ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে শিল্পীদের ব্যতিক্রমী কর্মসূচী আজ

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে শিল্পীদের ব্যতিক্রমী কর্মসূচী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও মৌলবাদী আক্রমণের শিকার হলো ভাস্কর্য। জাতির পিতার ভাস্কর্যের পর বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শহীদ বাঘা যতীনের ভাস্কর্য। এ অবস্থায় চিহ্নিত অপশিক্তর বিরুদ্ধে চলমান কর্মসূচী আরও বেগবান করার উদ্যোগ নিয়েছে শিল্পী সমাজ। এর অংশ হিসেবে আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত হচ্ছেন চারুশিল্পীরা। উন্মুক্ত স্থানে ছবি আঁকবেন তারা। প্রতীকী ভাস্কর্য গড়বেন। ব্যতিক্রমী আয়োজন থেকে উগ্রবাদী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হবে। ভাস্কর্য ভাঙ্গার নির্দেশদাতাদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের বরেণ্য চারুশিল্পীরা মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ।’ ঐতিহাসিক সেই ব্যানারে আবারও সমবেত হয়েছেন শিল্পীরা। বিভিন্ন ধারার শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আজকের প্রতিবাদ কর্মসূচীতে যোগ দেবেন তারা। আয়োজকরা জানান, কর্মসূচী শুরু হবে বেলা ১১টায়। চলবে দুপুর ২ টা পর্যন্ত। পুরোটা সময় ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন শিল্পীরা। চলবে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন। থাকবে কথা কবিতা গান। সব মাধ্যমেই স্বাধীনতাবিরোধী নব্য রাজাকারদের প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হবে। ভাস্কর্য ভাংচুরের নির্দেশদাতা মুমিনুল বাবুনগরীদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরবেন শিল্পীরা। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের পক্ষে চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান বলেন, ভাস্কর্যবিরোধীরা আসলে পশ্চাৎপদ ধর্মান্ধ উগ্র গোষ্ঠী। ১৯৭১ সালে এদের পরাজিত করেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু পরাজয়ের গ্লানি ওরা ভুলতে পারেনি। কিছুকাল পরপরই নানা নামে পরিচয়ে সামনে আসার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলেই ঘাড়ে চড়ে বসতে চায়। ভাস্কর্য ইস্যুতেও তাই হয়েছে। আশকারা পেলে মৌলবাদীরা শধু ভাস্কর্য নয়, বাঙালীর সব অর্জন গিলে খেতে চাইবে। এটা হতে দেয়া যায় না। তাই আমরা শিল্পীরা মাঠে নামছি। স্বাধীন দেশে ভাস্কর্য ভাঙ্গা ও শিল্পমাধ্যমটি সম্পর্কে মৌলবাদী বিষোধগার সিনিয়র শিল্পীদেরও খুবই মর্মাহত করেছে। তারাও যোগ দিচ্ছেন প্রতিবাদে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বলেন, দেশটা তো মগের মুল্লুক হয়ে যায়নি। এতকাল ধরে ভাস্কর্য চর্চা করছি আমরা। ছবি আঁকছি। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের উদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে তুলে ধরা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ও শহীদদের আকাঙ্খার কথা বলা হচ্ছে। এ কারণেই স্বাধীনতাবিরোধীদের গাত্রদাহ। আমরা তা মেনে নিতে পারি না। বাঙালীর শিল্প সংস্কৃতির চর্চা ও অগ্রগতিকে ওরা ভয় পাই। ভাস্কর্যের ভাষা ঠিকই বুঝে। তাই শিল্পের প্রতি আঘাতের জবাব শিল্পের ভাষায়ই দেয়া হবে বলে জানান তিনি। চারুশিল্পীদের আয়োজন হলেও আজকের কর্মসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
×