ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাদিবা নীরা

অম্লান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

প্রকাশিত: ২০:৫১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

অম্লান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দগুলোর একটি। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত সংজ্ঞার্থ কি আমরা বুঝি! একাত্তরে বাঙালী স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। সেই যুদ্ধ ছিল একটি কবিতার জন্য, একটি ফুলের জন্য। ধর্মের নামে দুটি দেশকে আলাদা করা হলো, আমাদের সংস্কৃতির উপর, ভাষার উপর আঘাত হানল। তবে আমরা বাঙালী, অসাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে আমাদের জাতি, আমাদের যে হাজার বছরের জাতিগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তা আমরা বুঝেছিলাম। কোন শৃঙ্খলে বাংলা মাকে আমরা আবদ্ধ রাখতে পারি না। তাই আমাদের পূর্বপুরুষেরা এক সাগর রক্ত, শত আত্মত্যাগের মাধ্যমে সেই শৃঙ্খল মুক্ত করেছিলেন। তাঁরা আমাদের, নতুন প্রজন্মের হাতে, আমাদের এই দেশটাকে তুলে দিয়ে গেছেন। কথায় আছে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। আজ আমরা উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। আজও ’৭১-এর পরাজিত শক্তি সুযোগ পেলে আমাদের মানচিত্র-পতাকা-সংস্কৃতি-সংবিধান সব চিবিয়ে খায়। আমরা যদি আমাদের সংস্কৃতি-ইতিহাস-জাতীয়তাবাদ ভুলে যাই, তবে পৃথিবীতে আমাদের কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্বই থাকবে না। কারণ এগুলোই আমাদের পরিচিতি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু কোন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ ছিল না, সেই যুদ্ধ ছিল একটি সামগ্রিক মুক্তির জন্য। সেই যুদ্ধ ছিল চারটি মূলনীতি (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা) -এর জন্য। এই দেশটা কিভাবে পরিচালিত হবে, সেই প্রশ্নের মীমাংসা একাত্তরে হয়ে গেছে। এখন কেউ চাইলেই নতুন করে সংবিধান থেকে গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতা মুছে দিতে পারবে না। আর সেই চেতনাই ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’। যে চেতনা আমাদের মরমে গেঁথে দিয়ে গেছেন স্বয়ং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বুকে সেই ইতিহাস আর সংস্কৃতি নিয়ে আধুনিকতার মহাসাগরে ঝাঁপ দিতে হবে আমাদের। বাঙালী বার বার প্রমাণ করেছে, কোন অপশক্তির কাছেই তারা নতজানু নয়। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আজও প্রতিটি বছর কোটি প্রাণের কল্লোলে উদযাপিত হয় এক একটি উত্তাল বৈশাখ। একুশের প্রভাত ফেরিতে লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ভাই হারানোর গান। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আজও সম্মিলিত প্রয়াসের রক্তাক্ত বেদি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে। আবার কেউ যদি বলে ফুল দেয়া যাবে না, জাতীয় সঙ্গীত কিংবা ভাই হারানোর গান গাওয়া যাবে না, তার প্রতিবাদ করতে আমরা জানি। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহির্প্রকাশ। সেই চেতনায় আঘাত, ঘাতকের জন্য কেবল আত্মবিধ্বংসী, সেই আঘতের বিাংদ্ধে সমুচিত জবাব দিতে জানে, প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গর্বিত বাংলাদেশীরা। কাউখালী, পিরোজপুর থেকে
×