ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাটগ্রামে দুই বীর উত্তমসহ ছয় মুক্তিযোদ্ধার অবহেলিত কবর!

একাত্তরে ‘মুক্তিবাহিনীর ক্যান্টমেন্ট’ প্রজন্মের কাছে অজানা

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

একাত্তরে ‘মুক্তিবাহিনীর ক্যান্টমেন্ট’ প্রজন্মের কাছে অজানা

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন ॥ লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের জমগ্রামের নিভৃত পল্লীর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরশায়িত আছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ দুই বীরোত্তমসহ ছয় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরা সবই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানীদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে শহীদ হন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে এই দুই বীর শহীদ এবং তাদের কবর পড়ে রয়েছে সম্পূর্ণ অযত্ন-অবহেলায়। অথচ এই সুদীর্ঘ সময়ে এখনও সরকারীভাবে এইসব বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর উত্তমদের স্মৃতি সংরক্ষণে এখানে সরকারী-বেসরকারীভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গ্রামটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামটি তখন মুক্তিবাহিনীর ক্যান্টমেন্ট ও অস্থায়ী থানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ইতিহাসের এত বড় সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও গ্রামটির তেমন স্বীকৃতি-পরিচিতি নেই বললেই চলে! কিন্তু কোথাও তাদের সেই গৌরবগাথা ও বীরত্বপূর্ণ স্বীকৃতির বিন্দুমাত্র স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত নেই। দুর্ভাগা গ্রামটি আজও অবহেলিত। ফলে গ্রামের নতুন প্রজন্মের কাছে,সাধারণ মানুষের কাছে গ্রামটির ইতিহাস আজও প্রায় অজানা। তাই অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে এই গ্রামের অবদান আজ ভুলতে বসেছে। শুধু তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার মুক্তচিন্তার মানুষ, বীর বাঙালী পাকি-দর্শনের বিপরীতে গিয়ে এবং হানাদার পাকিস্তানী ও তাদের দোসরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কী অমূল্য ও বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল, তা কখনও ভোলার নয়..! প্রায় অর্ধশত বছর পর হলেও এখন জোর দাবি উঠেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষে জমগ্রাম নামটি পরিবর্তন করে এর নতুন নাম ‘স্বাধীনবাংলা গ্রাম’ অথবা ‘বীর উত্তম গ্রাম’ রাখা হোক। অথবা একে ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রতিরোধ দুর্গ’গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করার। এমনকি এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বীর উত্তমদের নামে রাখারও দাবি উঠেছে। সানিয়াজান নদীর পাড়টিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে এখানে একটি ‘মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনবাংলা স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণেরও দাবি উঠেছে। জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস জমগ্রামে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্বাধীন বাংলা সরকারের থানা হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল। এখানে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যান্টমেন্ট গড়ে তুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধে দুই শহীদ বীর উত্তম হলেন সুবেদার মেজর খোন্দকার ফজলুল রহমান (বীর উত্তম) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিপাহী আনোয়ার হোসেন (বীর উত্তম)। এই শহীদ বীর উত্তমসহ জমগ্রাম চত্বরে ছয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে যুদ্ধ চলাকালেই দাফন করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক সত্য যে যুদ্ধ শেষে আর কখনও এদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়নি রাষ্ট্রীয়ভাবে। এখনও ছায়াঘেরা সুশীতল গ্রামে চির নিদ্্রায় নিবিড়ভাবে ঘুমিয়ে আসেন এই বীর শহীদগণ। দেশের মানুষ খোঁজ নেয়নি তাতে কী? প্রকৃতি ঠিকই তার খোঁজ রেখেছে। শহীদের কবরের মাথার পাশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মেছে চামেলী ফুলের গাছ। কবরের পাশে ছায়া দিচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া একটি পাউয়া (স্থানীয় ভাষায়) গাছ। কবরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। করেছে শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি। জমগ্রাম জামে মসজিদের ঈমাম মাওঃ মাইদুল ইসলাম জানান, তিনি ৪ বছর ধরে এখানে এই মসজিদে ইমামতি করছেন। এখানে শহীদ বীর উত্তমের কবর আছে দুই বছর আগে শনাক্ত হয়। তার সম্পর্কে জানতে পারে। তবে শহীদের কবরগুলো ’৭১ সালেই পাকা করে রাখা হয়েছিল। দুটি কবরে শহীদের নাম, শহীদ হওয়ার তারিখ ও ঠিকানাও লেখা ছিল। মোট ছয়জন শহীদের কবর এখানে চিহ্নিত করে রাখা ছিল। কেউ খোঁজ খবর করেনি। কবরগুলো ঘিরে ঝোপ জঙ্গল তৈরি হয়ে ছিল। এইটা মসজিদ চত্বরে গ্রামবাসীদের একটি পুরনো গোরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। হঠাৎ দুবছর পূর্বে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার সময় গ্রামবাসীদের নজরে আসে এখানে দুইজন শহীদ বীর উত্তমের কবর। