স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুরি ও মারধরের অভিযোগে নানির করা মামলায় পুরান ঢাকার অবুঝ দুই শিশুর মাকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বাবাকে কেন জামিন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত। নানির দায়ের করা মামলায় কারাগারে যেতে হয় আড়াই ও সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট দুই শিশুর মা-বাবাকে। এরপর থেকেই অবুঝ দুই শিশুর চোখে ছিল অঝোর কান্না। নিম্ন আদালতে তাদের বাবা-মায়ের জামিন হয়নি। গণমাধ্যমে প্রচারিত অবুঝ শিশুদের সে কান্না মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘আদালতের বারান্দায় দুই শিশুর কান্না, বিচারের বাণী কাঁদল নিভৃতে শিরোনামে’ প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ প্রদান করে। এছাড়াও জামিনের আদেশটি দ্রুত ই-মেইল ও ফ্যাক্সে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আদালতের বারান্দায় দুই শিশুর কান্না, বিচারের বাণী কাঁদল নিভৃতে শিরোনামে মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদন প্রচার করে একটি টিভি চ্যানেল। শুক্রবার থেকে নানির করা মামলায় ১৪ শিকের ভেতর আটকে আছেন মা, সঙ্গে বাবাও, আর সেদিন থেকেই বন্ধ দুই ভাই-বোনের নাওয়া-খাওয়া। মঙ্গলবার সারাদিন তাই ঢাকার সিজেএম কোর্টে অবস্থিত আদালতে ঘুরেছে এ দুই শিশু। সঙ্গে ছিল না কোন আত্মীয়স্বজন। প্রতিবেশীরাই তাদের দেখাশোনা করছে এখন। চুরি ও মারধরের মামলাটি নিজের মেয়ে ওয়াসিমা ও জামাই তোফায়েলের নামে করেছেন মামলার বাদী ৬০ বছরের মোমেনা বেগম। এ প্রতিবেদনটি সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদ, শিশির মনির ও কুমার দেবুল দে হাই কোর্টের নজরে আনেন।
আদেশের পর এ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, আদালত শুনানি নিয়ে শিশু দুটির মাকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি শিশু দুটির বাবার জামিনের বিষয়টি বিচারিক আদালতকে বিবেচনা করতে বলেছে। হাইকোর্টের আদেশের সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঢাকার সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুই শিশুর মাকে মুক্তি দিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ এ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে জানান, আদালত শুনানি নিয়ে শিশু দুটির মাকে ছয় মাসের জামিন দিয়ে রুল জারি করেছে। আমার জানামতে, ইতোমধ্যে আদেশ নিম্ন আদালতে পৌঁছে গেছে। হয়ত শিশু দুটির মা আজকে মুক্তি পেতে পারেন।
চ্যানেলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু দুটির নানি মোমেনা বেগম পারিবারিক কলহের জেরে নিজের মেয়ে ওয়াসিমা বেগম ও জামাতা তোফায়েলের বিরুদ্ধে চুরি ও মারধরের অভিযোগে বংশাল থানায় মামলা করেন। এই মামলায় তারা গ্রেফতার হয়ে গত শুক্রবার থেকে কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় আড়াই বছরের শিশু ইয়াছিন ও সাড়ে তিন বছরের টুম্পাকে দেখার কেউ নেই। মঙ্গলবার শিশু দুটিকে নিয়ে জামিনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হন প্রতিবেশীরা। কিন্তু আদালত শিশুদের বাবা-মাকে জামিন দেয়নি বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রবীন্দ্রনাথ তার প্রশ্ন কবিতায় লিখেছিলেন বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
