ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ অর্জনের দিন ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তখন থেকেই বিপুলভাবে উদ্যাপন করা হয়ে আসছে মহান বিজয় দিবস। তবে এবার সময়টা ভিন্ন। করোনাকাল চলছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই অব্যাহত। এ অবস্থায় অন্যান্য বছরের মতো বড় পরিসরে বিজয় দিবস উদ্যাপন সম্ভব হয়নি। বুধবার রাজধানীতে ছিল সীমিত আয়োজন। খুব চেনা এবং ভীষণ পছন্দের কিছু উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়েছে নগরবাসী। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বর্ণিল বিজয় উৎসবের আয়োজন করে আসছিল ছায়ানট। উন্মুক্ত সবুজ ঘাসের ওপর উঁচু খোলা মঞ্চ। সেখানে কখনও সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য। কখনওবা কবিতা। নিচে বর্গাকার মঞ্চ ঘিরে চমৎকার শিল্পী সমাবেশ। সেখান থেকে ভেসে আসত কোরাস কণ্ঠ। গ্যালারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন কৌতূহলী দর্শক। সেটি না হওয়ায় অভ্যস্তদের মন যারপরনাই খারাপই হয়েছে। সাংস্কৃতিক জোটের বড়সড় বিজয় উৎসবও সীমিত করা হয়েছিল। ধারাবাহিকতা রক্ষায় ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একদিনের বিজয় উৎসব আয়োজন করে জোট। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও প্রতি বছর তাৎপর্যপূর্ণ উৎসব অনুষ্ঠানে মাতে। দশদিনের অনুষ্ঠানামালায় মুখরিত হয়ে ওঠে জাদুঘর প্রাঙ্গণ। এবার সবই তারা করেছে ভার্চুয়ালি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় টিএসসি ঘিরেও তেমন কোন উদ্যাপন চোখে পড়েনি। তবে উৎসব অনুষ্ঠান কম হলেও, লোক সমাগম ছিল বেশ। লাল সবুজ পোশাকে সুন্দর সেজে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মনে তাদের আনন্দ যা ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল ক্ষোভ। হঠাৎ-ই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অগ্নিমশাল যেন চোখে মুখে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন তারা। অপশক্তি যখনই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে তখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে জাতি। এবারের বিজয় দিবসেও তা-ই দেখা গেছে। পাকিস্তানী চিন্তার অর্ধশিক্ষিত পশ্চাৎপদ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, কী দুঃসাহস, বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে হাত দিয়েছিল! তারও আগে এ নিয়ে আস্ফালন। হুমকি-ধমকি। সব ঔদ্ধত্যের শক্ত জবাব দিয়েছে ঢাকা। ধর্মান্ধদের ফতোয়া তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে দৃঢ়পায়ে সামনের পানে এগিয়ে গেছে রাজধানীবাসী। প্রতিটি মঞ্চ থেকে জামায়াত শিবিরের ভাড়ায় চালিত মামুনুল-বাবুনগরীদের রুখার আহ্বান জানানো হয়েছে। ওরা চায় না বলেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মানুষ বিজয় দিবসে বাইরে বের হয়ে এসেছিল। ওরা চায় না বলেই স্মৃতিসৌধে ঢল নেমেছিল মুক্তিকামী মানুষের। এখনও রেশ রয়ে গেছে বিজয় দিবসের। কোন কোন কর্মসূচী ১৬ ডিসেম্বর শুরু হয়ে চলছে এখনও। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছিল। লাল সবুজে সাজানো ভবন বিজয়ের আনন্দকে প্রকাশ করে চলেছে। দেখে বোঝা যায়, আরও কিছুদিন বিজয় দিবসের রেশটুকু ধরে রাখবে শহর ঢাকা। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একইসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সামনে রেখে একটি বিশাল ম্যুরাল পেইন্টিং করা হয়েছে। বিজয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান ম্যুরালটি উন্মোচন করেন। এতে বাঙালীর ভাষার অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী শিল্পী গোলাম রসূল সোহাগ ম্যুরালটির শিল্পী। অন্য প্রসঙ্গ। পৌষ শুরু হয়ে গেছে। আর পৌষ মানেই শীতের আনুষ্ঠানিক শুরু। নতুন ঋতু কার্যকর থাকবে মাঘ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। বর্তমানে শহর ঢাকার প্রকৃতি পরিবেশ নতুন ঋতুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। আগেই শীতের পোশাক গায়ে তুলেছিল রাজধানীবাসী। একই সময়ে দেখা গেছে হেলাফেলাও। এখন আর তেমনি চোখে পড়ছে না। কম বেশি সবাই শীতকে সমীহ করছেন! আবহাওয়ার অফিস বলছে, সামনের দিনগুলোতে পারদ আরও নিচে নামবে। জেঁকে বসবে শীত। তাই আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা বলা হচ্ছে। তবে দিন শেষে শীতের কালটি উপভোগ করে বাঙালী। প্রিয় ঋতু শুরু হতে না হতেই চোখে পড়ছে পিঠাপুলির আয়োজন। ঢাকার ফুটপাথে বসানো চুলোয় ধুয়া তুলছে গরম গরম ভাঁপা। চিতই। তাজা সবজিতে ভরপুর কাওরানবাজার। খেজুর গাছে হাঁড়িও বাঁধা হয়েছে। সব মিলিয়ে শীত পুরোপুরি বৃথা যাবে না বলেই মনে হয়।
×