ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মনোবৈকল্যের আখ্যান- মন্ত্রাসের ১৪ দিনব্যাপী প্রদর্শনী শুরু আজ

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

মনোবৈকল্যের আখ্যান- মন্ত্রাসের ১৪ দিনব্যাপী প্রদর্শনী শুরু আজ

মনোয়ার হোসেন ॥ মঞ্চজুড়ে ভেসে বেড়ায় বিষাদের সুর। বিষণ্ন সেই শব্দধ্বনির মাঝে সামাজিক অনাচারের চিত্র তুলে ধরা প্রতীকী চরিত্রগুলো ছুটতে থাকে। এরই মাঝে আবির্ভূত হয় মনোবৈকল্যের শিকার এক তরুণ লেখক। যাপিত জীবনের তীব্র যাতনার কথাগুলো উচ্চারিত হয় তার কণ্ঠেÑ এ জীবন আমি যাপন করতে চাই না। আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। আমি বেঁচে থাকতে চাই না। এমন হতাশাময় সংলাপের মাঝেই মঞ্চের আয়নায় উঁকি দেয় অকালে ঝরে পড়া অনেক মুখচ্ছবি। জঙ্গী হামলায় নিহত বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন, আগুনে পুড়িয়ে মারা মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের মুখগুলো মনে করিয়ে দেয় সময়ের আগেই শেষ তাদের জীবনের অধ্যায়। আর এসব হত্যাকাণ্ডসহ নানা সামাজিক অসঙ্গতির জবাব চায় মানসিক ভারসাম্যহীন চরিত্রটি। দর্শকের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেয় প্রশ্নের পর প্রশ্ন। নির্দিষ্ট কোন ছকের বাইরে চলা এমনই গল্পের নাট ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’। ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিয়েটার কালেকটিভ ধারার নাট্যদল স্পর্ধা প্রযোজিত নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে আজ শুক্রবার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে। এরপর একই ভেন্যুতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যন্ত চলবে টানা চৌদ্দ দিনের প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ১৭টি প্রদর্শনী। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রযোজনাটির বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যের নাট্যকার সারা কেইন রচিত একটি পোস্ট-মডার্ন নাটক ‘ফোর পয়েন্ট ফোর এইট : সাইকোসিস’। এই নাটকটিই বাংলা ভাষায় রূপান্তরের মাধ্যমে মঞ্চে আনছে স্পর্র্ধা। অনুবাদ করেছেন শাহমান মাইশান ও শরীফ সিরাজ। পরিকল্পনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন আলোচিত নাট্য নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ। একটি অনন্য কাব্যশৈলীতে নির্মিত হয়েছে ৪.৪৮ মন্ত্রাস নামের নাটকটি। যেখানে রৈখিক আখ্যানকে প্রত্যাখ্যান করে আলিঙ্গন করা হয়েছে উত্তর নাটকীয় কাঠামো। যার প্রভাবে একীভূত হয়েছে দীর্ঘ একক কথন, চেতনার প্রবাহ, স্বগতোক্তি, দৈনন্দিন জীবনের কথোপকথন এবং দর্শকদের সরাসরি সম্বোধন করে বিবরণ। নাটকের বিষয়বস্তুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এক তরুণ শিল্পী; যার মনস্তত্ত্বে প্রবলভাবে বিরাজমান বিষণ্নতা। কারণ সমাজে ঘটে যাওয়া ব্যাপকভাবে সহিংসতার সাক্ষী হয়েছে তিনি। ধর্ষণ থেকে শুরু যৌন নিপীড়ন, খুন, আমৃত্যু নির্যাতন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং সমাজে বিশৃঙ্খল অনিশ্চয়তা প্রভাব ফেলেছে তার মানসিকতায়। নজরুলকে নিবেদিত ছায়ানটের চার দিনের আয়োজন ॥ গত শতকের ষাটের দশকের সূচনালগ্নে দেশজ সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে জন্ম নেয় ছায়ানট। বাঙালীর নিজস্ব ঐতিহ্য ও কৃষ্টির আশ্রয়ে পাক সরকারের বিরুদ্ধে জানিয়েছে ভিন্নতর প্রতিবাদ। প্রায় ছয় দশকের সংস্কৃতিচর্চায় ছায়ানটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন অগণন সংস্কৃতিবান মানুষ। ১৯৬১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী সেই সকল সংগঠক, শিল্পী, স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে যুক্ত বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। আর সেই সম্মিলনে সঙ্গী হয়েছেন বাঙালীর দুই মনের মানুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ‘জাগ্রত করো, নির্ভয় করো হে’ শীর্ষক প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় রবীন্দ্রনাথকে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ‘নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ’ শীর্ষক নজরুলকে নিবেদিত আয়োজন। নজরুলের নজরুলের ভক্তিমূলক, রাগাশ্রয়ী, গীতিআলেখ্য, স্বদেশ, উদ্দীপনা, আধুনিক ও লোক অঙ্গের গান, পাঠ-আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশনায় সজ্জিত হয়েছে চার দিনের অনুষ্ঠানটি। সঙ্গে থাকছে কথন ও প্রয়াত গুণী শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। রাত নয়টায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে। প্রতিদিন একই সময় সম্প্রচারিত হবে এ আয়োজন।
×