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের নিকট পৌঁছায়। কিন্তু সরকারীভাবে তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। গত মার্চ মাসে সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অব. লেঃ মোঃ মোতাহার হোসেন এমপির ছেলে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহামুদুল হাসান সোহাগ তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহীদ দুই বীর উত্তম ও ছয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরগুলো পুনরায় নির্মাণ ও সংরক্ষণ করেন। ২৬ মার্চে তিনি এসে এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি গ্রামবাসীদের ও মসজিদ কমিটিকে জানিয়ে যান। এই পর্যন্তই। এছাড়া কোন দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে এখানে কাউকে আসতে দেখা যায়নি। ইমাম সাহেব বলেন, প্রতিদিন এখানে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদে আসেন। যেসব মুসল্লি এবাদত করতে মসজিদে প্রবেশ করেন। মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে চোখে পড়বে মসজিদ চত্বরের ডান পাশে শহীদদের কবর। শুভ্র (সাদা) রঙের বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে কবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছিল। জমগ্রামটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলার মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই গ্রামটি পাটগ্রাম ৬ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টরের মধ্যে একমাত্র ৬নং সেক্টরটিই স্বাধীন বাংলার মুক্তাঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের নিজের ভূখণ্ডে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। তারা প্রায় সকলেই এই স্বাধীন অঞ্চলে এসেছিলেন। সেই সময় স্বাধীন বাংলার সরকার প্রধানগণ এই মুক্তাঞ্চলে এসে ছিলেন। স্বাধীনতার ৪৯ বছর গ্রামটি তিমিরেই থেকে গেছে। কোন প্রচারেই আসেনি। দেশী-বিদেশী কোন মিডিয়াই এই গ্রামের মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পর্কে তেমন প্রচারে আসেনি। ফলে তেমন গুরুত্বও পায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার পর যে ক’টি সরকার এসেছে, সবাই মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ স্থানগুলো সংরক্ষণে তেমন ভূমিকা রাখেনি। তাদের আচরণ ছিল রহস্যজনক। তারা ব্যক্তিকেন্দ্রিক তাদের নেতাদের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। দেশে সামরিক শাসন জারি করা জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হন। তিনিও একজন বীর উত্তম। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জেনারেল জিয়াও আলোচ্য দুই শহীদ বীর উত্তম সম্পর্কে কোন ভূমিকা রাখেন নাই। এমনকি, তার সরকার তখন এখানকার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কতটা ভূমিকা রেখেছে তা সবার জানা। এ দেশে আশ্চর্য হলেও সত্য ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতা, শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে ও মুক্তিযোদ্ধারা ছিল অবহেলিত। বাঙালীর সবচেয়ে বড় ঐক্য ও অর্জন মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। তার ধারাবাহিকতায় দেশের দুই শহীদ বীর উত্তম থেকে হয়ে যান বিস্মৃত। শহীদ বীর উত্তম দুইজনের কবর চিহ্নিত ছিল না স্বাধীনতার ৪৯ বছর। অথচ এই কবরের পাশেই স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী থানা ছিল। ছিল মুক্তিবাহিনীর ক্যান্টেমেন্ট। গত ২০১৮ সালের মার্চ মাসে এই দুই বীর উত্তমসহ ছয় জন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর শনাক্ত হয়। এই প্রতিবেদক নানা সূত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিষয় নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে দুই শহীদ বীর উত্তমের কবরের সন্ধান পেয়ে জান। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে এই বীর উত্তমের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন নিশ্চিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, এই দুই শহীদ বীর উত্তম মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইপিআর এর কর্মরত ছিলেন। