ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাটুয়াটুলী থেকে হত্যাকারী গ্রেফতার

গোপালগঞ্জে নিজের ভাইকে ইউপি সদস্য বানাতে পরিকল্পিত হত্যা

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০

গোপালগঞ্জে নিজের ভাইকে ইউপি সদস্য বানাতে পরিকল্পিত হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজের ভাইকে ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী বানাতে বর্তমান ইউপি সদস্য হামিদুল হককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে রবিউল শরীফ। ঘটনার পর সিআইডি তদন্ত করতে গিয়ে এই তথ্য বেরিয়ে আসে। হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পর সোমবার রাতে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী এলাকা থেকে রবিউল শরীফকে (৫৭) গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইমাম হোসেন এসব তথ্য জানান। অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইমাম হোসেন জানান, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ৭টার দিকে গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য (কাউন্সিলর) হামিদুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর গত ১৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-১৩) দায়ের করা হয়। ঘটনার পরপরই সিআইডি তদন্ত শুরু করে প্রথমে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) এর মালিক ও চালক আমির মোল্লাকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করে। পরে আমির মোল্লার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি রবিউল শরীফকে গ্রেফতারের জন্য সিআইডি যশোর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। অবশেষে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, কারিগরি তথ্য, রূপসা ব্রিজে টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এবং মনিরের (যশোর) পেট্রোল পাম্পের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মূল আসামি রবি শরীফ গত ১১ ডিসেম্বর তার পূর্ব পরিচিত যশোরবাসী চশমার দোকানের মালিক আমির মোল্লাকে মোটরসাইকেল যোগে যশোর থেকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। মোটরসাইকেল (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) নিয়ে যশোর সদর হাসপাতালের সামনে আনুমানিক দেড়টার সময় তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় রবিউল শরীফ কালো ব্লেজার, জিন্স প্যান্ট, কালো পিকআপ এবং সাদা সার্জিক্যাল মাস্ক পরিহিত ছিলেন। সেখান থেকে তারা দুপুর ২টা ৫ মিনিটের সময় যশোরের মনির উদ্দিন পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে যান। সেখানে তারা এক হাজার টাকা সমমূল্যের তেল নেন। রবি শরীফ ওই টাকা পরিশোধ করে। তিনি বলেন, এরপর গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে কালনাঘাটের একটি চায়ের দোকানে চা পান করে গোপালপুর বাজারে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেন। এ সময় মূল আসামি মোটরসাইকেল থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলেন। গোপিনাথপুরে হামিদুল হক এলাকার পরিচিত ভ্যানচালক সাগরকে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করে তার মায়ের জন্য ওষুধ আনতে যান। এরমধ্যে তিনি স্থানীয় মিজান মেম্বার ও পলাশ শেখের সঙ্গে গল্প করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভ্যানযোগে হাইস্কুল গেটের সামনে আসেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোপিনাথপুর বাজার থেকে একই মোটরসাইকেলযোগে রবি শরীফসহ গোপিনাথপুর হাইস্কুলের গেটের সামনে রাস্তার পূর্ব পাশে পৌঁছলে মোটরসাইকেল দিয়ে ভ্যান আটকে দেয়। এরপর মোটরসাইকেলে বসা রবি শরীফ ভ্যানে বসা হামিদুল হক মেম্বারকে অত্যন্ত কাছ থেকে পিস্তল দিয়ে বুকের বাম পাশে চারটি গুলি করেন। সঙ্গে সঙ্গে হামিদুল হক রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার পর ভ্যানচালক সাগর হামিদুল হককে হাসপাতালে নিয়ে যান। হত্যার পর রবি শরীফ মোটরসাইকেল চালক আমির মোল্লাকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, যশোর যাওয়ার পথে রূপসা ব্রিজের টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরায় তাদের অবস্থানের বিষয়টি আনুমানিক রাত ৮টায় ধরা পড়ে।
×