ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্র, গুজবে থেমে যায়নি পদ্মা সেতুর কাজ

প্রকাশিত: ২২:৫০, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

ষড়যন্ত্র, গুজবে থেমে যায়নি পদ্মা সেতুর কাজ

রহিম শেখ ॥ বিজয়ের মাসে অবশেষে দুই তীর এক হলো পদ্মার। ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো। তবে সময়ের পালাবদলে বাধাও এসেছে বহুবার। এর মধ্যে প্রাকৃতিক বাধার চেয়ে বিশ্ব ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে সেতুটি। সে কারণে পিছিয়েছে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে, যেটি তুলেছিল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এক পর্যায়ে বিদেশের একটি আদালতের রায়ে সেই অভিযোগ থেকেও দায়মুক্তি পায় বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রে কাজ শুরুতেই বিলম্ব হয় চার বছর। এরপর পরিবর্তন আসে সেতুর নকশায়। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০১৫ সালে শুরু হয় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু তৈরিতে মাথা লাগবে এমন গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের বিস্তার এমন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে যার ফলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় ৬৭ জন মানুষকে। তবে সবকিছু পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মার বুকে তৈরি হওয়া এ সেতু জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ‘হার না মানার’ দেশ। ১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০১ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। তখন থেকেই মূলত স্বপ্ন বুনতে থাকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষ। এরপর আরও গবেষণা এবং বিশ্লেষণ শেষে ২০০৪ সালে জাপানী দাতা সংস্থা জাইকা মাওয়া-জাজিরার শেষ প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের সুপারিশ করে। সেতু নির্মাণে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। তাদের দেয়ার কথা ছিল ১২০ কোটি ডলার। এরপর ১৮ মে জাইকার সঙ্গে, ২৪ মে আইডিবির সঙ্গে এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়। এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি ও আইডিবি ১৪ কোটি ডলার দেবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করতে থাকে, সেতুর পরামর্শক নিয়োগের কাজ পেতে কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করে। এ কারণে ঋণচুক্তি স্থগিত করে। ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের চাপে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতে প্রধান আসামি করা হয় সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে। বাকি ছয় আসামি হলেনÑ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মোঃ ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এই সংস্থার আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস। তখন বিশ্বব্যাংক চাপ দিতে থাকে সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে আসামি করার। কিন্তু সেটি করেনি দুদক। তবে বিশ্বব্যাংকের চাপে এই ঘটনায় তদন্ত হয় আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। এরপর গ্রেফতার হন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। সে সময়ে এসএনসি লাভালিনের এক কর্মকর্তার ডায়েরিতে কাকে কাকে ঘুষ দিতে হবে, তার তালিকা করা ছিল বলে খবর ছড়ায়। তবে এর সত্যতা কখনও পাওয়া যায়নি। বা রবার অনুরোধ করা হলেও দুদককে সে ডায়েরি দেয়া হয়নি। তবে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয় সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে দুর্নীতির ঘটনায় এসএনসিকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রে সেতুর কাজ শুরু করতেই বিলম্ব চার বছর ॥ ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তির দিন জানানো হয়, ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করে সেতু খুলে দিতে চায় সরকার। কিন্তু দুর্নীতি চেষ্টার ধুঁয়া তুলে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের কারণে সেতুর কাজ শুরু করতেই বিলম্ব হয় চার বছর। ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলা থেকে সাত আসামিসহ সবাইকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় দুদক। কানাডার আদালতে সব মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যাওয়ার পর এই দুর্নীতির অভিযোগ আর তোলেনি কেউ। রায়টি দেয়া হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। তবে গণমাধ্যমে রায় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল এক মাস। আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও নিষ্পত্তি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। সিদ্ধান্ত দেয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির চিঠি যায় পদত্যাগী যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে। এতে বলা হয়, ‘সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণের নিমিত্ত প্রাক- যোগ্যতা নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগটি অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্রের আলোকে প্রমাণিত হয়নি বিধায় তা দুদক কর্তৃক অনুসন্ধান পরিসমাপ্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।’ জানতে চাইলে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সরকার এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও জবাবদিহিতাকে দাতা সংস্থা সবসময় খাটো করে দেখে। তাই দুদক যখন বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তি ও সত্যতা খুঁজে পায়নি, তখন তা বিশ্বব্যাংক জানিয়ে দিলে তাদের চিরায়ত বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে তারা এ তদন্তকে সরকারকে বাঁচানোর ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। কিন্তু কানাডার আদালতের রায় তাদেরকে বোকা করে দেয়। এরপর তারা নিশ্চুপ হয়ে যায়। