ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম চেম্বারে মতবিনিময় সভায় ভারতীয় হাইকমিশনার দোরাইস্বামী

বৃহত্তর অর্থনীতি হিসেবে উদিত হচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

বৃহত্তর অর্থনীতি হিসেবে উদিত হচ্ছে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশ ক্রমেই বৃহত্তর অর্থনীতি হিসেবে উদিত হচ্ছে। এ অঞ্চল ২৫০ কোটি মানুষের বাজার, যেখানে চট্টগ্রাম হবে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ এ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার। বাণিজ্য, সামুদ্রিক ও উৎপাদন খাত চট্টগ্রামে অগ্রগণ্য। প্রতিবেশীদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের ওপর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। তাই সেবা, উৎপাদন ইত্যাদি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বকে টেকসই করতে হবে। রবিবার চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে মতবিনিময়কালে কথাগুলো বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। ভারতীয় হাইকমিশনার তার বক্তব্যে দীর্ঘমেয়াদীর পাশাপাশি দুই থেকে তিন বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি সেক্টর যেমন লজিস্টিকস, বন্দর, অবকাঠামো, যোগাযোগ ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ এমনকি ভুটান, নেপালসহ উপকৃত হতে পারে যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই লাভবান হবে। তিনি ব্যবসায়ী নির্বাহীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি খাতে মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। এছাড়া কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও এপিআই পার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ কার্যকর হবে। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা, বে-টার্মিনালে অর্থায়নসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ রয়েছে। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ভারতের জনগণ ও সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান। তিনি উভয় দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রদূত ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন। এছাড়া সাগর ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে মালামাল পরিবহন, রেলপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থল বন্দরসমূহে জটিলতাসমূহ সহজীকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য খালাসের গতি ত্বরান্বিত করা, ইলেক্ট্রনিক ডাটা বিনিময়ের মাধ্যমে স্থলবন্দরসমূহকে আরও বেশি ডিজিটালাইজ করা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে সহায়তাকরণ, ভারত-বাংলাদেশ বার্ষিক বিজনেস কনফারেন্স আয়োজন, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে যৌথভাবে ল্যাবরেটরি বা টেস্টিং সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেন চেম্বার সভাপতি। তিনি ধর্মীয় পর্যটনের মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করেন। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এসএম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসআরএমের এমডি আমীর আলী হুসেইন, উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা ও ডাঃ মুনাল মাহবুব, বেইস টেক্সটাইল লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার শাহাদাত শোভন, গ্রিন গ্রেইন গ্রুপ’র এমডি শাকিল আহমেদ তানভীর, ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়ামের এমডি রাশিখ মাহমুদ ও মার্কস বাংলাদেশ লিমিটেডের তানিম শাহরিয়ার। এ সময় চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী, রাষ্ট্রদূতের পত্নী সংগীতা দোরাইস্বামী, দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি দীপ্তি আলংঘট, চেম্বার পরিচালক মো. আবদুল মান্নান সোহেল ও মো. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। চেম্বার পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব দুদেশের জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় উভয় দেশের পণ্য নিয়ে ‘ট্রেড শো’ আয়োজনের প্রস্তাব করেন। চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ পেট্রাপোলে তিন চার দিন পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক অপেক্ষমাণ থাকতে হয় উল্লেখ করে উভয়পক্ষের শুল্ক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকায় আমদানিকৃত তুলা ও অন্যান্য গার্মেন্ট কাঁচামাল সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ওয়্যারহাউস নির্মাণের আহ্বান জানান। চেম্বার পরিচালক নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে পণ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি ডেডিকেটেড ট্রেড পোর্টাল চালু করার অনুরোধ জানান। চেম্বার পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বা এডিআর চালু করার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্সের সঙ্গে ভারতীয় প্রথম সারির ম্যানেজমেন্ট স্কুলের যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়ী নির্বাহী উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণের আহ্বান জানান।
×