ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শহীদ গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলার নথি উদ্ধারের চেষ্টা

প্রকাশিত: ২২:০৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০

শহীদ গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলার নথি উদ্ধারের চেষ্টা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলার নথিপত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মামলাটির নথিপত্র গায়েব করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। নথিপত্র গায়েব করে ফেলায় আলোচিত এই হত্যা মামলা সচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত আছে। এজন্য স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটির নথিপত্র গায়েব করে ফেলার অভিযোগ আছে। মুন্সী আতিকুর রহমান বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটক সাজানোর অন্যতম প্রধান কারিগর। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র লেকচারার অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের বোন ফরিদা বানু বাদী হয়ে ঢাকার রমনা থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে ফরিদা বানু বলেন, তার ভাই গিয়াস উদ্দিন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি মহসীন হল চত্বরে শিক্ষক কোয়ার্টারে বসবাস করতেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তার ভাইকে মহসীন হলের বাসভবনে খোঁজ করে। বাসায় না পেয়ে আলবদর বাহিনী মহসীন হলে তাঁকে খুঁজতে যায়। তাঁকে হলের সামনে পেয়ে দারোয়ান আব্দুর রহিমের গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যায়। পরে তার আর কোন হদিস পাওয়া যায়ানি। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন তখন মহসীন হলের ছাত্র ছিলেন। তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। গিয়াস উদ্দিনকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলবদর বাহিনীর সদস্য আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিল। এ দুই আলবদর সদস্যের দেখানো মতে গিয়াস উদ্দিনকে আলবদররা ধরে নিয়ে হত্যা করে। আশরাফুজ্জামান ওই সময় ইংরেজী দৈনিক অবজারভারের সাংবাদিক ছিল। এ দু’জন মামলার অন্যতম প্রধান আসামি। ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারি মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গায়ের জামাকাপড় দেখে তাঁর ভাই গিয়াস উদ্দিনের লাশ শনাক্ত করা হয়। সূত্র বলছে, মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডির বহুল আলোচিত সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমানকে। ওই সময় সিআইডি পুলিশ শহীদ পরিবারের ৪০ আত্মীয়স্বজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। ১৯৯৮ সালের ১৮ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে মামলাটি দায়েরের অনুমতি চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিআইডিকে মামলাটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে দায়েরের প্রস্তুতি নিতে বলে। আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টে মামলাটি দায়েরর জন্য মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২০ আগস্ট এ ব্যাপারে অনুমতি চেয়ে এবং পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবে জানানো হয়, দালাল আইন বাতিল হওয়ায় বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলাটির বিচার পাওয়া কঠিন। কিন্তু ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টে এ মামলার বিচার সম্ভব। এ আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও বিধান আছে। তবে এ আইন কার্যকর করতে রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলেই বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার বিচার করা সম্ভব। অন্যথায় নয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা নেয়ার পর মামলার তদন্ত নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়। সিআইডির বহুল আলোচিত সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ২০০২ সালে মামলাটির ফাইনাল চার্জশীট দাখিল করে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মুন্সী আতিকুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মামলার নথিপত্রই গায়েব করে ফেলা হয়।
×