ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ এয়ারসহ ৬ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চালাতে চায় ঢাকায়

প্রকাশিত: ২২:১২, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

ব্রিটিশ এয়ারসহ ৬ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চালাতে চায় ঢাকায়

আজাদ সুলায়মান ॥ করোনা মহামারীর মাঝে বিশ্বজুড়ে যখন এভিয়েশন ব্যবসায় ধস নেমেছে, তখন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজসহ বিশ্বের শীর্ষ ৬ এয়ারলাইন্স ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ ছাড়াও অন্য এয়ারলাইন্সগুলো হলো- ইরানের মহা এয়ার, ইরাকের ইরাক এয়ার, সৌদিয়ার নাস, ইন্দোনেশিয়ার শ্রীজয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার একটি এয়ারলাইন্স। চলমান শীত মৌসুম শেষে আগামী গ্রীষ্মের শুরুতেই এদের মধ্যে সবার আগে ইরানের মহা এয়ার ফ্লাইট চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে বিশ্বের অনেক দেশেরই এয়ারলাইন্সের নজর রয়েছে। এখানে ফ্লাইট চালু করে সবাই বাণিজ্যিকভাবে সুবিধা পায় বলেই করোনার মাঝেও তাদের আগ্রহের কমতি নেই। বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে- ঢাকা এখন অন্যতম নির্ভরযোগ্য গন্তব্য। বেবিচক জানিয়েছে, এক সময়ের নামী-দামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ঢাকায় নিয়মিত ফ্লাইট অপারেট করলেও নিরাপত্তাসহ নানা জটিলতার প্রশ্ন তুলে তারা জানিয়ে দেয়- আর ফ্লাইট চালাতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু গত এক দশকে বর্তমান সরকারের আমলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিবেশের প্রত্যাশিত উন্নতি ঘটায় এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় ব্রিটিশ এয়ার ফের ফ্লাইট চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চলতি মাসেই ব্রিটিশ এয়ারের প্রতিনিধি দল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপির সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় ফ্লাইট চালুর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। এতে বিমান প্রতিমন্ত্রীও তাদের স্বাগত জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। বেবিচক জানিয়েছে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে কোন ধরনের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন নেই। তাদের সঙ্গে আগে থেকেই এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট ও অন্যান্য চুক্তি রয়েছে। এখন তারা যখন চাইবে ফ্লাইট চালাতে পারবে। উল্লেখ্য, প্রায় এক যুগ আগে লোকসানের মুখে পড়ে ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছিলো ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আবেদনটি বর্তমানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ মহিবুল হক দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালানোর জন্য আবেদন করেছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে। বেবিচকের মতে- ৩৪ বছর নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার পর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ লোকসানের কারণে ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বন্ধের পর এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ ও টার্কিস এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। ব্রিটিশ এয়ারের পর ইরানের মহান এয়ার এ দৌড়ে এগিয়ে আছে। ইরান ও ইরাকের সঙ্গে আগে থেকেই এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট রয়েছে। এখন শুধু বিশেষ অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ইরানের মহান এয়ার ইতোমধ্যে ঢাকায় তাদের জিএসএ নিয়োগ দিয়েছে। এখন আরও কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যে কোন সময় ফ্লাইট চালাতে পারে। বেবিচকের ধারণা আগামী মার্চের আগেই মহান এয়ার ঢাকায় ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। একইভাবে ইরাকও ঢাকায় ফ্লাইট চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন জানিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে এক সময় ঢাকা থেকে সরাসরি বিমান ও বাগদাদ থেকে ইরাক এয়ারের ফ্লাইট চলাচল করত। আশির দশকের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে ইরাক ইরান ও ইরাক কুয়েতের ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে ঢাকাসহ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময়ের পুনর্গঠনের দরুণ দেশ দুটোর অবস্থা এখন অনেকটাই নিরাপদ ও সুসংহত হওয়ায় ফের ঢাকায় সরাসরি ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে তারা। জানা গেছে, ইরাকের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান প্রতিষ্ঠান ইরাকী এয়ারওয়েজ খুব শীঘ্রই ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী। সম্প্রতি এয়ারলাইন্সটি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি চেয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে। বেবিচকের চেয়ারারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান বলেন, ইরাকী এয়ারওয়েজ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। তাদের জানানো হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে। একইভাবে ইন্দোনেশিয়ার শ্রী জয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তারা অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে কোন চিঠি দেয়নি এখনও। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, ঢাকা পৃথিবীর শীর্ষ এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে একটি লোভনীয় গন্তব্য। কারণ এখানে যেভাবে যাত্রী বৃদ্ধি হচ্ছে তা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি। এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোতে যেখানে যাত্রীর বৃদ্ধির হার গড়ে ৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের হার ১০ শতাংশ। ছোট্ট একটা দেশে এত বিপুল পরিমাণ যাত্রীর নিরাপদ ঘাটিতে এয়ারলাইন্সগুলো তো আসতেই চাইবে। এখন আমাদের উচিত এটাকে আরও এভিয়েশনবান্ধব করা। যেমন বেবিচকের এরোনটিক্যালসহ অন্যান্য চার্জ যদি কমিয়ে আনা হয় সেটার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
×