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাটের ৬ নং সেক্টরের অধীনে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। এখানে যাদের সমাহিত করা হয়েছে এদের ৬ জনের পরিচয় মিলেছে। এরা হলেন, সীমান্তরক্ষীবাহিনীর সদস্য শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিপাহী আনোয়ার হোসেন (বীর উত্তম) তৎকালীন ইপিআর সদস্য (বর্তমানে স্বাধীন দেশের বিজিবি)। শহীদ বীর উত্তম সিপাহী আনোয়ার হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার, কসবা থানার, গোপীনাতপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রেকর্ডপত্রে তার সঠিক জন্ম তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাবার নাম মৃত আব্দুল হামিদ ভুঁইয়া। ১৯৭১ সালে বড়খাতায় পাকিস্তানীদের সঙ্গে একটি প্রতিরোধ যুদ্ধে সম্মুখ সমরে ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৬ জুলাই শহীদ হন। তার বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে বীর উত্তম খেতাব দিয়ে সামরিক কায়দায় সহযোদ্ধা সতীর্থরা তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যায় দাফন করেন জমগ্রাম মসজিদ চত্বরে (যুদ্ধকালীন সময়ে অস্থায়ী থানা ক্যাম্পাসের মসজিদ)। সেই সময় জমগ্রাম ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মুক্তাঞ্চলের একটি অংশ বিশেষ গ্রাম। প্রত্যক্ষদর্শী জমগ্রামের বাসিন্দা মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৬৩) জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। পেশা মৌসুমি ব্যবসায়ী ও কৃষক। জমগ্রাম জামে মসজিদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ২০ বছর ধরে এই মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন আমার বয়স কম ছিল। তাই মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্পে ভারতে নিয়ে যায়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ধরনের সহায়তা করেছি। গুলি বাক্স, রাইফেল, খাবার জল গ্রামের মূল ক্যাম্প হতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ দুর্গ মাটির বাঙ্কারে পৌঁছে দিতাম। ছোট ছিলাম কত উৎসাহ নিয়ে কাজ করতাম। শুধু আমি নই। তখনকার দিনে আমার বয়সী অনেক ছেলে এমন সহায়তা করেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা বলতেন, তোদেরও হয়তো একদিন যুদ্ধে যেতে হতে পারে। একটু বড় হও। বর্তমান জমগ্রাম মডেল প্রাথমিক সরকারী বিদ্যালয়টি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী থানা হিসেবে কার্যক্রম চালু ছিল। বর্তমান বাউরা হাট-বাজার এই অস্থায়ী থানা চত্বরে সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও সোমবার বসতো। হাটের মানুষের ও মালামালের নিরাপত্তা দিতেন মুক্তিযোদ্ধাগণ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানীদের নির্যাতন নির্মমতা এই জমগ্রামের মানুষকে সইতে হয়নি। আমার গ্রামটি মুক্তাঞ্চলের মধ্যে পড়েছিল। গ্রামের প্রবেশ মুখে মুক্তিযোদ্ধাগণ বাংকার খুঁড়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সার্বক্ষণিক পাহারায় ছিল। তখনকার দিনে এখানে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কদর মাস্টার, জিল্লুর রহমান, বনমালি শাহ (বাদু বাবু)সহ অনেকেই ছিলেন। তৎকালীন বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সচিব (ইউনিয়ন পরিষদের সেক্রেটারি) হামির উদ্দিন জমগ্রাম মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত অস্থায়ী থানার ওসি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। এই থানার অদুরে বাউরা বাজারের মরহুম ডাঃ আতা মিয়া বাড়ি (বর্তমান ঝুনু মিয়ার বাড়ি) অত্র এলাকার সব চাইতে বিশাল বাড়ি ছিল। এই বাড়িটি স্বাধীন বাংলা সরকারের নিজস্ব বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিবাহিনীর ক্যান্টম্যান্ট হিসেবে ব্যবহার হয়ে ছিল। এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যান্টমেন্ট ছিল। পল্লী চিকিৎসক ডাঃ আতা মিয়া এই বাড়িটি মুক্তিবাহিনীর ক্যান্টম্যান্ট করে দিতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বাড়ির সকল কে ভারতে আত্মীয় স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ছিলেন। অনেককে গ্রামের অন্য স্বজনদের বাড়িতে রেখে ছিলেন। অনেকে ভারতের রিফিউজি ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই বাড়ির পেছনে আধা কিমি দূরে বাংলাদেশের মাটিতে নবীনগর দাখিল মাদ্রাসার মাঠে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈনিকগণ মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে অপর একটি ক্যাম্প করেছিল। বড়খাতা হাতীবান্ধা রমনিগঞ্জ খেরু চেয়ারম্যানের বাড়ি সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্স লাইন ও বাঙ্কার ছিল। কয়েক হাজার গজ দূরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর আর্মির সদস্যরাও বাঙ্কার করে অবস্থান নিয়েছিল। সম্মুখ সমরে সব সময় মুক্তিবাহিনী লড়াই করেছে। ভারতীয় মিত্রবাহিনী ছিল দ্বিতীয় লাইনের ডিফেন্স ফোর্স। তবে তারাও প্রয়োজনে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করতে মুহূর্তে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্র রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি ডিফেন্স লাইন ছিল হাতীবান্ধা বড়খাতা ফকিরপাড়া (বর্তমান এটি পৃথক ফকিরপাড়া ইউনিয়ন) তৎকালীন সাবডিভিশন প্রশাসক মিয়াজান আলীর বাসায়। মিয়াজান গাইবান্ধা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা সাব ডিভিশনের ডিবিশনাল প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশেরও জেলা প্রশাসক হিসেবে বেশ কয়টি জেলায় কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে শেষ জীবনে স্বাধীনদের সরকারের সচিব হয়ে ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের স্বর্ণপদক পেয়ে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন।
×