ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও বেপরোয়া ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

আরও বেপরোয়া ট্রাম্প

হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে দণ্ডপ্রাপ্ত ১৫ জনকে মুক্তি দিয়েছেন। এর মধ্যে দুজন সাবেক আইনপ্রণেতা। মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে দুজন ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের প্রমাণ রয়েছে। নিজের দীর্ঘ তালিকা থেকে অপরাধ ও দণ্ড থেকে মুক্তি দেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে সবদিক খোলা রাখছেন ট্রাম্প। ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়ে ক্ষমতায় আরও চার বছরের জন্য থেকে যাওয়ার কথাও ট্রাম্প চালু রাখছেন জোরালোভাবে। মঙ্গলবার এক টুইট বার্তা ও ফেসবুক পোস্টে নিজের রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের ওপর চড়াও হন এ প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসি ও এপির। ওই পোস্টে ট্রাম্প বলেন, রিপাবলিকান পার্টিকে ভুলে গেলে চলবে না যে তার সাহায্য ছাড়া সিনেটে দলের আট আসন কম হতো। মার্কিন সিনেটে এখন পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার কৃতিত্ব তার নিজের বলেই দাবি করছেন ট্রাম্প। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আছেন। এদিন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন। ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত ট্রাম্প সংবিধানের ক্ষমতাবলে যে কোন অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন, দণ্ড মওকুফ করতে পারেন বা দণ্ড কমিয়ে আনতে পারেন। মার্কিন সংবিধান প্রেসিডেন্টকে এক্ষেত্রে অবাধ ক্ষমতা দিয়েছে। ট্রাম্পের দৃষ্টি এখন ৬ জানুয়ারির দিকে। ইলেক্টোরাল কলেজ থেকে প্রাপ্ত ভোট কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে গ্রহণ করার সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে এ দিনটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে এসব সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতায় কখনও বড় ধরনের অঘটন ঘটেনি। এবারের পরিস্থিতি ট্রাম্পের কারণে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে উঠেছে। এদিকে মার্কিন কংগ্রেস ৯০ হাজার কোটি ডলারের যে করোনাভাইরাস সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে তাতে সংশোধনী এনে প্রত্যেক মার্কিনীকে প্রণোদনা বাবদ ২ হাজার ডলার করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবারে টুইটারে দেয়া অপর এক ভিডিও বার্তায় তিনি কংগ্রেস সদস্যদেরকে প্রণোদনা বিল থেকে ‘অযথা ও অপ্রয়োজনীয় অনুচ্ছেদগুলো’ ছেঁটে ফেলারও আহ্বান জানান। ট্রাম্প ৯০ হাজার কোটি ডলারের এ প্যাকেজকে ‘অপমানজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, একে ডাকা হচ্ছে কোভিড-১৯ সহায়তা বিল, অথচ এর সঙ্গে কোভিডের তেমন কোন যোগসূত্রই নেই। করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের সহায়তায় কংগ্রেসে পাস হওয়া প্রণোদনা প্যাকেজটিতে বেশিরভাগ নাগরিককে এককালীন ৬শ’ ডলার দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সোমবার রাতে বিলটি কংগ্রেসে অনুমোদিত হওয়ার পরপরই ট্রাম্প এতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন বলে ধরে নেয়া হলেও মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প বলেন, এ বিলে অন্য দেশের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রণোদনা বিলের অর্থ কেবল মার্কিনীদেরই পাওয়া উচিত। ট্রাম্প বলেন, বিলে ৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার আছে কম্বোডিয়াকে সহায়তায়, ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার আছে মিয়ানমারের জন্য, ১৩০ কোটি ডলার মিসর ও তাদের সেনা বাহিনীর জন্য, যারা কিনা ওই অর্থ দিয়ে বিশেষ করে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম কিনবে, আড়াই কোটি ডলার রাখা পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও জেন্ডার বিষয়ক কর্মসূচীতে, ৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেয়া হচ্ছে বেলিজ, কোস্টারিকা, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ও পানামাকে যা নিয়ে ট্রাম্প ঘোর আপত্তি জানান। ট্রাম্প যদি এ বিলে স্বাক্ষর না করেন, কিংবা ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেন তাহলে ২৯ ডিসেম্বর থেকে মার্কিন সরকার অচল হয়ে পড়তে পারে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা মঙ্গলবার ১ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
×