ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিংবদন্তি পাওলো রোসির মৃত্যু

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

কিংবদন্তি পাওলো রোসির মৃত্যু

জিএম মোস্তফা ॥ বিশ্ব ফুটবলের আরও এক নক্ষত্রের পতন। এবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চির বিদায় নিলেন ইতালির বিশ্বকাপ জয়ের মহানায়ক পাওলো রোসি। বৃহস্পতিবার ৬৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রোসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইতালিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল রাইস স্পোর্টস। সম্প্রতি এই চ্যানেলের হয়েই ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছিলেন আজ্জুরিদের জার্সিতে ১৯৮২ বিশ্বকাপের এই নায়ক। অথচ, ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনার শূন্যতায় গোটা পৃথিবী এখনও শোকে বিহ্বল। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাকে হারানোর ১৫ দিনের মধ্যেই এবার বিদায় নিলেন পাওলো রোসি। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়। ইতালির বিশ্বকাপ জয়ের নায়কের বিদায়ে গোটা ফুটবল দুনিয়াই এখন শোকে স্তব্ধ। পাওলো রোসি মৃত্যুর আগ পর্যন্তই ফুটবলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইতালির সরকারী টিভি চ্যানেল রায় স্পোর্টস ছাড়াও স্কাই স্পোর্টসের মতো আন্তর্জাতিক চ্যানেলেও কাজ করেছেন তিনি। রোসির মৃত্যুতে ইতালীয় টিভি চ্যানেল থেকে টুইট করে জানানো হয়, ‘খুবই দুঃখের খবর, পাওলো রোসি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। অবিস্মরণীয় পাবলিতো, যে আমাদের সবাইকে ১৯৮২ সালের গ্রীষ্মের প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছিল।’ প্রয়াত কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড পাওলো রোসির স্ত্রী ফেদেরিকা কাপেলেত্তি জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন পাওলো রোসি। চিকিৎসাও চলছিল তার। বিগত কয়েক দিনে অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। চিকিৎসকেরা শেষ চেষ্টা করেও সফল হননি। বৃহস্পতিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এই ফুটবলার।’ ইনস্টাগ্রামে রোসির স্ত্রী লিখেছেন, ‘তোমার মতো আর কেউ আসবে না, তুমি অনন্য, তুমি স্পেশ্যাল, তোমার পর এক চরম শূন্যতা।’ ১৯৫৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে জন্ম এই কিংবদন্তি ফুটবলারের। ভিসেনজার হয়ে ক্লাব ফুটবলের যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর পেরুজিয়ার হয়ে এক বছর খেলে ১৯৮১ সালে নতুন করে ঠিকানা গড়েন জুভেন্টাসে। সেখান থেকে তারকা হতে খুব বেশি সময় নেননি এই ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড। সিরি’এ লীগের জায়ান্ট ক্লাব জুভেন্টাসের জার্সিতে ৮৩ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করে ২৪ গোল করেন তিনি। ১৯৮৫ সালে এসি মিলানে চলে আসেন। সেখানে এক বছর খেলেন। ক্লাব ফুটবলে মোট ৩৩৮ ম্যাচে ১৩৪টি গোল আছে তার। দুই বার ইতালিয়ান সিরি’এ লীগের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তিনি। সেইসঙ্গে ১টি ইউরোপিয়ান কাপও রয়েছে তার বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ারে। তবে ১৯৮২ সালটা ছিল পাওলো রোসির জন্য অন্যরকম। সেবার স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ইতালির জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। জুভেন্টাস এবং এসি মিলানের সাবেক এই তারকা ফরোয়ার্ড ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে ইতালিকে প্রায় একাই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। ৬টি গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নজর কেড়েছিলেন সবার, যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ৩টি গোল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেছিলেন পাওলো। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে ইতালির হয়ে প্রথম গোল করেন রোসিই। শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচে ৩-১ ব্যাবধানে জয় পায় রোসির ইতালি। মোটকথা তার অসাধারণ নৈপুণ্যেই সেবার বিশ্বফুটবলের মুকুট পড়ে আজ্জুরিরা। বিশ্বকাপ, সোনার বল, সোনার বুট তিনটি খেতাব একই বছরে জেতার নজির প্রথম তৈরি করেছিলেন পাওলো রোসি। পরে এই কৃতিত্ব আর এক জনই দেখিয়েছেন। ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি রোনাল্ডো। ২০০২ বিশ্বকাপে। স্পেন বিশ্বকাপ জয়ের বছরে তাই স্বাভাবিক ভাবেই ব্যালন ডি’অর জিতে নেন রোসি। যদিও বিতর্ক নাড়া দিয়ে যায় পাওলো রোসির ফুটবল ক্যারিয়ারকেও। ১৯৮০ সালে তার বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে। যে কারণে তিন বছরের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় তাকে। আর এই ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডের জেরে হয়তো ১৯৮২ বিশ্বকাপে খেলাই হতো না পাওলো রোসির। কিন্তু ১৯৮০ সালে তিন বছরের জন্য নির্বাসিত হওয়ার পর বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে প্রতিবাদ করেন তিনি। সে কারণেই এক বছরের শাস্তি মওকুফ করা হয় তার। আর তাতেই সুযোগ পেয়ে যান স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। বাকিটা ইতিহাস। স্বপ্নের ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে প্রথম গোলটা তারই ছিল। হ্যাটট্রিক করে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ থেকেও বিদায় করে দিয়েছিলেন এই পাওলো রোসিই। রবার্তো বাজ্জিও, ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরির সঙ্গে বিশ্বকাপে ইতালির হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডেও (৯) রয়েছে রোসির নাম। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত ইতালির হয়ে ৪৮ ম্যাচে ২০টি গোল রয়েছে তার।
×