ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস

সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে সেতুবন্ধ তৈরি করে অভিবাসন

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে সেতুবন্ধ তৈরি করে অভিবাসন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আজ। অভিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ গণমাধ্যমের কাছে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরবেন। তবে দেশে ‘অভিবাসী দিবস ২০২০’ উদযাপনের অনুষ্ঠান আজ শুক্রবার হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুবিধাজনক সময়ে অভিবাসী দিবসের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। দিন তারিখ ঠিক হলে দিবসটি ঘটা করে উদযাপন করবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সেতুবন্ধন তৈরির জন্য অভিবাসন। সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী অভিবাসীর মর্যাদা, তার পরিবারের সদস্যদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে এবারও ১৮ ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। ১৯৯০ সালের এইদিনে জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছিল সব অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশে উদযাপিত হবে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ক্রমবর্ধমান ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার দক্ষতা উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপের প্রেক্ষিতে দক্ষতাকে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে। বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিষয়ে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্বজুড়েই দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রথম টার্গেট হবে দক্ষ কর্মী সৃষ্টি করা। এজন্য প্রশিক্ষণের মান বাড়াতে হবে। প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী সৃষ্টি করতে পারলে উন্নত বিশ্বে কর্মী পাঠানো যাবে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভাষা শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন কর্মী যদি সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা জানেন তাহলে তার কাজের মানও ভাল হবে। সূত্র জানিয়েছে, অভিবাসী দিবস উপলক্ষে কর্মীদের বিষয়ে কোন প্রকার অবহেলা না করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। দক্ষ জনবল তৈরি হলেই চাহিদাভিত্তিক বৈশ্বিক কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। প্রতিবছর কয়েক লাখ লোক বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন দেশের বেকারত্ব কমছে, অন্যদিকে তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। তবে এ বছর করোনা মহামারীর কারণে বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বর্তমানে পুরুষ কর্মীদের পাশাপাশি নারীরাও ব্যাপক হারে বিদেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য পুরুষ-মহিলা দুই কর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অধিক হারে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হলে বিদেশে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বাড়বে। দেশে ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের সামাজিক ও আর্থিকভাবে সংশ্লিষ্ট করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। অনেক প্রবাসী বিদেশে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আর্থিক ঝুঁকির মধ্যেও পড়েন। অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য, রেমিটেন্স প্রেরণ, তথ্যপ্রবাহ, সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে ও সেবা প্রদানে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম উইংগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে উইংগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। এখন আগের তুলনায় শ্রম উইংগুলো কর্মীবান্ধব। তারা বিভিন্ন দেশে খোঁজ খবর রাখছে। কোথাও কোন কর্মী বিপদে পড়লে শ্রম উইংগুলো দ্রুত তা সমাধান করার চেষ্টা করছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের অভিবাসী দিবসের মূল উদ্দেশ্য হবে, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কর্মীদের বিদেশ পাঠানো। অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে বেশি সংখ্যক দক্ষ কর্মী নিয়োগ করা। অদক্ষ কর্মী পাঠিয়ে তাদের বিপদে ফেলার অধিকার কারও নেই। পুরনো বাজারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নতুন বাজারে এবার কর্মী নিয়োগ করা হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেশ কয়েকটি নতুন বাজারে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ পাবে। বিদেশ থেকে যে সংখ্যক কর্মী দেশে ফিরেছেন-এটা সংখ্যায় খুব বেশি কিছু নয়। করোনাসহ নানা কারণেই কর্মীদের দেশে ফিরতে হচ্ছে। এবার বেশি সংখ্যক কর্মী ছুটিতে এসে আর কর্মস্থলে যেতে পারেননি। কারও চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে, আবার কেউ কোন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। কেউ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাছাড়া বিদেশ থেকে দেশে ফেরা এটা ‘রুটিন ওয়ার্ক’। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করাই হবে বড় কাজ। কেউ যেন মানব পাচারের শিকার না হন এই দিকটি বেশি করে খেয়াল রাখা হচ্ছে। মানব পাচারবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচলানা করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারীকে গ্রেফতারও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিমান বন্দরে কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। কোন কর্মী যাতে হয়রানির শিকার না হন তার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে কোন সিন্ডিকেট তৈরি করতে দিচ্ছে না।
×