ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারের তৎকালীন এসপি মাসুদের কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ

ক্রসফায়ারের নামে প্রদীপ টেকনাফ জুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

ক্রসফায়ারের নামে প্রদীপ টেকনাফ জুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ার ইত্যাদির ব্যানারে প্রদীপ ও তার বাহিনী টেকনাফজুড়ে দুবছরেরও বেশি সময় যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তা সিনহা হত্যা চার্জশীট দাখিলের পর সুস্পষ্ট হয়েছে। চার্জশীটে ওসি প্রদীপসহ ১৫ পুলিশের অপরাধ প্রকাশ পেয়েছে। সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের কার্যক্রম নিয়েও। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে যেহেতু এটি একটি হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল হয়েছে তাই প্রদীপের রাজত্বকালে অন্য ভয়ানক ঘটনাবলীর বিবরণ তুলে আনা সম্ভব হয়নি। তবে এ চার্জশীট অপেক্ষাকৃত কম সময়ে দাখিল হওয়ায় র‌্যাব সংশ্লিষ্ট সকল মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। টেকনাফের ভুক্তভোগীসহ বেশির ভাগ মানুষের মাঝে স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু এই প্রদীপও তার আস্থাভাজন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে টেকনাফের যেসব ক্ষমতাধর ব্যক্তি নানা অনিয়মে জড়িত হয়েছিলেন তাদের মুখোশও উন্মোচনের দাবি উঠেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সিনহা হত্যার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজার পুরো জেলার পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজায়। এতে তৎকালীন পুলিশ সুপার এমনকি চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজিকেও অন্যত্র বদলি করে দেয়া হয়। টেকনাফে দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন ওসি প্রদীপ ও তার বিশ^স্ত পুলিশ সদস্যরা যে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েছে তা সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সিনহা হত্যা চার্জশীট বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করেছে। ফলে এই চার্জশীট সংশ্লিষ্ট সকল মহলে ব্যাপকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তদন্ত সংস্থা র‌্যাব, তদন্ত কর্মকর্তা, পিপিসহ সরকার পক্ষের আইনজীবীদের তৎপরতা প্রশংসা কুড়িয়েছে। ৪ মাসেরও কিছু বেশি সময়ে রবিবার এ মামলার চার্জশীট দেয়ার পর আগ্রহী বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে। এদিকে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাব চার্জশীট দিয়েছে তারা তাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি সিনিয়র আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম সোমবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণের সকল উপাদান রয়েছে। আশা করা যায় মামলার রায় হতে পারে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। চার্জশীট দাখিলের পর জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এবং এর পাশাপাশি গোটা রেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে ওই সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এখন নয়, তখন থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আছেন। চার্জশীট দাখিলের পর প্রশ্ন উঠেছে, প্রদীপ ও তার বাহিনী টেকনাফে ২০৪ জনকে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় যে হত্যা করা হল সুপারভাইজরি অথরিটি হিসেবে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও ডিআইজি কিভাবে দায়িত্ব এড়াতে পারবেন। সিনহা হত্যার পর থেকে শুরু করে রবিবার চার্জশীট দাখিলের পর সুপারভাইজরি এসব কর্মকর্তা প্রদীপ ও তার বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্ম কী জানতেন না-এমন প্রশ্ন তখন থেকে আলোচনায় এসেছে। প্রদীপ ও তার বাহিনী কোন খুঁটির জোরে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়ককে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছিলেন সেই প্রশ্নটিও নতুন করে এসেছে। এসপি, ডিআইজি এবং এদের মাঝখানে অন্য সুপারভাইজরি কর্মকর্তারা কী প্রদীপ ও তার বাহিনীর সকল অপকর্মের বেনিফিশিয়ারি ছিলেন-তা নিয়েও নানা প্রশ্নের জন্ম হয়ে আছে। প্রদীপ ও তার বাহিনীর সকল অপকর্ম বড় ধরনের কালিমা লেপন করে দিয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বাদে সকলেই গ্রেফতার হয়েছেন। তারা কারাগারে রয়েছেন। বিচার কার্যক্রমও যথা শীঘ্র শুরু হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। টেকনাফের ভুক্তভোগীদের স্বস্তি ॥ সিনহা হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল হওয়ায় টেকনাফের ভুক্তভোগীরা স্বস্তি প্রকাশ করে চলেছেন। এমনই ভুক্তভোগী টেকনাফ পুরান পল্লান পাড়ার বেলুজা ও আমিনা খাতুন সোমবার জানিয়েছেন, ওসি প্রদীপসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়ায় আমরা খুশি। প্রদীপের ফাঁসি দাবি করে তারা বলেন, টেকনাফের অনেক মানুষকে হত্যা করেছেন প্রদীপ ও তার বাহিনীর সদস্যরা। সিনহা হত্যা তাই প্রমাণ করেছে। তার মতো অপরাধীর ফাঁসি হওয়া দরকার।
×