ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দুদক চেয়ারম্যান

সবাই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে অপবাদ শোনা যাবে না

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

সবাই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে অপবাদ শোনা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিপাহী থেকে চেয়ারম্যান প্রত্যেককেই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাই যদি সততা, নিষ্ঠা ও সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে দুদকের মাধ্যমে হয়রানি করা যায় কিংবা শর্ষের ভেতরেই ভূত রয়েছে এ জাতীয় অপবাদ শোনা যাবে না। তাই নিজস্ব কর্মকর্তা, কর্মচারীর সবাইকে সততা, নিষ্ঠা ও নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ। বুধবার রাজধানীতে বিজয় দিবস উপলক্ষে সংস্থাটির আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। আলোচনার শুরুতেই দুদক চেয়ারম্যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত মা-বোন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতাসহ জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। তিনি সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। আলোচনা সভায় দুদক মহাপরিচালক মোঃ জহির রায়হান, সাঈদ মাহবুব খান, একেএম সোহেল, পরিচালক মোঃ গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ মাহমুদ হাসান, দুদক সিলেট সজেকার উপপরিচালক মোঃ নূর-ই-আলম বক্তব্য রাখেন । ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের সার্বিক কার্যক্রম একটি টিমওয়ার্ক। সিপাহী থেকে চেয়ারম্যান প্রত্যেককেই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাই যদি সততা,নিষ্ঠা ও সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে দুদকের মাধ্যমে হয়রানি করা যায় কিংবা শর্ষের ভেতরেই ভূত রয়েছে এ জাতীয় অপবাদ শোনা যাবে না। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নিজেকে সর্বোচ্চ পরিশুদ্ধ রাখতে হবে। সম্পদের মোহাচ্ছন্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কোথাও কোথাও লেখা দেখি, ‘সম্পত্তি খাবে লোকে, আর দেহ খাবে পোকে’ এমন কথা উদ্ধৃত করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, যাদের জন্য সম্পদ রেখে যাবেন,তারা হয়ত এ সম্পদ ভোগও করতে পারবে না। এটাই সত্য। তাই নিজেদেরকে শুদ্ধতম মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। অবশ্যই এ সমাজ দুর্নীতির করালগ্রাস থেকে মুক্তি পাবে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কেমন থাকবে, তা নির্ভর করছে আমরা অর্থাৎ বর্তমান প্রজন্ম কীভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছি তার ওপর। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, নিজের কাজকে বার বার ফিরে দেখা তথা আত্মজিজ্ঞাসা। নিজেদের কাজের আত্মবিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, হয়ত অনেক কিছু করার ছিল, করতে পারিনি। আর যা করেছি-তা যদি টেকসই করতে হয়-তাহলে আমাদের সকলকে একই সমতলে দাঁড়াতে হবে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। সমস্যা স্বীকার না করলে সমাধান হবে কীভাবে? আজ আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, আমরা রাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করব না। যে কাজটি করব, তা নির্মোহভাবে করব। অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে, তবে ইচ্ছাকৃত ভুল যেন না হয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারি। তবেই তো কর্মপ্রক্রিয়া পরিশুদ্ধ হবে। শাণিত হবে। বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতা বা বিবৃতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেসব দীপ্ত উচ্চারণ করে গেছেন-তা বাস্তবায়নে দুদকের সকলস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত ও একই সমতল থেকে দায়িত্ব পালনেরও আহবান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিন স্কুলের ছাত্র হিসেবে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, আমাদের মহান মাতৃভূমি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়ব। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান নেতাই বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জাতিগতভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি বিভিন্ন পরসিংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, একমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া পাকিস্তান সকল অর্থনৈতিক-সামাজিক সূচকের ইতিবাচক অগ্রগতিতে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে। যদি দেশ স্বাধীন না হতো, হয়ত আমাদের আরও খারাপ পরিণতি হতো। ড. খান বলেন, দুদক যে চেতনায় গঠিত হয়েছিল, ক্রমাগত প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই উন্নতির প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। তাই আমাদেরকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে শর্ষের ভেতর যেন ভূত না থাকে। তাই আসুন, মনন, চিন্তন ও আচরণে নিজ নিজ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করি।
×