ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় অচেনা সাকিব

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় অচেনা সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দীর্ঘ ৪০৮ দিনের বিরতি, আইসিসি নিষিদ্ধ করায় এই লম্বা সময় পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। এই বিশাল বিরতির পরেও আইসিসির টি২০ অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে আগের সেই দুই নম্বরে ফিরে আসেন তিনি। তবে ঠিকই টানা বিরতির ছাপ পড়েছে তার পারফর্মেন্সে, যার প্রমাণ দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে। এক সময় বিশ^সেরা টি২০ অলরাউন্ডারকে এই আসরে চেনাই যায়নি। সাড়ে ১৩ মাস বিরতির পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরার পর ভাল পারফর্ম করা কঠিন হলেও বিশ^সেরা ক্রিকেটার ৩/৪ ম্যাচ পর নিজেকে মেলে ধরবেন এমন প্রত্যাশাই ছিল সবার। কিন্তু সাকিব ব্যাটে-বলে ব্যর্থ হয়েছেন টানা ৮ ম্যাচ খেলে। অথচ ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সবসময়ই শীর্ষ পারফর্মার তিনি। বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে দ্যুতিময় পারফর্মেন্স দেখিয়ে দারুণভাবে ফেরার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব। ব্যাট হাতে ৮ ম্যাচে মাত্র ১০.২৫ গড়ে করেছেন ৮২ রান। আর বল হাতে ৩৪.৪০ গড়ে মাত্র ৫ উইকেট নিয়ে সেখানে ব্যর্থতার ছাপ দেখিয়েছেন। অবশ্য, বৃহস্পতিবার জেমকন খুলনার হয়ে বঙ্গবন্ধু টি২০ আসরে খেলা সাকিব জানিয়েছেন, তিনি চেষ্টায় আছেন দ্রুত নিজেকে ফিরে পাওয়ার। ২৪ নবেম্বর ছিল সাকিবের ভারমুক্তির দিন, মাথায় চেপে বসা বোঝাটা ঝেড়ে ফেলে অবমুক্ত হওয়ার দিন। হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও একটা ফাঁড়া কেটে যাওয়ার দিন। কারণ, ৪০৮ দিন পর এদিন দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামেন। যত উঁচুদরের ক্রিকেটারই হোন, এতদিন মাঠের বাইরে থেকে হুট করে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে ফিরে আহামরি কিছু করাটা সবার জন্যই কঠিন। সাকিবের প্রথম ম্যাচটিতেও ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। ব্যাট হাতে ১৫ রান করলেও অবশ্য বল হাতে দারুণ করেছেন, ১ উইকেট নিতে পারলেও ৩ ওভারে মাত্র ১৮ উইকেট নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কয়েকটি ম্যাচ খেলেই পূর্বের মতো দুর্দান্তভাবে ফিরবেন সাকিব। তবে পরের ম্যাচগুলোয় ব্যাট হাতে তার ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি। যদিও বল হাতে ফেরার পর নিজের তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে টি২০ ক্রিকেটে যেকোন বোলারের জন্য স্বপ্নের মতো স্পেল করেছেন। তৃতীয় ম্যাচে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে ৪ ওভারে ১ মেডেনে মাত্র ১৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন এবং চতুর্থ ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকার বিরুদ্ধে ৪ ওভারে ২ মেডেনসহ মাত্র ৮ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন তিনি। বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপের লীগ পর্বে সাকিবের সঙ্গে মানানসই ও বলার মতো পারফর্মেন্স এ দুটিই। বৃহস্পতিবার লীগ পর্বে খুলনার সর্বশেষ ম্যাচে ঢাকার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বাজে বোলিং করে ৩ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থেকেছেন এবং ব্যাট হাতে ফেরার পর অষ্টম এই ম্যাচটিতেও ব্যর্থ, করেছেন মাত্র ৮। সবমিলিয়ে ৮ ম্যাচে তার রান- ১৫ (১৩ বল), ১২ (৯), ৩ (৭), ১১ (৯), ১৪ (১০), ৪ (৫), ১৫ (১৬) ও ৮ (৭)। ১০.