অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে এবং ৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী সীমিত অর্থায়নের সুযোগকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন। ৭২ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রশাসনের অদক্ষতাকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন। বৃহস্পতিবার ২০২০ সালের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) পক্ষে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এটি প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সমীক্ষা সিপিডির নিজস্ব প্রতিবেদন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনটি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ)।
এবারে করোনার কারণে অন্যান্য বছরের মতো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকের র্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়নি। তবে কোন্ দেশের কি সমস্যা তা জানতে ওই দেশের ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপ করা হয়েছে। ডব্লিউইএফের পক্ষে বাংলাদেশে এই কাজটি করেছে সিপিডি। তারা ১০ কোটি টাকার ওপর সম্পদ আছে এমন ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের মতামত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদন দুটি প্রকাশ করেছে সিপিডি। এতে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রতিযোগিতাসক্ষম করতে ১২টি বিষয়ের প্রতি জোর দেয়ার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সুশাসন, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ, অর্থায়নের পরিবেশ, বৈদেশিক বাণিজ্য, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, ব্যবসায় পরিচালনা, নিরাপত্তা, ঝুঁকি ইত্যাদি। এবারের প্রতিবেদন তৈরি করতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের ১৪২টি দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জরিপ চালানো হয়। এরমধ্যে ১২৬টি দেশের ব্যবসায়ীদের দেয়া মতামত যৌক্তিক বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবদেন তৈরিতে বাংলাদেশের হয়ে ৫৫ জন ব্যবসায়ী তাদের মতামত দিয়েছেন। যাদের ব্যবসায়িক সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি। গত বছর অর্থাৎ ২০১৯-এর প্রতিবেদন তৈরিতে মতামত দিয়েছিলনে ৭৭ জন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ৭৫ দশমিক ১ শতাংশ সন্তুষ্ট হলেও ৭২ শতাংশের মতামত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সরকারের অদক্ষ প্রশাসন। আর ৬৮ শতাংশের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অবস্থান নেমে এসেছে দুইয়ে। আর্থিক খাতের অপর্যাপ্ত সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন ৬৬ শতাংশ। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ বাড়ছে কিন্তু উদ্যোগগুলো বড় হচ্ছে না। আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সম্প্রসারণে যতটা মনোযোগী ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য ততটা নয়।
এই জরিপকাল করোনা শুরুর সময়, তাই এখানে করোনাকালীন সমস্যাগুলো সেভাবে উঠে আসেনি। তবে এই সঙ্কট মোকাবেলায় দেশগুলো কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে তা উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেয়া ১৪২টি দেশের ১১ হাজার ৮৬৬ জন ব্যবসায়ী তাদের মতামত দিয়েছেন।
এবারের প্রতিবেদন তৈরিতে করোনাকে আমলে নিয়ে যেমন প্রশ্ন তৈরি করা সম্ভব হয়নি তেমনি ব্যবসায়ীরাও আগের বছরের অভিজ্ঞতার আলোকেই তাদের মতামত জানিয়েছেন। প্রতিবেদন তৈরিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা তাদের বিশ্লেষণ ও মতামত দিয়েছেন।
ডব্লিউইএফ বলছে, গেল ১২ বছরের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে ব্যবহারকারী ও বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ছে। তবে এই করোনাকালে আরেকটি বিষয় প্রকট হয়েছে তা হলো প্রযুক্তির সুবিধা না পাওয়া মানুষের সংখ্যাও বেশ বড়। তাই এ খাতে আগামীর বিনিয়োগ পরিকল্পনা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষার বিস্তার হয়েছে সন্তুষ্টজনক কিন্তু মানের দিক দিয়ে তা অর্থনীতিতে তেমন ভূমিকা রাখার মতো কার্যকরী নয়। সংস্থাটি বলছে, উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করা ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর দক্ষতার অভাবের কারণে তাদের কর্মক্ষেত্রে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কর্মরত ৬৪ শতাংশেরই ডিজিটাল দক্ষতার অভাব রয়েছে। গতবারের চেয়ে এক্ষেত্রে স্কোর কমেছে দশমিক ছয় তিন শতাংশ। অর্থাৎ কর্মরতদের ডিজিটাল দক্ষতা না বেড়ে বরং এক বছরে খানিকটা কমেছে। তবে যারা উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ কর্মোপযোগী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করতে চায়।