ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বুদ্ধিজীবী দিবসে নির্মূল কমিটির আলোচনা

গণহত্যার জন্য পাকিস্তানী হাইকমান্ড ও ঘাতক বাহিনীর বিচার চাই

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

গণহত্যার জন্য পাকিস্তানী হাইকমান্ড ও ঘাতক বাহিনীর বিচার চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ’৭১-এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাইকমাণ্ড ও ঘাতক বাহিনীসমূহের বিচার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সোমবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এতে অংশ নেন দেশের শীর্ষ রাজনীতিবীদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তানসহ বিশিষ্টজনরা। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তারা এ দাবি জানান। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্র এবং দেশে ও বিদেশে ৫০টির অধিক শাখা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। সকাল আটটায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং কেন্দ্র ও মহানগর নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রার মাধ্যমে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক প্রদান ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিকেলে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে একটি অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং মুজিব বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক তোফায়েল আহমেদ এমপি। আলোচনার বিষয় ছিল ‘’৭১-এর গণহত্যা ঃ পাকিস্তানী হাইকমান্ড এবং সংগঠনসমূহের বিচার।’ এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেত্রী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাক্তন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ। সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সীমিত সম্পদের ভেতর ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ’৭১-এর ঘাতক দালালদের বিচার শুরু করেছিলেন। যার জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য নায়ক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তানকে খুশি করার জন্য এই বিচার শুধু বন্ধই করেননি, সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন সব যুদ্ধাপরাধীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে দলও করেছেন। স্বাধীনতার প্রায় চল্লিশ বছর পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করেছেন একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি অপরাধীদের বিচার হলেও গণহত্যাকারী সংগঠনসমূহ এবং গণহত্যার প্রধান হোতা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিচার শুরু হয়নি। এখন সময় এসেছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল পুনরুজ্জীবিত করে ন্যায়বিচার ও মানবতার স্বার্থে দ্রুত এ বিচার সম্পন্ন করা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য ও পঙ্গু করার জন্য। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। এজন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। জাতি এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। এ বিষয়ে জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্রে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্মূল কমিটির একটি সেমিনারে আমি উপস্থিত ছিলাম। তারা ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের গুরুত্ব যেভাবে তুলে ধরেছিলেন সেদিনই আমি পার্লামেন্টে গিয়ে আমি প্রস্তাবটি তুলে ধরি। প্রধানমন্ত্রী সেদিন ’৭১-এর গণহত্যায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে খুবই আবেগপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরপর ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাবে ২৫ মার্চ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাবে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এখন সময় এসেছে ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠনের। সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রি), শিক্ষাবিদ শিল্পী চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মানবতাবাদী নতুনচন্দ্র সিংহের পৌত্রি), সমাজকর্মী ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার কন্যা), শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর পুত্র), শহীদ সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরীর কন্যা), শহীদ সন্তান শমী কায়সার (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা), শহীদ সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর পুত্র), শহীদ সন্তান ফাহিম রেজা নূর (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের পুত্র), শহীদ সন্তান শাওন মাহমুদ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সঙ্গীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদের কন্যা), সমাজকর্মী মধুব্রতী দে বর্ণীল (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মধুসূদন দে’র পৌত্রি)।
×