ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব পেল পাওয়ার সেল

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব পেল পাওয়ার সেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি ডিপ সিপোর্টে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে কনসালটেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। কিন্তু সেই কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিদ্যুত বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা পাওয়ার সেলকে। তাই এ নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন এবং রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, জ্বালানি সচিব গত ১৯ নবেম্বর বিপিসিকে এ প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে একটি চিঠি দেয়। তাতে এ জাতীয় কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পেট্রোবাংলা বা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিকে (আরপিজিসিএল) দায়িত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিপিসি সে পরামর্শ না মেনে সরাসরি প্রস্তাব পাঠায় পাওয়ার সেলকে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব দেয়ার। বিপিসির চিঠি পাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই পাওয়ার সেলকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। সাধারণত বিদ্যুত বিভাগের কোন প্রজেক্টে কনসালটেন্ট নিয়োগে পাওয়ার সেলের অভিজ্ঞতা এবং মতামত কাজে লাগানো হয়ে থাকে। অন্যদিকে জ্বালানি বিভাগের কোন প্রজেক্টে কনসালটেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা বা হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মতামত চাওয়া হয়ে থাকে। কারণ জ্বালানি সংক্রান্ত যে কোন প্রজেক্টে তাদেরই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারাই বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ বিদ্যুত ও জ্বালানি সংক্রান্ত টেকনিক্যাল বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা। তাই যারা বিদ্যুত নিয়ে কাজ করেন তারা সাধারণত প্রাথমিক জ্বালানি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেন না। একইভাবে যারা জ্বালানি নিয়ে কাজ করেন তারাও বিদ্যুত সংক্রান্ত টেকনিক্যাল বিষয়ে মতামত দিতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই পাওয়ার সেলকে এ দায়িত্ব দেয়ায় তা নিয়ে রহস্যময়তার সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি বিষয়ে অনভিজ্ঞ পাওয়ার সেলকে কেন এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা নিয়ে কেউই কথা বলতে চাইছেন না। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, প্রধানত মন্ত্রণালয়ের আগ্রহেই বিপিসি পাওয়ার সেলের নাম প্রস্তাব করেছে। কিন্তু পাওয়ার সেলের জ্বালানি বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকায় এলপিজি টার্মিনালের জন্য তারা কোন দক্ষ কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে সক্ষম হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা তরল জ্বালানি নিয়ে কাজ করেন যারা তারা মনে করছেন পাওয়ার সেলের পরিবর্তে জ্বালানি বিভাগের অধীন কোন অভিজ্ঞ সংস্থারই এ দায়িত্ব পাওয়া উচিত। তা হলেই সম্পূর্ণ নতুন ক্ষেত্র হিসেবে গভীর সমুদ্রে এলপিজি টার্মিনালের কনসালটেন্ট নিয়োগে সঠিক ও অভিজ্ঞ সংস্থাকে পাওয়া যাবে। মূলত এ কনসালটেন্টই এ প্রজেক্টের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই, বেসরকারী সংস্থা বাছাই এবং তা বাস্তবায়নে তদারকির কাজ করবে। সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে একটি ডেডিকেটেড এলপিজি টার্মিনাল স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করে ইতোমধ্যে তিনটি জাপানী কোম্পানির নেতৃত্বে তিনটি পৃথক কনসোর্টিয়াম স্ব স্ব প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এ প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নের জন্যই কনসালটেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ির বহুমুখী ব্যবহারের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখানে গড়ে তোলা হবে তিনটি পৃথক টার্মিনাল। এগুলো হচ্ছে কয়লা আমদানির জন্য কয়লা টার্মিনাল, এলএনজি আমদানির জন্য এলএনজি টার্মিনাল এবং এলপিজি আমদানির জন্য এলপিজি টার্মিনাল। জাপানী উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এবং এর টার্মিনালগুলো নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জাপান সফরে গেলে জাপান সরকার এইসব প্রকল্পে অতিরিক্ত ৩.২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। পাশাপাশি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি আদায় করে যে এই টার্মিনাল প্রকল্পগুলো জাপানী কোম্পানির বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ সরকার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতেএই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয় জ্বালানি বিভাগের অধীন রাষ্ট্রীয় তেল আমদানিকারক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে । এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাপানী কোম্পানি মিতসুই এর নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব পেশ করে। সরকারী সূত্রে জানা গেছে, মিতসুই গ্রুপের সঙ্গে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ আলোচনার পর জ্বালানি বিভাগ যখন একটি সম্ভাব্য চুক্তির জন্য চূড়ান্ত পর্যায় উপনীত হয়, ঠিক তখনই আশ্চর্যজনকভাবে দৃশ্যপটে উপস্থিত হয় জাপানের আরেকটি সংস্থা মারুবেণী কর্পোরেশন। তারা ভিটল নামে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা একটি প্রস্তাব পেশ করে। মারুবেণী বা তার সহযোগী ভিটল আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি সরবরাহ করলেও কখনও এ জাতীয় এলপিজির গভীর সমুদ্র টার্মিনাল নির্মাণ বা পরিচালনা করেনি। সম্প্রতি সুমিতোমো নামে আরেকটি জাপানী কোম্পানিও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ফলে এখন তিনটি জাপানী সংস্থাই এই প্রকল্পটি পাওয়ার জন্য এক চরম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিপিসির প্রথমে সম্ভাব্যতা যাচাই করার কাজ হাতে নেয়া উচিত। এবং এরপর একটি সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া বা উদ্যোক্তা নির্বাচন নীতিমালা তৈরি করে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয়া উচিত।
×