ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবছরই নষ্ট হচ্ছে পাঠ্যবই

৩৬ কোটি পাঠ্যবই রাখতে গুদাম নেই একটিও

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০

৩৬ কোটি পাঠ্যবই রাখতে গুদাম নেই একটিও

বিভাষ বাড়ৈ ॥ গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের সবচেয়ে বড় অর্জনের একটি হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সকল শিক্ষার্থীর জন্য বছরের প্রথম দিনই বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকার কারণে প্রতিবছরই সঙ্কট ছাড়াই ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি কপি বই যাচ্ছে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে। প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে পাঠ্যবই দিলেও দেশে ৩৬ কোটি কপি পাঠ্যবই রাখার জন্য গুদাম বা সংরক্ষণের জায়গা নেই একটিও! প্রতিবছর প্রায় তিন মাস আগে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠানো শুরু হলেও সেখানে নেই রাখার কোন ব্যবস্থা। গুদাম না থাকায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলো নিজেদের প্রয়োজনীয় বই ছাড়া কারও বই সংরক্ষণ করতেও পারছে না। ফলে প্রতিবছরই নষ্ট হচ্ছে পাঠ্যবই। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, পাঠ্যবই রাখার সঙ্কট উত্তরণে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। এ সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ‘পরীক্ষা কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার’ নির্মাণের একটি উদ্যোগও ঝুলে আছে। অথচ পাঠ্যবই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সারাদেশের স্কুলে বিতরণের আগে চার থেকে পাঁচ মাস জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংরক্ষণ করে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে প্রতিবছর চলছে এ ব্যবস্থা। প্রতিবছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সঙ্কট শুরু হলে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান জটিলতার কথা। তারা জানানোর পরই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের একটি তাগাদা দুই মন্ত্রণালয় অনুভব করলেও জানুয়ারিতে বই বিতরণ হয়ে গেলে আর থাকছে না সেই আগ্রহ। পাঠ্যবই নিয়ে মূল কাজটি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা পাঠ্যবই সংরক্ষণাগারের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে বলছিলেন, এই সমস্যার সমাধান হলে একটি বড় কাজ হয়। কারণ প্রতিবছর এই সমস্যায় পড়তে হয় সারাদেশের শিক্ষা কর্মকর্তা-শিক্ষকদের। দীর্ঘ সময় বই সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। জানুয়ারির প্রথম দিন বই বিতরণের আগে পুরো সময় বই রাখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে স্থান নেই। এক প্রশ্নের জবাবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, হ্যাঁ সরকারও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। একটি উদ্যোগও আছে। যেখানে জেলা-উপজেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার করার এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সমস্যাটির সমাধান হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এনসিটিবির আরেক কর্মকর্তারা বলছিলেন, সরকারের বিনামূল্যের ৩৬ কোটি কপি পাঠ্যবই রাখার জন্য এনসিটিবি ও মাউশি’র নিজস্ব কোন সংরক্ষণাগার নেই। এর ফলে বিতরণের এলাকার বইগুলো দু’/একটি স্থানে রাখতে হয় কোনমতে। যেখান থেকে এলাকার স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হয়। সংরক্ষণাগার না থাকায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলো এখন নিজেদের প্রয়োজনীয় বই ছাড়া পাশর্^বর্তী স্কুলের বই সংরক্ষণ করতে চায় না। ফলে পাঠ্যপুস্তক সংরক্ষণ করা নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়েছে এনসিটিবি। অথচ প্রতিবছর বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা বাড়ছে, ছাপার পরিধিও বাড়ছে। বই সংরক্ষণ নিয়ে বেকায়দায় পড়ছে সংস্থাটি। ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছিলেন, বিষয়টি নিয়ে আমিসহ অনেক শিক্ষা কর্মকর্তা বহুবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। প্রতিবছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলায় পাঠ্যবই সংরক্ষণ করতে হয়। কোন স্কুলই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে বই নিতে চায় না। এর ফলে দু’/একটি স্কুলে যেখানে বই রাখা হয়, তারাও জায়গার অভাবে অন্য স্কুলের বই রাখতে চান না। নতুন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ায় সোনারগাঁওয়ে বই সংরক্ষণে সমস্যা কিছুটা মিটেছে। তবে আড়াইহাজার উপজেলায় সমস্যা হয়েছে।
×