ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে মান্না

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে মান্না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদর রহমান মান্না বলেছেন, আমাদের পাশে অসম এবং অরুণাচল এই দুই রাজ্যের মাঝামাঝি একটা ব্রিজ করা হয়েছে। এটার নাম ভুপেন হাজারিকা সেতু। ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা। পদ্মা সেতু হচ্ছে ৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। এই সেতু নির্মাণ করতে লেগেছে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। আর আমাদের সোয়া ৬ কিলোমিটার ব্রিজ এখনও হয়নি। এটার শুরুতে প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। বৃহস্পতিবার ৪১তম স্প্যান বাসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ। ২০২২ সালের জুন মাসে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার ঘোষণা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিশে^র সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মায় নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে আশা জাগানিয়া প্রকল্পের কাজ চললেও পুরো বিষয়টি ইতিবাচক দেখতে পারছেন না সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মান্না। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঠিক কত হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে একদম আপডেটেড হিসাব করা হয়নি। সবাই মনে করছেন, সর্বশেষ যেটা বলেছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা, তার সঙ্গে আরও ১০-২০ হাজার কোটি টাকা যুক্ত হয়েছে। কমপ্লিট করতে আরও হয়তো ২০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। তার মানে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা লাগবে এই সোয়া ৬ কিলোমিটার লম্বা সেতু বানাবার জন্য। ওরা যদি সোয়া ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা দিয়ে করতে পারে, এখানে এত টাকা লাগবে কেন? বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব পরিষদের প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে ‘আমরা সবাই বাংলাদেশী, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্য গড়ি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক সুভাষ চন্দ্র দাস। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অর্পনা রায়, ইশরাক হোসেন, নুরুল হক নূর প্রমুখ বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মান্না বলেন, যত গালি দেন, উনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করবেন না। আমি এজন্য ঠিক করেছি, তার একটা প্রশংসা করি। এটা কোন দালালি করছি না। সত্যি সত্যি আমি মনে করি, পদ্মা সেতু একটা ভাল কাজ হয়েছে। এটা একটা তো স্বপ্নের সেতু তো বটেই, অন্তত দক্ষিণাঞ্চলের জন্য। কিন্তু এই সেতুর নির্মাণ নিয়ে কথা আছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মান্না বলেন, আমরা কাউকে কেয়ার করি না, নিজেদের টাকায় করেছি। কেন আপনারা তো চীন থেকে লোন নিয়েছেন। ওই টাকার মধ্যে চীনা কোম্পানি নাই? তারা সুদ নিচ্ছে না? সুদের হার কত? মিনিমাম ৪ ভাগ। আর বিশ্বব্যাংক যে টাকা দিত, সেই টাকার সুদের হার ছিল পয়েন্ট টু-ফাইভ পারসেন্ট থেকে পয়েন্ট ফাইভ জিরো। নেননি কেন সেই টাকা? ওরা (বিশ্বব্যাংক) একটা দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। দুর্নীতির তদন্ত করেননি। শুধু গায়ের জোরে বলেছেন, নেব না তোমাদের টাকা। কেন? কারণ বিশ্বব্যাংক যদি টাকা দিত তাহলে বিশ্বব্যাংক এটা মনিটর করত এবং তখন এ ধরনের দুর্নীতি করার সুযোগ থাকত না। এখন এই যে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেতুটা হচ্ছে এই সম্পর্কে কোন হিসাব চাইতে পারব? চাইলে সরকার দেবে? তিনি বলেন, এই দেশের কত টাকা বছরে লুট হয় তার কোন হিসাব আছে? একটা হিসাব সরকারী ব্যাংকগুলো দিয়েছে, ব্যক্তি মালিকানায় যেসব ব্যাংক দিয়েছে, তারা বলেছে যে, প্রত্যেক বছর অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। আরও হুন্ডির মাধ্যমে যায়, ওটা সোয়া লক্ষ কোটি টাকা। সোয়া লাখ কোটি টাকা বাদ দেন, ৭০ হাজার কোটি টাকা যে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায়, ওই টাকা হলে প্রত্যেক বছর একটা করে পদ্মা সেতু বানাতে পারি। এত গল্প কেন? একটা স্প্যান বসান আর হুলুস্থুল লাগিয়ে দেন। অথচ প্রত্যেক বছর একটা করে পদ্মা সেতু পাচার হয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেন না।
×