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করা ছিল বিশ্বব্যাংকের একটি ভুুল সিদ্ধান্ত। এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ হারাল। পরে শুনেছি বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক প্রভাবিত হয়ে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় আলোচনা না করে এবং অনুমোদন না নিয়েই নিজ উদ্যোগে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেছেন। বিশ্বব্যাংকের অধিকাংশ কর্মকর্তাই অর্থায়ন স্থগিতের বিষয় সমর্থন করেননি।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চায়নায় বোয়া ফোরামে এক অনুষ্ঠানে আমার সাক্ষাত হয়, পরিচয় হয়। তখন তিনি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। রবার্ট জোয়েলিকের মতো বিশ্বব্যাংকের হাতে গোনা কতিপয় কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু অর্থায়ন না করার দায় বিশ্বব্যাংকের নিতে হলো। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংক সৃষ্টির পর থেকে আরও ১০০ বছরেও পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে আর বিশ্বব্যাংক সুযোগ পাবে না।’ সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ শুরুতে ২৯০ কোটি ডলারের নেয়া এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১২০ কোটি ডলার। এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি ও আইডিবি ১৪ কোটি ডলার দেয়ার জন্য চুক্তি করে সরকারের সঙ্গে। কিন্তু বায়বীয় অভিযোগে ২০১২ সালের জুনে এই প্রকল্প থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। আর চুক্তি অনুযায়ী সবচেয়ে বড় দাতা সংস্থাটি সরে যাওয়ায় অন্যরাও ঋণ চুক্তি বাতিল করে। বিশ্বব্যাংকের টালবাহানায় ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ অর্থে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। প্রধনমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গবর্নর ড. আতিউর রহমান বিশাল ব্যয়ের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলারে পরিশোধ করতে অগ্রণী ব্যাংককে দায়িত্ব দেন। এখনও এর তত্ত্বাবধান করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানতে চাইলে ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমরা সম্ভাব্যতার বড় জায়গাটায় না গেলাম, সর্বনিম্ন সমীক্ষাটিও যদি গ্রহণ করি তাহলেও জিডিপি বাড়ার হার ন্যূনতম এক শতাংশ হবে। এটাই হলো আমাদের পদ্মা সেতু, যা বাংলাদেশের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি, অহংকার ও সাহসের প্রতীক। যার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে বিপুল বিস্ফোরণ ঘটেছিল। যার ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত আছে। পদ্মা সেতু চালুর পর অর্থনীতিতে তারচেয়েও বড় বিস্ফোরণ ঘটবে।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২৭টি জেলার কৃষিখাত বেগবান হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতে বিপ্লব ঘটবে। দ্রুত পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় সারা দেশে বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এছাড়া কুয়াকাটা, সুন্দরবন ও বঙ্গবন্ধুর সমাধি ঘিরে পর্যটন খাত বিকশিত হবে। হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে উঠবে। মংলা বন্দর, পায়রা বন্দর ও এনার্জি হাব, ইপিজেড, রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র, বরিশাল-পিরোজপুরে শিপ বিল্ডিং শিল্পসহ সার্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উল্লম্ফন দেখা যাবে।’ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের অনেক দ্বার খুলবে। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ওই সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও সচল হবে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। গুজব ছড়িয়েও সেতুর কাজে বাধা দেয়া হয়েছে ॥ অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা, বিশ্বব্যাংকের গালগপ্পের অভিযোগ কাটিয়ে সেতু এগিয়ে চলার মধ্যে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ভাঙন, নদীর তলদেশে মাটির গঠনগত জটিলতার কারণে ২২টি পিলার নির্মাণে জটিলতা ছাড়াও আরও গুজব ছড়িয়েও সেতুর কাজে বাধা দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু তৈরিতে মাথা লাগবে এমন গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের বিস্তার এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে যার ফলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় ৬৭ জন মানুষকে। ওই সময় পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ছড়িয়ে পড়া গুজবের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে বলা হয়। এরপর গুজবের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চলতি বছরের ৯ জুলাই পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেন। তিনি চিঠিতে লেখেন, পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটি একটি গুজব। এর কোন সত্যতা নেই। এমন অপপ্রচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। বিষয়টি গুজব হিসেবে চিহ্নিত করে সে সময় দেশবাসীকে অবহিত করতে গণমাধ্যমে প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকে অনুরোধও জানানো হয়। নকশা পরিবর্তনেও সময় বেড়েছে ॥ শুরুতে পরিকল্পনা ছিল পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। পরে তা নির্ধারণ করা হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এজন্য সেতুর নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০১৫ সালে শুরু হয় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল একতলা সড়ক সেতু হবে। পরে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে ঠিক হয়, দ্বিতল সেতু হবে। আর সেটি নির্মাণ হবে স্টিল দিয়ে। ২০১৪ সালে পদ্মায় মূল সেতু তৈরির দায়িত্ব পায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর ড্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তখন ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর কাজ উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। পরে নানা জটিলতায় তা পিছিয়ে গেল আরও কয়েক বছর। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগামী বছরের শেষে এই সেতু উদ্বোধনের বিষয়ে আশাবাদী।
×