২৫ গড় ও ১০৭.৮৯ স্ট্রাইকরেটে ৮২ রান। সবমিলিয়ে চার হাঁকিয়েছেন ৯টি, ছক্কা সাকুল্যে ১টি। টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য তার পজিশনও ঠিক থাকেনি। প্রথম দুই ম্যাচে ৩ নম্বরে, পরের দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে, তারপর ২ ম্যাচে ৪ নম্বরে নেমেও ব্যর্থতা কাটাতে না পারায় সর্বশেষ ২ ম্যাচে আবারও ফিরেছেন তিন নম্বরে। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেননি ব্যাটিংয়ে। ৬ ম্যাচেই শট সিলেকশনে ভুল করে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। দুই ম্যাচে হয়েছেন বোল্ড। বোলিংয়ে তুলনামূলকভাবে ভাল করলেও সবমিলিয়ে ৮ ম্যাচে ৩০ ওভারে ৫ উইকেট নিতে পেরেছেন ৩৪.৪০ গড়ে, স্ট্রাইকরেট ৩৬.০। তবে টুর্নামেন্টের সেরা ইকোনমি সাকিবের। তিনি ৫.৭৩ গড়ে ১৭২ রান দিয়ে তিনিই সেরা। টি২০ ক্রিকেটে এমন মিতব্যয়িতা যেকোন বোলারের জন্য স্বপ্নের। অথচ খুলনার কোচসহ জাতীয় দলের সতীর্থরাও প্রত্যাশা জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ সময় পর নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে সাকিবের অন্তত ৩/৪ ম্যাচ খেলতে হবে মানিয়ে নিতে। বাস্তবে তা হয়নি, ৮ ম্যাচে দেখা যায়নি পুরনো সাকিবের লেশমাত্র। কবে নিজেকে ফিরে পাবেন সাকিব? বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই অনিশ্চিত কণ্ঠে বললেন,‘ জানিনা, দেখি কত দ্রুত কামব্যাক করা যায়। চেষ্টা থাকবে যেন ভাল করতে পারি। বাকিটা দেখা যাক।’ অথচ এই আসরে লীগ পর্বে ৮ ম্যাচ থেকে ১৫ উইকেট নিতে পারলেই দেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৩ ফরমেটে সব ধররে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট মিলিয়ে ১০০০ উইকেটের মালিক হতে পারতেন। দেশের অধিকাংশ টি২০ প্রতিযোগিতাতেই বোলিং পারফর্মেন্সে সাকিব শীর্ষ অবস্থানে থেকেছেন। বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ১১৪৫ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে। আর কোন বাংলাদেশি বোলারের ১ হাজার উইকেট নেই। বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে উইকেট শিকার করতে গিয়ে হা-পিত্যেশ করেছেন সাকিব। যদিও এই আসরে পেসারদের দাপট, কিন্তু ঢাকার অফস্পিনার রবিউল ইসলাম রবি মাত্র ৫ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে তালিকার ৪ নম্বরে। শীর্ষে থাকা পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের উইকেট সংখ্যা ৬ ম্যাচে ১৫। সাকিব তার পুরনো রূপে থাকতে পারলে হয়তো তিনিই শীর্ষে থাকতে পারতেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আগে বাংলাদেশ দলও তাকে নিয়ে আশাবাদী হতে পারত। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ১ হাজার উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করতে পারতেন তিনি। যদিও এই আসরে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে ৫ হাজার রান পূর্ণ হয়েছে তার এবং ডোয়াইন ব্রাভো ও আন্দ্রে রাসেলের পর তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে এই ফরমেটে ৫ হাজার রানের পাশাপাশি ৩ শতাধিক উইকেটের গর্বিত মালিক হয়েছেন। এই প্রাপ্তিটা তার পূর্বের পারফর্মেন্সের কারণেই হয়েছে, ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আসা নতুন করে সাকিব ব্যর্থতায় ডুবে একেবারেই অচেনা।
×