ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মূল কমিটির ওয়েবিনারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

যারা সেদিন গণহত্যা করেছিল তারাই ভাস্কর্যের বিরোধী

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

যারা সেদিন গণহত্যা করেছিল তারাই ভাস্কর্যের বিরোধী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বালন, আলপনা অঙ্কন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ভাস্কর্য নির্মাণ- বাঙালী সংস্কৃতির এ ধরনের অভিব্যক্তি সম্পর্কে মৌলবাদীরা অহরহ ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা করে এবং তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্তিতে ফেলার চেষ্টা করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে- ভাষা ও সংস্কৃতির কোন ধর্ম হয় না। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ তরুণদের বিপুলভাবে উজ্জীবিত করেছে। বাংলাদেশে তরুণদের দেশপ্রেম এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নপূরণে তরুণরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যমে যে অবদান রাখছে তার প্রতি সরকারকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্টজনরা। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় বিজয় : নতুন প্রজন্মের নিকট আমাদের প্রত্যাশা ও করণীয়’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ৫টি দেশের ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকালে দেশব্যাপী স্মৃতিসৌধ এবং শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্মূল কমিটির ৫০তম বিজয় দিবস উদ্যাপনের কর্মসূচী শুরু হয়। মূল প্রবন্ধে নির্মূল কমিটির তরুণতম নেতা তুরস্কের শাকিল রেজা ইফতি বলেন- এদেশের তরুণরা ইতিহাস জানে এবং পড়ে কিন্তু এই ইতিহাসের পেছনের চেতনা নিয়ে ভাবে না। আমাদের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসটি যে ফেলনা নয়, এর মাহাত্ম্য ও গভীরতা যে কতটা মূল্যবান, সেই চেতনা তরুণদের লালন করতে হবে। এই চেতনার মূল উৎস হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন, যা প্রতিফলিত হয়েছে ’৭২-এর সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রের চার মূলনীতিতে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, যারা ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে ভারতের চক্রান্ত ও ইসলামবিরোধী বলেছিল, যারা ’৭১-এ ইসলামের দোহাই দিয়ে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন করেছিল তারাই আজকে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছে ইসলামের দোহাই দিয়ে। এরা যুগে যুগে ধর্মের আধ্যাত্মিকতা বা প্রধান বিষয় বাদ দিয়ে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা করছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আক্রোশের প্রধান কারণ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু তাদের সাধের পাকিস্তান ভেঙেছিলেন। দেশের প্রকৃত মুসলমান বা প্রকৃত আলেমরা এদের সমর্থন করেন না। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধান এবং সংবিধানে বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। মাদ্রাসা বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে না এটা কোনভাবে চলতে দেয়া যায় না মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে সংবিধানে বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেসব অসঙ্গতি রয়েছে তা দূর করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তরুণ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছে সেসব অর্ধশিক্ষিত তথাকথিত আলেমের কাছে আমরা ইসলামকে ইজারা দেইনি। কোরান- হাদিসের কোথাও ইসলামের এ ধরনের ঠিকেদারি ব্যবস্থা নেই। সামরিক শাসন, স্বৈরাচার কিংবা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোস করলে আওয়ামী লীগ অনেক আগেই ক্ষমতায় যেতে পারত উল্লেখ করে নওফেল বলেন, আওয়ামী লীগ ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে কিংবা বঙ্গবন্ধু আদর্শের সঙ্গে কখনও বেইমানি করবে না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ধর্ম অত্যন্ত পবিত্র বিষয়। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্য ধর্মকে রাজনীতি থেকে পৃথক রাখতে হবে। ইসলাম এসেছে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। ইসলাম কখনও কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের ধর্ম হতে পারে না। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে প্রযুক্তিকে তথাকথিত আলেমরা একসময় হারাম বলেছিল আজ সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা রাষ্ট্রবিরোধী, ইসলামের মূল চেতনাবিরোধী বক্তব্য ভাইরাল করছে। লাখ লাখ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের উচিত হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মূল্যে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি ইসলামিক রিপাবলিক করার জন্য নয়। বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সবাই সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাস করবে। যারা কোন ধর্ম মানে না তারাও থাকবে। ওয়াজের নামে ভিন্নধর্ম বা ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ যা ছড়াচ্ছে তারা সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছে। এদের বিরুদ্ধে গ্রামে গঞ্জে সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
×