ার পর বাবার বাড়িতে অবস্থানকালে ২০১৫ সালে ঈদ উপলক্ষে চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সরকার সরকারী চাল দেয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন। তার কথামতো ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেখানকার একটি পুরাতন ভবনে নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন চেয়ারম্যান। ধর্ষণের পর বাইরে ঘটনার বিষয়ে না বলার জন্য হুমকি দেয় এবং কাউকে জানালে তার পরিবারের সকলকে মেরে লাশ গুম করে দিবে বলে জানায় চেয়ারম্যান। এভাবে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই নারীকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখেন চেয়ারম্যান। এরপর ওই নারী কাজের জন্য সৌদি আরবে চলে যান। বিদেশে থাকা অবস্থায় চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলতো। ২ বছর পর সম্প্রতি ওই নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত আসলে তার বাবা-মা একই উপজেলার এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। দেশে ফেরত আসা এবং অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের খবর শুনে চেয়ারম্যান খালেক সরকার মোবাইল ফোনে ওই নারীকে নানা ধরনের হুমকি প্রদান করেন। পরে ভিডিওগুলো ফেরত দেয়ার কথা বলে দেখা করতে বলেন। তার কথামতো গত মঙ্গলবার ২২ ডিসেম্বর দুপুর ২টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়ায় চেয়ারম্যানের ইটভাঁটির পাশে মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আব্দুর রশিদের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ ও তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকে। এ সময় ওই নারী প্রাণপণ চেষ্টা করে তার মোবাইলের মেমোরি খুলে নেয় এবং চেঁচামেচি করলে চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি পরিবারকে জানালে পরিবারের লোকজন তাকে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেয় এবং তিনি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পর পর দুই বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছি। তাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে একটি কুচক্রী মহল আমাকে সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে। এটি সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম জানান, মামলা তদন্ত কাজ এবং আসামিকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে খালেক সরকারের বিচারের দাবিতে পৌর শহরের বিজয় চত্বর এলাকায় বীরগঞ্জবাসীর ব্যানারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
