ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উখিয়া ও টেকনাফে ঝুঁকিতে জনজীবন

প্রকাশিত: ২০:১৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

উখিয়া ও টেকনাফে ঝুঁকিতে জনজীবন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ হিসেবে জ্বালানি বিতরণে কিছু এনজিও আশ্রয় শিবিরে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ দিয়ে চলেছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী উখিয়া- টেকনাফ এলাকার যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান খুলে বসেছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা অল্পতে তুষ্ট না হয়ে ফুরিয়ে যাবার আগেই গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহ করে নিয়ে থাকে এনজিও থেকে। গ্যাসসহ ওই সিলিন্ডার অল্প দামে বিক্রি করে দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে নগদ টাকা। ওসব ব্যবসায়ী খালি সিলিন্ডার দিয়ে এনজিও থেকে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার পাবার সুযোগ করে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অল্প দামে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার কিনে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গাড়িভর্তি করে কক্সবাজার শহরে নিয়ে যায়। সেখানে ডিলার এবং গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতাদের দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে। তারা ভোক্তার কাছ থেকে নিচ্ছে গলাকাটা মূল্য। রোহিঙ্গারা সিলিন্ডারভর্তি গ্যাস বিক্রি করে থাকে মাত্র ৪ শ’ টাকায়। তা কক্সবাজারে এনে দুর্নীতিবাজ ডিলার ও দোকানিরা বিক্রি করে থাকে ৮ শ’ টাকা করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ ও উখিয়ার হাটবাজার, রাস্তাঘাট সড়কের আশেপাশে, গ্রামগঞ্জের মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন ও গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। কোন রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গ্যাস ও পেট্রোল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য বিক্রির ফলে অগ্নিকাণ্ডজনিত ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উখিয়া সদর, কুতুপালং, কোর্টবাজার, বালুখালী, ঘুমধুম, থাইংখালী, পালংখালী, ভালুকিয়া, সোনারপাড়া, ইনানী, মরিচ্যা ও পাতাবাড়িসহ প্রত্যন্ত জনপদে দেখা গেছে ১ লিটার ওজনের খালি প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল-অকটেন বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের আদলে বিক্রি করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন প্রকার দাহ্য পদার্থ। জ¦ালানি তেল সরবরাহকারী হিসেবে নিবন্ধন নেই তাদের। নীতিমালা অনুযায়ী যেসব দোকানে বা প্রতিষ্ঠানে জ¦ালানি তেল, গ্যাস, পেট্রোল, অকটেন বিক্রি করা হবে, তাদের ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ সুরক্ষা রাখতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার মজুদে মজবুত ও ঝুঁকিবিহীন সংরক্ষণাগারও থাকতে হবে। এছাড়া তাদের নিতে হবে জ¦ালানি অধিদফতরের অনুমোদন। কিন্তু ক্ষমতার দাপট ও প্রভাব খাটিয়ে সমানতালে গ্যাস বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তারা। উখিয়া সদর স্টেশন, ভালুকিয়া, থাইংখালী, বালুখালী, পালংখালী ও মরিচ্যা পাতাবাড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতল ভর্তি পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে মুদি দোকানে। পাশে রয়েছে খাদ্যপণ্য ও হোটেল-রেস্টুরেন্টের দোকান। উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, উখিয়ায় কাজ শুরু হওয়ার পর অনেকেই তাদের ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স গ্রহণ করছে। যে জন্য তারা অনুমোদনহীন দাহ্য পদার্থ বিক্রয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেনি। তবে তিনি বলেন, এরকম খোলামেলা দাহ্য পদার্থ বিক্রিতে যে কোন সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আমিমুল এহসান খান বলেন, উখিয়ায় যে সমস্ত অনুমোদনহীন দাহ্য পদার্থ বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এর বিরুদ্ধে অচিরেই ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বিশ্বের বিশাল শরণার্থী ক্যাম্প বাংলাদেশে। আর তা হচ্ছে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প। একটি মাত্র ক্যাম্পে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয়স্থল। এছাড়াও বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, কেরুনতলী, চাকমারকুল, পুঠিবনিয়া, লেদা, নয়াপাড়া মুচনি ও শামলাপুর ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ঝুপড়ি কক্ষে রোহিঙ্গারা অহরহ গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান খুলেছে। প্রশাসন অভিযানে গেলে রোহিঙ্গারা একযোগে তেড়ে আসে। তাই সীমিতসংখ্যক পুলিশ সদস্য অভিযানে যেতে সাহস কওে না বলে জানা গেছে।
×